আপনার খাদ্য তালিকার পরিবর্তনে বাঁচবে বিশ্ব

ঢাকা টাইমস ডেস্ক
 | প্রকাশিত : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৮:৪৯

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় বলা হয়েছে যে বিশ্বে যে পরিমাণ গ্রিন হাউজ গ্যাস নির্গমন হয় তার এক চতুর্থাংশের জন্য দায়ী খাদ্য উৎপাদন। অর্থাৎ বৈশ্বিক উষ্ণায়নের পেছনে এই খাদ্য উৎপাদন অন্যতম প্রধান কারণ। তবে, গবেষকরা দেখেছেন যে একেক ধরণের খাবারের পরিবেশগত প্রভাব একেক রকম।

পরিবেশ সচেতন অনেকেই এখন প্লাস্টিকের ব্যাগ এবং প্লাস্টিকের স্ট্র ব্যবহার বাদ দিয়েছেন। চেষ্টা করছেন যতোটা সম্ভব নিজের ব্যবহার্য জিনিষগুলো পুনর্ব্যবহার করার, যেন উষ্ণতা কয়েক ডিগ্রি কমানো যায়।

তবে আপনি কি ভেবে দেখেছেন আপনার সাপ্তাহিক বাজার এই বিশ্বের পরিবর্তনে কতটা ভূমিকা রাখতে পারে? এ বিষয়ে একটি বিস্তারিত তথ্যচিত্র প্রচার করেছে বিবিসি। সেখানে তারা এটা খোঁজার চেষ্টা করেছে যে আমাদের প্রাত্যহিক বাজারে ছোটখাটো কোন পরিবর্তনগুলো কিভাবে আমাদের গ্রহের ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।

ল্যানক্যাস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাই বার্নার্স লি গিয়েছিলেন বাজার করতে। তিনি একাধারে একজন জলবায়ু পরিবর্তন এবং টেকসই খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা বিশেষজ্ঞ। বাজার করতে গিয়ে কয়েকটি খাবারের উদাহরণ সামনে নিয়ে আসেন তিনি।

মাংস এবং মাছ

বেশিরভাগ মানুষই বাড়িতে মাছ মাংস খেয়ে থাকেন। বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোয়। ভেবে দেখুন সপ্তাহের ওই বিশেষ দিনগুলোর রাতের খাবারে গড়ে কি পরিমাণ গ্রিল মুরগি, সসেজ, নুডুলস ইত্যাদি খাওয়া হয়?

অধ্যাপক বার্নার্স-লি বলেন, গরুর মাংস বিশ্বের সর্বোচ্চ কার্বন উৎপাদনকারী মাংস। মুরগি পরিবেশের জন্য অপেক্ষাকৃত ভাল। সঙ্গে তিনি এটাও জানান, ‘উদ্ভিদজাত খাবার অর্থাৎ শাক সবজির উৎপাদনের চাইতে সব ধরনের মাংসের উৎপাদন বেশ সহজ। এতে কৃষিকাজের মতো সময় ও শ্রম দিতে হয় না।’

মাছ সম্পর্কে অধ্যাপক বার্নার্স-লি পরামর্শ দিয়েছেন মাছ খাওয়া কমিয়ে আনতে। যেমন প্রতিদিনের পরিবর্তে প্রতি সপ্তাহে এক অথবা দুই বেলায় মাছ খাওয়া সীমিত রাখা এবং প্রতিবারই বিভিন্ন ধরণের মাছ খাওয়ার চেষ্টা করা।

তবে সবচেয়ে ভাল উপায় হলো নিরামিষভোজী হয়ে যাওয়া। যদি আপনি নিরামিষাশী হওয়ার কথা ভাবতে না পারেন, তাহলে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। আপনি বাদ দিতে না পারেন, অন্তত মাংস খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে দিতে পারেন।

যদি আপনার প্রতিদিন মাংস খাওয়ার অভ্যাস থাকে তাহলে সপ্তাহে মাত্র একটি দিন বেছে নিন যেদিন আপনি কোন মাংস খাবেন না। এই ছোট পরিবর্তন পরিবেশে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে।

২০১৮ সালে প্রকাশিত গবেষণায় দেখা যায় যে, গ্রিনহাউজ গ্যাসের পরিমাণ অর্ধেকেরও বেশি হ্রাস করা হবে যদি আমরা সবাই সপ্তাহে রেড মিট খাওয়ার পরিমাণ এক বেলায় নামিয়ে আনতে পারি।

ফল এবং সবজি:

ফল এবং সবজি সবসময়ের জন্য সবচেয়ে ভাল এবং টেকসই খাবার। তবে এর কিছু ব্যতিক্রম আছে বলে মনে করেন অধ্যাপক বার্নার্স-লি।

তিনি বলেন, ‘আপনার কাছে থাকা ফল বা সবজি যে মৌসুমে ফলন হয় এটা যদি ওই সময়ের পরিবর্তে অন্য কোন মৌসুমে আপনার হাতে আসে তাহলে সেটি খাওয়ার আগে নিজেকে জিজ্ঞেস করে নেবেনে এটি এখানে এলো কিভাবে?’

বার্নার্স লি বলেন, ‘যদি ওই ফল ও সবজি দেখতে অনেক তরতাজা হয় তাহলে ধরে নিতে পারেন যে এটি আপনার দেশের নয়। বিদেশ থেকে বিভিন্ন উপায়ে আমদানি করা হয়েছে। হয় এটি পানিপথে এসেছে না হলে আকাশপথে। আর এসব পরিবহনে প্রচুর পরিমাণে কার্বন নির্গত হয়েছে। উড়োজাহাজের একটি ফ্লাইটেই কয়েকশ টন জ্বালানি পোড়ানো হয়। একইভাবে হয় নৌযানের ক্ষেত্রেও।’

তিনি পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘যদি শীতকাল চলে যাওয়ার পরও আপনার শীতের ফল খেতে ইচ্ছা করে তাহলে সবচেয়ে ভাল উপায় হল সেই ফল ও সবজিগুলোকে হিমায়িত সংরক্ষণ করা। খাবার হিমায়িত অবস্থায় অনেকদিন পর্যন্ত টাটকা ও সুস্বাদু থাকে।’

তবে এতেও কার্বন নির্গমনের প্রশ্ন থেকে যায়। কেননা রেফ্রিজারেটর থেকেও কার্বন নির্গত হয়। অধ্যাপক বার্নার্স লি বলেছেন, ফ্রিজ থেকে যে পরিমাণ কার্বন নির্গত হয় সেটা আতঙ্কিত হওয়ার মতো নয়।

আবার বারো মাস ফলন হয় এমন অনেক সবজি রয়েছে যেগুলো কিনা উচ্চমাত্রার কার্বন নি:সরণের জন্য দায়ী। যেমন কচি ব্রোকোলি। আমরা সবসময় ধরে নিই যে এটি অন্য সব ব্রোকোলির মতোই। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, এই বিশেষ ধরনের ব্রোকোলিটি বিপুল পরিমাণ কার্বন নির্গমন করে থাকে। কেননা বিশ্বের বেশিরভাগ ব্রোকোলি আসে বিভিন্ন দেশ থেকে আকাশপথে।

ফুল:

যদি আপনি ফুল খুব ভালবাসেন এবং দিনটাকে রঙিন করে তুলতে মাঝে মাঝে একগুচ্ছ ফুল কেনেন। তাহলে সেই ফুল কেনার ক্ষেত্রেও আনতে পারেন কিছুটা পরিবর্তন।

সবার পছন্দের গোলাপ বা লিলি ফুল সাধারণত দুইভাবে বাজারে আসে। প্রথমত উষ্ণ ঘরে উৎপাদনের মাধ্যমে এবং দ্বিতীয়ত আকাশ পথে আমদানি হয়ে। আবার দুটি বিষয়ও হতে পারে।

এক্ষেত্রে আপনি পটারি প্লান্ট বা টবের গাছ কিনতে পারেন। অথবা ফুলের মৌসুম পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারেন। যখন দেশেই উৎপাদিত তাজা ফুল হাতে পাবেন।

গোল্ডেন রুলস:

পরিবেশের বিষয়ে সচেতনতার ক্ষেত্রে অধ্যাপক মাইক বার্নার্স লি কিছু গোল্ডেন রুলস বা নিয়মের কথা বলে গেছেন। সেগুলো হলো-

জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকানোর জন্য সবচেয়ে বড় প্রভাব রাখতে, মাংস এবং দুগ্ধজাত খাবার খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে দিন। প্রোটিনের চাহিদা মেটানোর ক্ষেত্রে এই দুই ধরনের খাবার সবচেয়ে কম কার্যকর। অথচ এই খাবারগুলো কার্বন ফুটপ্রিন্টের মূল কারণ।

যদি আপনি সম্পূর্ণ মাংস-মুক্ত থাকতে না চান তাহলে আপনি গরু বা খাসির মাংসের পরিবর্তে মুরগি বা মাছ বেছে নিন। তবে খেয়াল রাখতে হবে সেই মুরগি ও মাছের কোনটাই যেন খামারে উৎপাদিত না হয়।

আপনি যা কিছু কিনবেন তার সবটাই খেয়ে নিন। কোন খাবার নষ্ট করবেন না। এজন্য সপ্তাহের বাজার করতে যাওয়ার আগে ভালভাবে ফ্রিজ এবং রান্নাঘর দেখে নিন। যেন বুঝে শুনে কিনতে পারেন।

বাজারে প্রায়ই চটকদার সব অফার দেখিয়ে ক্রেতাদের মনোযোগ আকর্ষণ করা হয়। এসব দেখে কখনোই প্রলুব্ধ হবেন না। দাম কম হওয়ার চাইতে এটা জানা জরুরি, এই জিনিষটা আপনার কতোটা প্রয়োজন।

আপনি যত বেশি ফল এবং সবজি খাবেন ততোই ভাল। তবে খেয়াল রাখবেন যেটা আপনি খাচ্ছেন সেটা মৌসুমি ফল/সবজি কিনা।

প্রিয় খাবারটি পরে খাওয়ার জন্য রেফ্রিজারেটরে সঠিক নিয়মে সংরক্ষণ করে রাখুন। যেন আমদানি করা খাবার খেতে না হয়।

ঢাকা টাইমস/২৪ফেব্রুয়ারি/একে

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

ফিচার এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :