‘ইজ্জতের মূল্য’ ৪৫ আর মাতব্বরদের ৫৫ হাজার!

আজহারুল হক, ময়মনসিংহ
  প্রকাশিত : ১৭ জুলাই ২০১৮, ০৮:৫৪
অ- অ+
প্রতীকী ছবি

ময়মনসিংহের নান্দাইলে ধর্ষণের অভিযোগে এক যুবককে লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সেই জরিমানার টাকা থেকে শালিসকারী মাতব্বররা ৫৫ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর ধর্ষিতার পরিবারকে দেয়া হয়েছে মাত্র ৪৫ হাজার টাকা।

ধর্ষিতার গর্ভপাত ঘটানোর সিদ্ধান্ত হওয়ায় এক লাখ টাকা জরিমানার রায় দেন মাতব্বররা। গত রবিবার গভীর রাতে ও গতকাল সোমবার দুই দফা সালিশি বৈঠকে এই রায় দেন দুই ইউপি মেম্বারসহ মাতব্বররা। পরে মেয়েটিকে গফরগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কাছে একটি প্যাথলজি সেন্টারে নিয়ে গর্ভপাত করানো হয় বলে জানা গেছে।

অভিযোগ উঠেছে, জরিমানার এক লাখ টাকা থেকে ৫৫ হাজার টাকা ভাগাভাগি করে নিয়ে যান দুই মেম্বারসহ মাতব্বররা। যদিও তারা এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

স্থানীয়রা জানান, উপজেলার খারুয়া ইউনিয়নের হালিউড়া গ্রামের এক কিশোরীকে বিয়ের কথা বলে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে একই গ্রামের আবুল কালামের ছেলে মো. জুনায়েদ আহম্মেদ (১৮)। প্রেমের সম্পর্কের কারণে প্রায়ই রাতের অন্ধকারে ওই মেয়েটির বাড়িতে আসা-যাওয়া করত জুনায়েদ। এ অবস্থায় মেয়েটি তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। বিষয়টি নিয়ে রবিবার রাতে সালিশি বৈঠক হলেও তাতে কোনো সুরাহা হয়নি।

পরে সোমবার সকালে আবার এলাকায় সালিশের আয়োজন করেন স্থানীয় ইউপি সদস্য আফির উদ্দিন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন একই ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুছ ছাত্তার, সাবেক সদস্য ফরিদ উদ্দিন, মিলন মিয়া ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা হাসিম উদ্দিনসহ ১০-১২ জন।

উপস্থিত অনেকেই জানান, সালিসে সিদ্ধান্ত হয় অন্তঃসত্ত্বাকে তার পরিবারের জিম্মায় রেখে গর্ভপাত ঘটানো এবং ছেলেপক্ষকে মেয়ের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে এক লাখ টাকা নগদ দিতে হবে। পরে সোমবার দুপুরের পর ছেলেপক্ষের লোকজন এক লাখ টাকা পরিশোধ করলে অভিযুক্ত প্রেমিক জুনায়েদকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে মেয়েটিকে গফরগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কাছে একটি প্যাথলজি সেন্টারে নিয়ে গর্ভপাত করানো হয় বলে জানা গেছে।

তবে অন্তঃসত্ত্বা পরিবার জানায়, গত রবিবার রাত ১২টার দিকে জুনায়েদ মেয়েটির বসতঘরে অবস্থানের বিষয়টি টের পেয়ে পরিবারের লোকজন ‘আজই বিয়ে করতে হবে’ বলে অভিযুক্ত জুনায়েদকে প্রস্তাব দেন। এতে জুনায়েদ রাজি না হয়ে সটকে পড়ার চেষ্টা করলে পরিবারের লোকজন তাকে ঘরের ভেতর বেঁধে রেখে এলাকার লোকজনকে খবর দেন। রাতে এ নিয়ে এক সালিশের আয়োজন করা হয়। সালিশে মেয়েকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গত প্রায় চার মাস ধরে জুনায়েদ তাকে ধর্ষণ করছে। মেয়ের জবানবন্দি অনুসারে সালিশে বিয়ের সিদ্ধান্ত হয়।

অভিযুক্ত যুবক জুনায়েদের বাবা আবুল কালাম জানান, তার ছেলেকে রাতভর বেঁধে রেখে মারধর করে মেয়ের পক্ষের লোকজন। পরে কীভাবে কী করেছে তা তিনি জানেন না। তবে টাকার বিনিময়ে ছাড়া হয়েছে, তা জানতে পেরেছেন বলে জানান।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সালিশের এক লাখ টাকার মধ্যে ৪৫ হাজার টাকা মেয়ের বাবাকে দিলেও ৫৫ হাজার টাকা ভাগবাটোয়ারা হয়েছে। এ ঘটনা নিয়ে এলাকায় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।

এ বিষয়ে সালিশে নেতৃত্ব দানকারী ইউপি সদস্য আফির উদ্দিন ঢাকাটাইমসকে জানান, তিনি সালিশের আয়োজন করেননি। দুই পক্ষের অনুরোধে কয়েকজন মিলে সমাঝোতা করে দিয়েছেন। কীভাবে সমাঝোতা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শুনেছি ৩৫-৪০ হাজার টাকা মেয়েপক্ষকে দিতে হবে। এর চেয়ে বেশি কিছু তিনি আর জানেন না।

আরেক সালিশকারী মেম্বার মিলন বলেন, ‘আমি রাতের সালিশে ছিলাম। সেখানে আমি বিয়ের কথা বললে ছেলেপক্ষ রাজি না হওয়ায় চলে এসেছিলাম। পরের অবস্থা আমার জানা নেই।’

(ঢাকাটাইমস/১৭জুলাই/প্রতিনিধি/জেবি)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
সাংবাদিকদের মিলনমেলায় রঙিন ছিল ডিএসইসির ফ্যামিলি ডে
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কিছুই চাপিয়ে দিচ্ছে না: আলী রীয়াজ
পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎসংযোগ নিশ্চিতে একসঙ্গে কাজ করবে ইডটকো বাংলাদেশ ও টাইগার নিউ এনার্জি
টাঙ্গাইলে বাস-অটোরিকশার সংঘর্ষে নিহত ৩
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা