আগুন থেকে বাঁচার প্রস্তুতি ও কৌশল

জহির রায়হান, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১০ এপ্রিল ২০১৯, ০৮:২৪

নতুন উদ্বেগ তৈরি করেছে আগুন। অন্যান্য অনেক নানা বিষয়ের পাশাপাশি আগুন থেকে বাঁচতেও সচেতনতার ঘাটতিও স্পষ্ট। সেই সঙ্গে নিয়ন্ত্রক সংস্থার তৎপরতাও প্রশ্নের মুখে। এ নিয়ে প্রচার-প্রচারণাও তেমন নেই।

আগুন থেকে কীভাবে রক্ষা পাওয়া যাবে, আগে থেকে কী প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা থাকা উচিত বা তাৎক্ষণিক কী ধরনের কাজ করতে হবে সে বিষয়ে জাইকার সহায়তায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এ বিষয়ে একটি ম্যানুয়াল তৈরি করেছে। সেখান থেকে প্রয়োজনীয় কিছু বিষয়ে তুলে ধরা হয়েছে।

পূর্ব প্রস্তুতি

অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র কীভাবে ব্যবহার করতে হবে তা ভালোভাবে জেনে নিন এবং নিয়মিত অনুশীলন করুন। নিকটবর্তী ফায়ার স্টেশনের নম্বর সঙ্গে রাখুন। প্রয়োজন ছাড়া বিদ্যুৎ ও গ্যাসের চুলার সংযোগ বন্ধ রাখার অভ্যাস করুন।

পারিবারিক বৈঠক

কখন দুর্যোগ আসবে তা আমরা আগে থেকে বলতে পারি না। দুর্যোগের সময় হয়তো পরিবারের সদস্যরা ভিন্ন ভিন্ন স্থানে থাকবেন। এমন পরিস্থিতিতে কী করতে হবে সে বিষয়ে পরিবারের সবাইকে নিয়ে আলোচনা করুন।

দ্রুত আশ্রয় গ্রহণের মতো কোথায় ফাঁকা বা নিরাপদ স্থান আছে সেটা জেনে রাখুন।

বাড়ির চারপাশে কোন কোন ধরনের দুর্যোগ ঝুঁকি রয়েছে সেগুলো জেনে রাখুন।

নিয়মিত পারিবারিক বৈঠকের আয়োজন করুন যাতে করে এসব বিষয়ে ভুলে না যান।

বিদ্যুৎ ও গ্যাসের লাইন এবং প্রধান সুইচগুলো নিয়মিত পরীক্ষা করুন। কোনো ভবনে আগুন লাগলে সবার আগে দ্রুত বিদ্যুৎ ও গ্যাসের প্রধান চাবি অর্থাৎ মেইন সুইচটি বন্ধ করতে হবে। ভবনের প্রতিটি সদস্যকে জানতে হবে যে, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মেইন সুইচ কোথায়। সঙ্গে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সংযোগ নিয়মিত পরীক্ষা করাতে হবে। কেননা ত্রুটিপূর্ণ বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ আগুনের ভয়াবহতা বাড়ার অন্যতম কারণ।

জরুরি যোগাযোগের তালিকা প্রস্তুত রাখা

আগুন বা অন্য দুর্ঘটনায় সাহায্য পেতে দ্রুত ফায়ার সার্ভিসসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে। তাই এ ধরনের জরুরি টেলিফোন নম্বর তালিকা আগে থেকেই প্রস্তুত করে বাড়িতে সুবিধামতো জায়গায় রাখতে হবে, যাতে বিপদগ্রস্ত হলে দ্রুত কর্তৃপক্ষকে জানাতে পারেন। এই তালিকায় ফায়ার সার্ভিস, স্থানীয় হাসপাতাল, ওয়ার্ড কাউন্সিলর, গ্যাস-বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ কর্র্তৃপক্ষ, থানা, পরিবারের অন্যান্য সদস্যের নম্বরসহ প্রয়োজনীয় নম্বর থাকবে।

জরুরি ব্যাগ প্রস্তুত রাখা

দুর্যোগের সময় চিন্তুাভাবনা করে প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো একসঙ্গে নিয়ে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত সময় থাকে না। তাই জরুরি অবস্থা, দুর্ঘটনা বা দুর্যোগের সময় যেসব জিনিস আমাদের প্রয়োজন হয় তা আগে থেকেই রাখতে হবে। এটিকে বলা হয় ইমার্জেন্সি বা জরুরি ব্যাগ। কিছু প্রাথমিক জিনিসের নাম দেওয়া হলো যা জরুরি যেমন- বহনযোগ্য লাইট, প্রয়োজনীয় ওষুধ, পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র, জায়গা-জমির দলিল, ব্যাংকের কাগজপত্র ইত্যাদি। এটা একেকজনের একেক রকম হতে পারে। অবার অফিসেরটা আলাদাও হতে পারে।

ভারী আসবাবপত্র দেয়ালের সঙ্গে আটকে রাখা

ভারী আসবাবপত্র এমন জায়গায় রাখতে হবে যাতে করে পরিবারের সদস্যের ওপর পড়ে ক্ষতি না করে। তাই ভারী আসবাবপত্র দেয়ালের সঙ্গে স্ক্রু ও ক্লাম্প দিয়ে আটকে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। কোন রাস্তা দিয়ে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি সহজে আপনার কাছে পৌঁছতে পারে তা জেনে রাখতে হবে।

কমিউনিটি সভা

স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সবাইকেই তাদের এলাকার সুরক্ষার কথা ভাবতে হবে। আপনার এলাকার সুবিধা ও অসুবিধাগুলো নিয়ে প্রতিবেশীদের সঙ্গে আলোচনা করুন। ভেবে দেখুন কীভাবে এলাকার সম্পদ ও মানুষকে বিপদ থেকে রক্ষা করা যায়। কোনো দুর্যোগের সময় কোন সদস্য কী দায়িত্ব পালন করবেন তা পূর্বেই নির্ধারণ করে রাখুন।

মহড়া

সাধারণত কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটলেই আমরা ভীত হয়ে পড়ি। তাই আমাদের মহড়ার প্রয়োজন, যাতে জরুরি প্রয়োজনে নিজেকে শান্ত রাখতে পারি এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারি।

অনুশীলনের আগ পর্যন্ত আমরা নিজেদের অনেক দুর্বলতা সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে পারি না। যেমন ধরুন আগুন লাগলে আমরা সবাই জানি অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রটি ব্যবহার করতে হবে। কিন্তু আপনি কি জানেন অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রটি বাড়ির কোথায় আছে এবং তা কীভাবে ব্যবহার করতে হয়? আপনি কি জানেন দুর্যোগকালীন সময়ে কোন রাস্তা দিয়ে আপনাকে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য বের হতে হবে এবং সেখানে পৌঁছাতে ঠিক কত সময় লাগবে? এমনকি আপনার সেখানে পৌঁছাতে নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে আরও বেশি সময় লাগতে পারে যদি আপনাকে পরিবারের কোনো বৃদ্ধ বা অসুস্থ সদস্যকে সহায়তা করা প্রয়োজন হয়। এসব কারণে মহড়া প্রয়োজন। যথাসম্ভব বাস্তবতার সঙ্গে মিল রেখে তা প্রতিনিয়ত অনুশীলন করতে হবে।

আগুন প্রতিরোধের কিছু টিপস

গ্যাসের চুলা অকারণে জ্বালিয়ে রাখব না; চুলা জ্বালিয়ে কাপড় শুকাব না এবং এর আশপাশে দাহ্য বস্তু রাখব না; জ্বলন্ত সিগারেট কখনই যত্রতত্র ছুড়ে ফেলা যাবে না; মশার কয়েল জ্বালিয়ে নিরাপদ স্থানে রাখব; গ্যাস ও বিদ্যুতের সংযোগ ও মেইন সুইচ নিয়মিত পরীক্ষা করব এবং ভালো মানের বৈদ্যুতিক উপকরণ ব্যবহার করব। ফায়ার এক্সটিংগুইশার, পানি ও বালি ইত্যাদি হাতের নাগালের মধ্যে রাখব।

আগুন লাগলে কী করণীয়

আগুন লাগলে সঙ্গে সঙ্গে ফায়ার এক্সটিংগুইশার ব্যবহার করব। বৈদ্যুতিক উৎসের আগুন হলে তাৎক্ষণিক প্লাগ খুলে ফেলব, মেইন সুইচ বন্ধ করে দেব। পানি ব্যবহার করব না।

রান্নার পাত্রে তেল লাগা আগুনে কখনই পানি ঢালব না। ঢাকনা বা ভেজা চটের বস্তা বা কাপড় দিয়ে পাত্রটি ঢেকে দেব। আক্রান্ত ভবনের আশপাশে ভিড় না করে ফায়ার সার্ভিসের কাজে সহযোগিতা করব। পোশাকে আগুন লাগলে দৌড়াব না, মেঝেতে বা মাটিতে গড়াগড়ি দেব। সব ধরনের আগুন নেভাতে ফায়ার এক্সটিংগুইশার ব্যবহার করব। আগুন লাগলে তাড়াহুড়ো না করে লাল রং চিহ্নিত রাস্তা দিয়ে বের হব।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সাবেক মহাপরিচালক আলী আহমদ খান এই সময়কে বলেন, ‘আগুন তো বিভিন্ন কারণে লাগতেই পারে। আপনার এর জন্য প্রস্তুতি থাকতে হবে। আগুন লাগলে কার কী কর্তব্য সেটা জানতে হবে। প্রতিটি বিল্ডিংয়ের একটা আপৎকালীন পরিকল্পনা থাকতে হবে, যাতে এই ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলা করা যায়। আগুনে আতঙ্কিত না হয়ে করণীয় জানতে হবে। গায়ে বা পরনের কাপড়ে আগুন ধরলে মাটিতে গড়াগড়ি করতে হবে। ধোঁয়া হলে হামাগুড়ি দিতে হবে। কারণ নিচে ধোঁয়া কম থাকে। নিচু হয়ে হামাগুড়ি দিয়ে অথবা গড়াগড়ি করে বের হতে হবে।

(ঢাকাটাইমস/১০এপ্রিল/জেআর/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :