এখনো মজুরি বৈষম্যের শিকার প্রান্তিক নারীশ্রমিকরা

ইমতিয়াজ উল ইসলাম, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৮ মার্চ ২০১৮, ০৮:৫১ | প্রকাশিত : ০৮ মার্চ ২০১৮, ০৮:২৮

নারীর ক্ষমতায়নে বর্তমান সরকারের নানা কার্যক্রম ইতোমধ্যে সফলতা পেয়েছে। নারীরা আজ পুরুষের সাথে তাল মিলিয়ে একই কাজ করছেন। কর্মকর্তা, কর্মচারী, শ্রমিক- সব ক্ষেত্রেই নারীদের এখন সরব পদচারণ। তবে উচ্চ শিক্ষিত নারীরা নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হলেও প্রান্তিক পর্যায়ের কর্মরত নারীরা এ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নয়। প্রতিনিয়ত তারা শিকার হচ্ছেন মজুরি বৈষ্যমসহ নানা সমস্যার। সমপরিমাণ কাজ পুরুষের সাথে পাল্লা দিয়ে করতে সক্ষম হলেও পাচ্ছেন না সমান মজুরি।

ধামরাইয়ের ভাড়াড়িয়া গ্রামের মধ্যবয়সী নারী মনি দাস উপজেলার শ্রীরামপুর এলাকার জনতা ব্রিকস নামে একটি ইটভাটায় কাজ করেন। তার সাথে কাজ করেন স্বামী হরিপদ দাস। তারা দুজনই প্রায় চার বছর ধরে ওই ইটভাটায় কাজ করছেন।

মনি দাস নামের ওই নারী শ্রমিক জানান, অল্প বয়সে বিয়ে হওয়ার পর থেকে তার জীবনসংগ্রাম শুরু হয়। সন্তানদের কষ্ট করে বড় করলেও এখন তারা যার যার মতো জীবন কাটাচ্ছেন। তাই স্বামী-স্ত্রী পেটের দায়ে কাজ করেন এই ইটভাটায়। মেশিনে বড় বড় কয়লা ভেঙে ছোট করা ও কয়লার গুঁড়ো আলাদা করা তার কাজ। আর স্বামী হরিপদ দাস তাকে ঝুড়িতে সেগুলো তুলে দেন। কাজ করতে করতে কোন সময় বেলা গড়িয়ে যায় তা বোঝা যায় না। তবে অতিরিক্ত গরমে শরীর জ্বালাপোড়া করে। এ ছাড়া ইটভাটার ধুলো ও কয়লার কালির ময়লায় মাঝেমধ্যে সর্দি, কাশি ও জ্বরে ভুগতে হয়।

তবে ইটভাটার পুরুষ শ্রমিকরা নারী শ্রমিকদের চেয়ে ১০০ থেকে ২০০ টাকা বেশি মজুরি পেয়ে থাকেন। তার স্বামী ও তিনি দৈনিক একই সময় কাজ করলেও তিনি পান ২৫০ টাকা। আর তার স্বামীকে দেওয়া হয় ৩৫০ টাকা। অথচ তার স্বামীর চেয়ে তার পরিশ্রম বেশি। কিন্তু পুরুষদের চেয়ে নারীরা কম পরিশ্রম করে এই অজুহাতে তাদের মজুরি কম দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

শত কষ্ট হলেও এখন অনেক ভালো লাগে একটা কারণে- আগে কোথাও তার মত নারীদের কাজ দেওয়া হতো না। অথচ এখন তারা স্বামী-স্ত্রী একসাথে টাকা উপার্জন শেষে দুজন বাড়ি ফিরতে পারছেন।

এ ব্যাপারে জনতা ব্রিকসের ম্যানেজার সুধির চন্দ্র সরকার বলেন, পুরুষদের পরিশ্রম নারীদের তুলনায় অনেক বেশি। তাই মজুরিও তারা বেশি পায়।

মনি দাসের মতো প্রান্তিক পর্যায়ের প্রায় অর্ধশত নারীর দেখা মেলে সাভারের আমিনবাজার ল্যান্ডিং স্টেশন এলাকায় বড় বড় ট্রলার থেকে পাথর ও কয়লা নামানোর কাজ করতে। প্রচ- রোদ উপেক্ষা করে এসব নারীরা সেখানকার পুরুষ শ্রমিকদের সাথে পাল্লা দিয়ে মাথায় পাথর ও কয়লা বোঝাই ঝুড়ি টানছেন দিনভর।

ল্যান্ডিং স্টেশনের নারী শ্রমিক দিনাজপুরের আমেনা, বগুড়ার জোছনা, মিঠাপুকুরের হাজরা ও আছমাসহ অনেকেই জানায়, এখানে তারা অনেক নারী শ্রমিক এক সাথে কাজ করেন। তবে প্রথম অবস্থায় যখন তারা এখানে কাজে এসেছিলেন তখন অন্য পুরুষ শ্রমিকরা তাদের সাথে বিদ্রুপ করত। কিন্তু এখন আর তেমনটা হয় না। পুরুষ শ্রমিকরাও এখন তাদের সাথে সমান তালে কাজ করে। তবে সারাদিন পুরুষ শ্রমিকরা যে কাজ করেন তারাও ঠিক একই কাজ করেন। কিন্তু তারপরও মহাজনরা তাদের মজুরি দেয় ২৫০ টাকা। আর পুরুষদের ক্ষেত্রে তা ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্তও হয়।

তবে নারী ও পুরুষের মজুরি বৈষ্যমের ব্যাপারে কোনো কথা বলতে রাজি হয়নি ল্যান্ডিং স্টেশনের মহাজনরা।

উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা খালেদা আক্তার জাহান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘সম্মিলিতভাবে নারীর অধিকার আদায়ে উপজেলা থেকে বিভিন্ন দিবসে উঠান বৈঠকসহ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। সেখানে নারীদের ন্যায্য অধিকার সম্পর্কে সচেতন করাই আমাদের মূল লক্ষ। তবে মজুরি বৈষম্যের শিকার হন তারাই যারা দিনমজুর হিসেবে দূর থেকে এই এলাকায় কাজের জন্য আসেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দরিদ্রতার সুযোগ নিয়েই তাদের তুলনামূলক কম মজুরিতে কাজ করায় কিছু প্রতিষ্ঠানের অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।’

খালেদা আক্তার জাহান আরও বলেন, ‘তবে এত সংখ্যক দিনমজুর নারী কোথায় মজুরি বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন তা আমাদের পক্ষে খুঁজে বের করা সম্ভব নয়। তবে যে সব নারী এই বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন তারা যদি আমাদের কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ করেন তাহলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারব।’

(ঢাকাটাইমস/৮মার্চ/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :