এক সপ্তাহে উধাও কলম্বিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম নদী!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৯:৪৩| আপডেট : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৬:১৩
অ- অ+

মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে উধাও হয়ে গেছে এক হাজার ৩৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ কলম্বিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম নদী কাউকা। আন্দেজ পর্বতমালা থেকে উৎপন্ন হওয়া এই নদী ক্যারিবীয় সাগর এবং ম্যাগডালেনা নদীর গিয়ে মিলিত হয়েছিল।

এই নদীর তীরে প্রায় এক কোটি মানুষের বাস। এটি কলম্বিয়ার মোট জনসংখ্যার এক পঞ্চমাংশ। এই দীর্ঘ যাত্রাপথে কাউকা নদীর ওপর রয়েছে অনেক হাইড্রোইলেকট্রিক বাঁধ। নদীর দুই তীরে গড়ে উঠেছে অনেক শিল্প-কারখানা। লাখ লাখ কৃষক আর মৎস্যজীবীর জীবন চলে এই নদীর ওপর নির্ভর করে।

গত বছরের মে মাসে ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়েছিল কলম্বিয়ায়। নদীর একটা জায়গায় একটা বিরাট বাঁধ দেয়া হচ্ছিল। এই বাঁধ নির্মাণের সময় সেখানে একটা বড় ত্রুটি দেখা দিল। সেটির কারণে ভাটিতে হঠাৎ বন্যা হয়। সেই বন্যায় বহু গ্রাম প্লাবিত হয়। এবং হাজার হাজার মানুষ তাদের ঘর বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়।

এরপরই নাটকীয় ঘটনা ঘটেছে। বিশাল এই নদীর পানি ভয়ানকভাবে কমে গিয়েছে। গত বছরের ডিসেম্বর থেকে এ বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যে কাউকা নদীর পানি এতটাই শুকিয়ে গিয়েছে যে, স্থানীয় হাইড্রোলজিস্টরা বলছেন, তারা এই নদীর পানি মাপতে পারছেন না।

যেভাবে ঘটেছে এই ঘটনা

কলম্বিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে পুয়ের্তো ভালডিভিয়া এবং ইটুয়াংগো শহরের কাছে তৈরি হচ্ছে হাইড্রো-ইলেকট্রিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। সেটির জন্য কাউকা নদীতে বাঁধ দেয়া হচ্ছে। কাউকা নদীর পানি ভিন্নখাতে নেয়ার জন্য শুরুতে তিনটি টানেল তৈরি করা হয়।

কিন্তু গত বছরের মে মাসের শুরু থেকে সেখানে সমস্যা দেখা দেয়। ৭ মে সেখানে পানি ভিন্ন খাতে নেয়ার জন্য তৈরি টানেলের কাছে একটি বিরাট খাদ তৈরি হয়। একই সঙ্গে ভূমিধস শুরু হয়। ফলে টানেলগুলোর মুখ বন্ধ হয়ে যায়। প্রকৌশলীরা অনেক চেষ্টা করেও কিছু করতে পারেননি।

পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর বাঁধের অপর পাশে পানির চাপ বাড়তে থাকে। এই চাপ কমানোর কোন উপায় তখন ছিল না। ফলে পুরো জলাধার পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। দশদিন পর প্রচণ্ড পানির চাপে একটি টানেলের মুখ আবার খুলে যায়। এরপর এতটাই তীব্র বেগে ওই টানেল দিয়ে পানি ছুটতে থাকে যে, তা ভাটিতে ব্যাপক বন্যা তৈরি করে। ২৫ হাজার মানুষকে তখন জরুরি ভিত্তিতে তাদের বাড়িঘর থেকে সরিয়ে নিতে হয়।

কিন্তু এরপর হিড্রোইটুয়াংগো বাঁধের সমস্যা আরও জটিল রূপ নেয়। পরবর্তী সপ্তাহগুলোতে প্রচন্ড বৃষ্টি হয়। এতে বাঁধের উপরের দিকে অনেক পলি জমে। ফলে নদীর তলদেশ উঁচু হয়ে বাঁধের উপর দিয়ে পানি উপচে পড়ে। এ কারণে পুরো বাঁধটি দুর্বল হয়ে যায়। প্রকৌশলীরা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, পুরো বাঁধটি এখন ধসে পড়তে পারে। এতে ক্ষতি হতে পারে লক্ষাধিক মানুষের।

এরপরই বাঁধের ধস ঠেকানোকে অগ্রাধিকার দেয় হয়। যেহেতু টানেলগুলোর মুখ বন্ধ হয়ে গেছে ভূমিধসে, তাই নদীর পানি ছাড়ার উপায় একটাই। তা হলো জলাধারের উচ্চতায় পানি পৌঁছানোর পর কিছু ফ্লাডগেট তৈরি করে সেখান দিয়ে এই পানি বের করা।

এটি বাস্তবায়ন করার পর শুকনো মৌসুমে তখন পানির উচ্চতা নেমে গেল অনেক নীচে। ফলে নদীর অপরপাশে পানি যাওয়ার কোনো উপায় ছিল না। পানি কমতে থাকায় এ বছরের ১৬ জানুয়ারি অপরপাশে অবমুক্ত করার পানির পরিমাণ নেমে আসে প্রতি সেকেন্ডে মাত্র ৩৯৫ কিউবিক মিটারে। আর ৫ ফেব্রুয়ারি একদম বন্ধ হয়ে যায় পানির স্রোত। এর ফলে কয়েক ঘন্টার মধ্যে অদৃশ্য হয়ে যায় বিশাল এই নদী। পুয়ের্তো ভারডিভিয়া শহরের কর্মকর্তারা ৪ ফেব্রুয়ারি নদীতে পানির গভীরতা পেয়েছিলেন ১ দশমিক ৯৬ মিটার। ৫ ফেব্রুয়ারি তা কমে দাঁড়ায় ৪২ সেন্টিমিটারে।

যেখানে একসময় ছিল এক প্রমত্তা নদী, সেখানে এখন কেবল পাথর আর কাদা। হাজার হাজার মাছ পানির অভাবে ছটফট করছে। স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকরা সেসব মাছ ধরে অন্যত্র ছেড়ে তাদের প্রাণে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। নদীর পানি পরিমাপের কাজ করেন যে প্রকৌশলীরা, তারা বলছেন, পানির স্রোত এখন এতটাই ক্ষীণ যে, তাদের যন্ত্রে আর সেটি মাপা যায় না। তাদের যন্ত্রের রিডিং হচ্ছে- শূন্য।

আর নদীর ভাটিতে এতদিন যারা বন্যার আশঙ্কার মধ্যে ছিলেন, এবার তারা খরায় আক্রান্ত। তাদের জমিতে সেচ দেয়ার পানি নেই। কতদিন এই অবস্থা চলবে, কবে আবার নদী তার স্রোত ফিরে পাবে সেটি কেউ বলতে পারছেন না। সূত্র: বিবিসি

ঢাকা টাইমস/১১ফেব্রুয়ারি/একে

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
টয়োটার ব্যবসা হারাচ্ছে নাভানা?
সারজিস বনাম নওশাদ: ভোটে কার পাল্লা ভারি?
মনোহরদীতে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে ছাত্রদল নেতা গণধোলাইয়ের শিকার
গণভবন জয় করেছি, এবার জাতীয় সংসদও জয় করব: নাহিদ
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা