ডাকসু নির্বাচন ঘিরে দানা বাঁধছে আন্দোলন

এন এইচ সাজ্জাদ
 | প্রকাশিত : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৮:৪৭

ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র নিয়ে বিরোধ মিটছে না। দিন যত যাচ্ছে এই আন্দোলনের কলেবর বাড়ছে। যুক্ত হচ্ছে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন।

আন্দোলনকারীরা বলছেন, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়ার ক্ষেত্রে ভোটকেন্দ্র প্রধান অন্তরায়। হলগুলোতে ভোটের কেন্দ্র স্থাপনের যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা ঠিক হয়নি। তারা দাবি তুলেছেন ভোটকেন্দ্র হল থেকে বের করে আনতে হবে। বিকল্প হিসেবে একাডেমিক ভবনের প্রস্তাব করেছেন তারা।

তবে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের এই দাবিকে ‘নির্বাচন বানচালের চক্রান্ত’ হিসেবে দেখছে সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ নেতৃত্বাধীন মোর্চা ‘ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ’।

এই অবস্থায় ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠানে ফের অনিশ্চয়তার তৈরির আভাস পাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। ছাত্ররা বলছেন, ভোটকেন্দ্র নিয়ে যে জটিলতার তৈরি হচ্ছে, এটি দ্রুত কাটিয়ে উঠতে না পারলে আলোর মুখ দেখবে না ছাত্র সংসদ নির্বাচন।

ডাকসু নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র হল থেকে সরিয়ে নেওয়ার দাবিতে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের জোট আন্দোলন করে যাচ্ছে। গতকালও তারা এই দাবিতে কর্মসূচি পালন করেছে। এই দাবিতে আন্দোলনে নামার চিন্তা করছে কোটাসংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে জড়িতরা। তবে ছাত্রদল এখনো আন্দোলনের কথা কিছু বলছে না। সংগঠনের নেতারা বলছেন, কয়েক দিনের মধ্যে তারা বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের দাবি তুলে ধরবেন।

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণার পর ছাত্র নেতৃত্ব তৈরির অচলাবস্থা দূর হচ্ছে বলে ধরে নেওয়া হয়েছি। এরই মধ্যে ভোটার ও প্রার্থীদের বয়স সর্বোচ্চ কত হবে এবং নির্বাচনী আচরণ বিধি প্রণয়নের কাজ শেষে করেছে বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। অপেক্ষা শুধু তফসিল ঘোষণার।

কিন্তু গত ২৯ জানুয়ারি বিশ^বিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় হলের ভেতর ভোটকেন্দ্র করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর বিতর্ক তৈরি হয়। এখন পর্যন্ত সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠনের নেতৃত্বাধীন মোর্চা ছাড়া বাকিরা এর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ছাত্রদল ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় শাখার সভাপতি মাহদী তালুকদার ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘নির্বাচনের যাবতীয় বিষয় নিয়ে আমরা এখনও আলোচনা করছি। আশা করি, আগামী ৫ কিংবা ৬ ফেব্রুয়ারি বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আমাদের দাবিগুলো তুলে ধরব। তারা যদি আমাদের আশ^স্ত করতে না পারে, তবে পরবর্তী কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব।’

প্রগতিশীল ছাত্রজোটের নেতারা মনে করেন, হলে কেন্দ্র হলে ভোট হবে ‘একতরফা’। এতে সাধারণ ছাত্ররা তাদের রায় সুষ্ঠুভাবে দিতে পারবে না। এই আশঙ্কার কথা জানিয়ে গতকাল তারা ঢাবির উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামানের কাছে লিখিতভাবে পাঁচ দফা দাবি দিয়েছে।

রবিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কেন্দ্রীয় প্রগতিশীল ছাত্রজোট বিশ^বিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন থেকে মিছিল বের করে। পরে তারা উপাচার্য কার্যালয়ের মূল ফটকে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে গণমাধ্যমের সামনে নিজেদের দাবি তুলে ধরেন জোটের সমন্বয়ক ও বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সহ-সভাপতি সাদেকুল ইসলাম সোহেল।

তাদের দাবিগুলো হচ্ছে ক্যাম্পাস ও হলে সব ছাত্রসংগঠনের সহাবস্থান ও স্বাধীন মত ব্যক্ত করার পরিবেশ নিশ্চিত করা। গণকক্ষ ও অতিথিকক্ষ বাতিল করে প্রথম বর্ষ থেকেই মেধা ও প্রয়োজনের ভিত্তিতে আবাসন বণ্টন করা।

তফসিলের আগেই ডাকসু ও হল সংসদের ফি জমা দেওয়া সব শিক্ষার্থীর ভোটার ও প্রার্থী হওয়ার অধিকার নিশ্চিত করা। শ্রেণিকক্ষে নির্বাচনী প্রচার এবং নির্বাচনী প্রচারে জাতীয় নেতাদের অংশ নেওয়ার ওপর যে নিষেধাজ্ঞা আছে তা তুলে নেওয়া।

গত শুক্রবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ডাকসু নির্বাচন নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন তার প্রতিবাদও জানিয়েছেন ছাত্ররা। তারা অভিযোগ করেছেন, ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসনকে আঘাত করেছে। ঢাবি উপাচার্যকেও এই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানানোর আহ্বান জানান তারা।

এদিকে হল থেকে কেন্দ্র সরিয়ে নেওয়ার দাবিতে আন্দোলনে নামার চিন্তা করছে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী ছাত্রদের প্লাটফর্ম ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’।

জানতে চাইলে পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক ফারুক হাসান বলেন, ‘প্রশাসন ছাত্রলীগের দাবি মেনে নিয়ে হলে ভোটকেন্দ্র করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা এই হটকারী সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানাই। এই দাবিতে যারা আন্দোলন করছেন, তাদের সঙ্গে আলোচনা করে কর্মসূচির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

তবে হল থেকে কেন্দ্র সরিয়ে নেওয়ার আন্দোলনের মধ্যে ডাকসু নির্বাচন ‘বানচালের’ চক্রান্ত দেখছে ছাত্রলীগ। তাদের নেতৃত্বাধীন মোর্চা ‘ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ’ এক বিবৃতিতে তারা দাবি করেন, ‘বিশ^বিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থীর প্রায় ৬৫ ভাগ হলে থাকে। বিশ^বিদ্যালয়ের সব একাডেমিক, প্রশাসনিক এবং সহপাঠ্য কার্যক্রম হলকেন্দ্রিক।’

‘হল সংসদের কার্যক্রমও হলের আবাসিক বৈশিষ্ট্যকে ঘিরেই। হলের আবাসিকতা-অনাবাসিকতা প্রশাসনিকভাবেই নির্ধারিত হয়। গণমাধ্যমের অবাধ কার্যক্রমের জন্য এই ক্যাম্পাস বিরতিহীনভাবেই সবার জন্য উন্মুক্ত।’

ভোটকেন্দ্র নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে কোনো বিভ্রান্তি আছে বলে তারা মনে করে না।

এ ব্যাপারে ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমরা চাই সবার অংশগ্রহণে সুষ্ঠু নির্বাচন হোক। এখন যদি কেউ নির্বাচনে না আসে আমাদের কী করার আছে?’

‘বিশ^বিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী এক হয়ে নির্বাচন বানচালের জন্য এই রকম উদ্ভট দাবি করছে। আসলে এর কোন ভিত্তি নেই।’

ছাত্রসংগঠনগুলোর পাল্টাপাল্টি অবস্থানের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘সিন্ডিকেট সভায় ছাত্রদের দাবি মেনে নিয়েই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাদের কোন অভিযোগ থাকার কথা না। আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দেয়ার জন্যই কাজ করে যাচ্ছি। এ ব্যাপারে সকলের সহযোগিতা চাই।’

ডাকসু নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা হবে ৪০ হাজারের কাছাকাছি। এর মধ্যে ৬০ শতাংশ আবাসিক। অনাবাসিক ৪০ ভাগ। সে হিসাবে আবাসিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ২৪ হাজার।

সংবাদটি শেয়ার করুন

শিক্ষা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিক্ষা এর সর্বশেষ

এসএসসি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার যে সুযোগ দিচ্ছে মালয়েশিয়া

বাহরাইনে এসএসসি পরীক্ষার ফল পেয়ে উচ্ছ্বসিত বাংলাদেশ স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা

মাধ্যমিকে বেড়েছে পাসের হার, কমেছে জিপিএ ফাইভ

আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় হ্যাকাথনে চ্যাম্পিয়ন শাবিপ্রবি

ঈদের পর থেকে শনিবারও বন্ধ রাখা হতে পারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

মাদরাসা বোর্ডে জিপিএ-ফাইভ বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি

ক্যাম্পাস চালুর দাবি, কুবিতে প্রতীকী ক্লাস

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় আর্থিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের নির্দেশ উপাচার্যের

কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার কমেছে ৪ শতাংশ

গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় ‘সি’ ইউনিটের ফল প্রকাশ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :