ভাই সুজন কিছু মনে করো না

রাজু নুরুল
  প্রকাশিত : ১০ নভেম্বর ২০১৭, ১১:৩৯| আপডেট : ১০ নভেম্বর ২০১৭, ১৫:২৪
অ- অ+

এই ছবি দেখে আপনার কি মনে হচ্ছে? অনেস্টলি বলেন। আগে বলেন, তারপর নিচের লেখাটা পড়েন। তার আগে, আমার কি মনে হচ্ছে সেটা বলি-

একজন অসুস্থ রোগী হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আছে। তার পায়ে যেহেতু প্লাস্টার দেখা যাচ্ছে, তার মানে তিনি গুরুতর অসুস্থ। তার খোঁজখবর নেয়ার জন্য দুজন মানুষ হাসাপাতালে গিয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন আবার খুবই বিখ্যাত। মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান। খুবই মানবিক একটা ছবি!

আপনারও কি তাই মনে হচ্ছে? যদি তাই মনে হয়ে থাকে, তাহলে আপনি ভুল। ঘটনা সেরকম না।

পায়ে প্লাস্টার নিয়ে হাসপাতালে শুয়ে থাকা ছেলেটার নাম সুজন শেখ। সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র। বেচারা ফুটবল খেলতে গিয়ে পা ভেঙ্গে ফেলেছে। এই ভাঙ্গা পা নিয়েই সে তার ফাইনাল পরীক্ষা দিয়েছে। লিখিত পরীক্ষা।

সে চিঠি লিখে আবেদন করেছিল তার ‘ভাইভা’ যেন হাসপাতালে গিয়ে নেয়া হয়। বিভাগ কিন্তু রাজি হয় নাই। তারা এই ছেলেকে এই পা নিয়ে, স্ট্রেচারে শুয়ে, বিভাগে আসতে বাধ্য করেছে ভাইভা দেয়ার জন্য। তার বিভাগেরই এক শিক্ষক মন্তব্য করেছেন, তারা নাকি জানতেনই না যে, সুজন শেখের অবস্থা এতটা খারাপ। কি ভয়ানক কথা। একজন ছাত্র এরকম অবস্থায় হাসপাতালে শুয়ে আছে, সেটা তাদের শিক্ষকরা জানেন না? তাহলে কখন জানবেন? মৃত্যুবরণ করলে? আজকাল তাহলে শিক্ষকের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের যোগাযোগ এই অবস্থায় গিয়ে ঠেকেছে?

অসুস্থতার কারণে, দলীয় রাজনীতির কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের হলে গিয়ে, জেলখানায় গিয়ে অথবা হাসপাতালে গিয়ে পরীক্ষা নেয়া অহরহ ঘটনা। কিন্তু সুজন শেখের ক্ষেত্রে এটা কেন হলো না?

কারণটা সম্ভবত: আমাদের জানা। সুজন শেখ খুব নিরীহ গোছের ছাত্র। পড়ালেখার পাশাপাশি বিভাগের জন্য ফুটবল খেলে। কিন্তু বেচারা জানে না, ফুটবল খেললে, নিরীহ ছাত্র হলে হাসপাতালে শুয়ে পরীক্ষা দেয়া যায় না। সেই সুবিধা পেতে হলে যে কোন রাজনৈতিক দলের ছাত্রনেতা হতে হয়, ক্ষমতা থাকতে হয়।

কয়েক দিন আগে পত্রিকার প্রথম পাতার খবরে দেখেছিলাম, গ্রেপ্তার হওয়ার পর, বিগত কয়েক বছরেও কয়েকজন বড় বড় নেতা কখনোই জেলখানায় থাকেননি। তারা হাসপাতালে আশ্রয় নিয়েছেন। তাদেরকে সহায়তা করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, জেল কর্তৃপক্ষ! ভাই সুজন, কিছু মনে করো না। মানবাধিকার সাধারণ পাবলিকের জন্য না। বহুদিন হয়ে গেল, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও আর এসব শেখায় না। তবে এইভাবে ভাঙ্গা পা নিয়া, স্ট্রেচারে শুয়ে ভাইভা বোর্ডে এসে তুমি কিন্তু আমাদেরকে একটা কষে চড় দিয়েছ! স্যালুট, তোমাকে!

লেখক: উন্নয়নকর্মী

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে কেন এত দীর্ঘ হাততালি?
দুপুরের মধ্যে দেশের ১৬ অঞ্চলে ঝড়ের আভাস, নদীবন্দরে সতর্কতা 
বিশ্বের সবচেয়ে ধনী রাজা রামা এক্স, বিলাসিতার ঝলক দেখলে চমকে উঠবেন
সংসারে অভাব-অনটন, স্বামী-স্ত্রীর আত্মহত্যা 
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা