ঠাকুরগাঁওয়ে মাল্টা চাষে সাড়া জাগিয়েছেন স্কুলশিক্ষক

বদরুল ইসলাম বিপ্লব, ঠাকুরগাঁও
 | প্রকাশিত : ১২ নভেম্বর ২০১৭, ০৮:২১

ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুরে বেলাল হোসেন মাস্টার নামে এক ব্যক্তি মাল্টা চাষ করে সাড়া জাগিয়েছেন। তার সফলতা দেখে স্থানীয় অনেক বেকার যুবক মাল্টা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে।

ঠাকুরগাঁও জেলার হরিপুর উপজেলার ভাতুরিয়া ইউনিয়নের কাঁঠালডাঙ্গী গ্রামের বেলাল হোসেন পেশায় একজন স্কুলশিক্ষক। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি সৌখিনতা হিসেবে মাল্টা চাষ শুরু করেন।

শিক্ষক জানান, ২০১৫ সালে কৃষি বিভাগের পরামর্শে বাড়ির পেছনে পরিত্যক্ত ২৫ শতক জমিতে বারি-১ জাতের মাল্টার ৭৩টি চারা রোপণ করেন। এক বছরের মাথায় একটি গাছে ফল আসে। ওই ফল খেতে মিষ্টি, সুস্বাদু ও সুগন্ধযুক্ত হওয়ায় তিনি পরের বছর বাণিজ্যিক ভিত্তিতে আরও দুই একর জমিতে মাল্টার বাগান করেন।

বেলাল হোসেন জানান, প্রথমবার রোপণকৃত ৭৩টি গাছের মধ্যে এ বছর ১৫ থেকে ২০টি গাছে আশানুরূপ ফল ধরেছে। কোনোটি গাছে ৭০টি, কোনোটিতে ৮০টি এবং কোনোটিতে ১২০টি পর্যন্ত মাল্টা ধরেছে।

শিক্ষক জানান, প্রাপ্ত ফলের মধ্যে ২০০ ফল তিনি পাঁচ হাজার টাকায় বাজারে বিক্রি করেন। অবশিষ্ট ফল নিজস্ব লোকজন ও আত্মীয়-স্বজন এবং স্থানীয় লোকজনের মাঝে বিতরণ করেন। যারা ফল খেয়েছেন তারা সবাই জানিয়েছেন তার বাগানে উৎপাদিত মাল্টা খেতে বেশ সুস্বাদু ও সুগন্ধিযুক্ত।

তার স্ত্রী সাবিনা জেসমিন রিনা ঢাকাটাইমসকে জানান, মাস্টার সাহেব যখন স্কুলে থাকেন তখন তিনি বাগান দেখাশোনা ও পরিচর্যা করেন। তিনি আরও জানান, তার সন্তানেরা বাইরে লেখাপড়া ও চাকরি করায় বাড়িটি প্রায় শূন্য। তাই যখনই তাদের সন্তানেরর জন্য খারাপ লাগে তখন তারা বাগানে গিয়ে সন্তানের শূন্যতা ভুলে যান।

তার মাল্টা বাগানের সফলতা দেখে প্রতিদিন কৃষি বিভাগের লোকজনসহ অনেকে তার বাগান পরিদর্শনে আসছেন। হরিপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নইমুল হুদা সরকার ঢাকাটাইমসকে জানান, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড়ের মাটি অম্লীয় বেলে দোআশ। এই জাতীয় মাটি মাল্টা ও কমলা চাষের উপযোগী। সাইটাস ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় হরিপুর উপজেলায় মাল্টা চাষ শুরু হয়। প্রথম বছর আটটি মাল্টার ব্লক প্রদশর্নী ও ২৮টি বসতবাড়িতে প্রদর্শনী শুরু করা হয়। এখন পর্যন্ত হরিপুর উপজেলায় ৬৫টি ব্লক প্রদর্শনী ও ৩৪৯টি বসতবাড়িতে মাল্টা প্রদর্শনী স্থাপন করা হয়েছে।

মাল্টা চাষি বেলালের সফলতা দেখে আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, আনোয়ার হোসেন এবং কাঠালডাঙ্গী মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ রিয়াজুল ইসলামসহ অনেকে মাল্টা চাষে উৎসাহী হয়ে উঠেছেন।

বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) ঠাকুরগাঁও-২ আসনের সংসদ সদস্য দবিরুল ইসলামের বড় ছেলে মাজহারুল ইসলাম সুজন মাল্টা চাষি বেলাল হোসেনের বাগান পরিদর্শন করেন। এ সময় বেলাল হোসেন তাকে বেশকিছু মাল্টা উপহার দেন।

এ সময় সুজন উপস্থিত কৃষি বিভাগের লোকজন ও স্থানীয় লোকজনকে জানান, বাজারের মাল্টা ফল বাইরে থেকে আমদানিকৃত। সেগুলো দীর্ঘদিন প্যাকেজজাত থাকে। সেখানে অরিজিনাল ফলের সুগন্ধিযুক্ত থাকে না। সেক্ষেত্রে বেলালের বাগানের মাল্টা ফল সরাসরি গাছ থেকে সংগ্রহকৃত। সেইসাথে যেহেতু বাজার মূল্য বেশি তাই বেলাল হোসেন মাল্টার বাগান করে সঠিক কাজ করেছেন বলে তিনি মনে করেন।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নইমুল হুদা সরকার ঢাকাটাইমসকে জানান, হরিপুর স্থাপিত বেশ কয়েকটি মাল্টা বাগানে এ বছর হতে ফল সংগ্রহ শুরু হয়েছে। এসব মাল্টার সাইজ প্রতিটি ৩০০ থেকে ৪০০ গ্রাম এবং খেতেও খুব সুস্বাদু। তাই বেলাল সাহেবের মাল্টার বাগান দেখে অনেকে মাল্টা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে। মাল্টার বাজার মূল্য ঠিক থাকলে এখানে মাল্টা জাতের ফল বাগান দিন দিন বাড়ছে।

(ঢাকাটাইমস/১২নভেম্বর/প্রতিনিধি/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :