ভাঁড়ের বেশে ‘ঘটি গরম’ চানাচুর বিক্রি

মনোনেশ দাস, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর ২০১৬, ১১:০৫ | প্রকাশিত : ১৩ ডিসেম্বর ২০১৬, ১০:৩০

গায়ের পোশাকটি সার্কাসের ভাঁড় বা সঙ এর মতো মতো। সার্কাসে কৌতুক করে হাস্যরসের মাধ্যমে দর্শকদের আনন্দ দেন ভাঁড়রা। কিন্তু এই ভাড়ের উদ্দেশ্য অন্য, মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ। চানাচুর বিক্রেতার তারা। মানুষের দৃষ্টি আকৃষ্ট হলে ক্রেতা পাওয়া যায় ভালো, তাই এই বেশ ধারণ।

ময়মনসিংহে শীত এলে দেখা মেলে এই ‘ভাঁড়’দের। তারা যে চানাচুর বিক্রি করেন, তা ‘ঘটি গরম’ নামে পরিচিত। চানাচুরের মাঝে একটি ঘটিতে কাঠ কয়লা বা তুষের আগুন জ্বালানো থাকে। তাই এর পাশের চানাচুর থাকে গরম। শীতের সন্ধ্যায় হালকা গরম চানাচুর খাওয়ার মজা যিনি খেয়েছেন, জানবেন কেবল তিনি।

ময়মনসিংহ শহরের বিভিন্ন এলাকায় সন্ধ্যা নামতেই দেখা মেলে ভাঁড় বেশধানী ‘ঘটি গরম’ চানাচুর বিক্রেতাদের। ঝুনঝুনি আর উচ্চস্বরে হাঁক দিয়ে চানাচুর কেনার আহ্বান জানান তারা। পেঁয়াজ-মরিচে মাখা চানাচুরের চাইতে এর স্বাদ মোটেও কম নয় জানান ক্রেতারা । এই চানাচুর বিক্রেতাদের পোশাকে নানা ধরণ আছে। মুখে পাউডার, ঠোঁটে লিপস্টিক লাগিয়ে বের হন তারা। হলুদ আর লাল রঙএর পোশাকটাও কিম্ভুত কিমাকার। সেই সঙ্গে চানাচুর খেতে আহ্বান জানানো বক্তব্যটাও আকর্ষণীয়। একটু টান দিয়ে হালকা সুরেলা ডাক উপেক্ষা করা কঠিন।

ঘটি গরম চানাচুর বিক্রেতা ইদ্রিস মিয়া ঢাকাটাইমসকে জানান, তার বাপ দাদাও এই ঘটি গরম চানাচুর বিক্রি করেছেন। তিনি বলেন, ‘মাইনষে আমরার মুহের দিকে চায়। এর লাইগ্যা মেকআপ করি। ঝুনঝুনির শব্দ হুনলেই মাইনছে দৌড়ায়া আয়। হাইঞ্জারতে (সন্ধ্যা) রাইত ফর্যন্ত বেচি।’

এই বিক্রেতা জানান, এই চানাচুরগুলো বাজারে কিনতে পাওয়া যায় না। ডাল দিয়ে নিজেরাই তৈরি করেন। একেক দিন বিক্রি হয় দেড় থেকে দুই হাজার টাকা। খরচ বাদে পাঁচ থেকে ছয়শ টাকা পর্যন্ত লাভ হয়।

ভোজন রসিক বাঙালির চানাচুর বস্তুটি বড় সমঝদার। হাটে-বাজারে বিভিন্ন গোত্র বর্ণের চানাচুর দেখা মেলে। চায়ের সঙ্গে, মুড়ির সঙ্গে, এমনকি নিঃসঙ্গেও এর মজা জাস্ট আনপ্যারালাল! শহর কিংবা গ্রাম সর্বত্রই একটি বিশিষ্ট বাঙালি চানাচুর ব্র্যান্ড! প্রত্যেকটির স্বাদ অন্যটির চেয়ে আলাদা, গোত্রে অভিন্ন।

কুটিরশিল্পের কদর থাকলেও চানাচুর অবহেলিত, অসংগঠিত একটি ক্ষেত্র। অনেকেই আছেন যাদের কর্মজীবন শুরু এই চানাচুর বিক্রি করে। পরে তারা আরও কুলীনতর ব্যবসার সন্ধান পেয়ে চানাচুরের ঠোঙাটি দূরে সরিয়ে রাখেন।

তবে শুধু চানাচুর বেচে আইকন হয়ে উঠেছেন, এমন উজ্বল দৃষ্টান্ত অঞ্চলভেদে দেখা যায়। শপিংমল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সিনেমা হল, মিটিং এর আসরে দেখা মেলে খোলা চানাচুর বিক্রেতাদের।

দোকানে বিক্রি হয় ব্র্যান্ডের চানাচুর। উজ্জ্বলার বা ভ্রাম্যমাণ হকারদের চানাচুর ক্রেতারা লাইন দিয়ে কেনেন। চানাচুর বহুরূপে হৃদিবিরাজে এই সুস্বাদু আহার। অনেক ব্র্যান্ডের চানাচুর আছে যা ঘরে ঘরে আদৃত। ময়মনসিংহে চানাচুরের রমরমা।

একদা অফিস ফেরত বাঙালির প্রিয় স্ন্যাকস ছিল এই চানাচুর। সারা দিনের বিস্বাদ ভুলে মুখে স্বাদ আনত এই মুখরোচক বস্তুটি। বড় বাটিতে মুড়ি, পেঁয়াজ ও কাঁচামরিচ সহযোগে সে টিফিনের চল এখনকার যুগে আর তেমন চলে না। তারপরও হারিয়ে বা হেরে যায়নি খাবারটি।

ঢাকাটাইমস/১৩ডিসেম্বর/প্রতিনিধি/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :