মার্কিন চাপে প্রস্তাবে পরিবর্তন জাতিসংঘের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ২৫ এপ্রিল ২০১৯, ১০:৩৯
অ- অ+

যুদ্ধ চলাকালে ধর্ষণকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার বন্ধে এবং এর শাস্তি নিশ্চিতে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেছিল জার্মানি৷ কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো দেয়ার হুমকিতে তাতে পরিবর্তন আনতে হয় নিরাপত্তা পরিষদকে।

বরাবরই গর্ভপাতের বিরুদ্ধে নিজের অবস্থানের কথা জানিয়ে আসছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ এবার তার এ অবস্থানের কারণে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে আটকে গেল যুদ্ধের সময় যৌন সহিংসতা বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার একটি পদক্ষেপ৷ ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদে ১৩-০ ভোটে পাস হয়েছে প্রস্তাব৷ চীন এবং রাশিয়া ভোটদানে বিরত ছিল৷

নিরাপত্তা পরিষদে প্রায়ই নানা বিষয়ের প্রস্তাবে সদস্য রাষ্ট্রগুলো আপত্তি জানিয়ে থাকে৷ নিজেদের অবস্থান, আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও কৌশলের কারণে স্থায়ী পাঁচ সদস্যের কারো ভেটোর হুমকি দেয়ার ঘটনাও নতুন নয়৷ কিন্তু যুদ্ধে যৌন সহিংসতা বন্ধের মতো প্রস্তাবে কীভাবে কারো আপত্তি থাকতে পারে, সে বিষয়টিই ভাবাচ্ছে অনেককে৷

তবে আপাতদৃষ্টিতে সাধারণ মনে হলেও বিষয়টির সঙ্গে আরো অনেককিছুই জড়িত৷ ট্রাম্প ও যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তির মূল জায়গা ছিল প্রস্তাবের তিনটি বিষয়কে ঘিরে৷

প্রস্তাবের বিভিন্ন স্থানে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের বেশ কিছু মামলার উদাহরণ টানা হয়েছে৷ তবে ২০০২ সাল থেকে কার্যকর হওয়া এই আদালতটি স্থাপনে যে আন্তর্জাতিক চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল, সে রোম স্ট্যাচুট এখনও অনুসমর্থন করেনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷ ফলে সে আদালতকে স্বীকৃতিই দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র৷

২০১৩ সালে যৌন সহিংসতা বন্ধে একটি প্রস্তাব গ্রহণ করে জাতিসংঘ৷ তখন বারাক ওবামার সরকার সেটিতে সম্মতি দিলেও ট্রাম্প প্রশাসন কিছুদিন আগেই জানিয়ে দিয়েছে, এই প্রস্তাবের ভাষা তাদের পছন্দ নয়৷ একই কারণে জার্মানির উত্থাপন করা নতুন প্রস্তাবটিরও বিরোধীতা করেছে দেশটি৷

নির্বাচনি প্রচারণার শুরু থেকেই গর্ভপাতের বিরুদ্ধে নিজের অবস্থান জানিয়ে এসেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ নির্বাচিত হওয়ার পর গর্ভপাত বন্ধে নানারকম পদক্ষেপ নিয়েছেন তিনি৷ যেসব ক্লিনিক গর্ভপাতে উৎসাহিত করে, সেগুলোতে বরাদ্দ বন্ধ করে দেয়ার হুমকিও দিয়েছেন তিনি৷ এমনকি তার এমন অবস্থানের বিরুদ্ধে আদালতে যাওয়ার ঘোষণাও দিয়েছে বেশ কয়েকটি রাজ্য সরকার৷

দেশে, এমনকি নিজের দলের মধ্যেও এ বিষয়ে যথেষ্ট বিরোধীতার মুখোমুখি হলেও অনড় ট্রাম্প৷ ফলে জাতিসংঘে এমন কোনো প্রস্তাবে সম্মতি জানাতে চাননি তিনি, যা তার ব্যক্তিগত অবস্থানের বিপক্ষে যায়৷

জার্মানির মূল প্রস্তাবে এক জায়গায় যৌন সহিংসতার শিকার ব্যক্তিদের যৌন স্বাস্থ্য রক্ষায় দেশগুলোর সচেষ্ট হওয়া এবং প্রজননে নারীর অধিকার নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে৷ এ জায়গাতেই আপত্তি যুক্তরাষ্ট্রের৷ দেশটি মনে করে, ‘প্রজননের অধিকার’ বা ‘সন্তান জন্মদানের অধিকার’ বলার মাধ্যমে আসলে গর্ভপাতকে সমর্থন করছে এ প্রস্তাব৷

অপর যে বিষয়টিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রাশিয়া ও চীনও আপত্তি জানিয়েছে, তা হলো জাতিসংঘের মনিটরিং বডিকে যৌন সহিংসতা পর্যবেক্ষণ ও প্রতিবেদন দিয়ে ব্যবস্থা নেয়ার প্রস্তাব৷ দেশগুলো বলছে, আলাদা করে এমন কোনো বডি বা কমিটির কোনো প্রয়োজন দেখছে না তারা৷

শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের হুমকিতে উপরের সবকিছুই বাদ দেয়া হয়েছে প্রস্তাব থেকে৷ যুক্তরাষ্ট্রও তা মেনে নিয়ে পক্ষে ভোট দিয়েছে৷ কিন্তু অনেক সদস্য রাষ্ট্র এবং অধিকার কর্মী বলছেন, এর ফলে দীর্ঘদিন ধরে যুদ্ধে নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে যারা কাজ করে আসছেন, তাদের নৈতিক পরাজয় ঘটলো৷

জার্মানির প্রস্তাবে শুরু থেকে অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়ে আসা ফ্রান্স যৌন স্বাস্থ্যরক্ষার নিশ্চয়তা ছাড়াই প্রস্তাব পাস হওয়াকে ‘লজ্জাজনক’ বলে আখ্যা দিয়েছে৷ জাতিসংঘে ফরাসি দূত ফ্রাসোঁয়া দেলাত্রে বলেছেন, এ সিদ্ধান্ত ‘নারীর মর্যাদা নষ্ট করল’৷

তিনি বলেন, ‘যেসব নারী যুদ্ধে যৌন সহিংসতার শিকার হয়ে গর্ভধারণে বাধ্য হয়েছেন, তাদের গর্ভপাতের অধিকার দিতে ব্যর্থ হলো নিরাপত্তা পরিষদ৷ এটা ধারণারও অতীত এবং কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না’৷

মানবাধিকার সংস্থাগুলো যুক্তরাষ্ট্রের এমন অবস্থানে হতাশা প্রকাশ করেছে৷ যুদ্ধে লিপ্ত দেশগুলোর কাছে এ অবস্থান ‘ভুল বার্তা’ পৌঁছে দেবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছে সংস্থাগুলো৷

ঢাকা টাইমস/২৫এপ্রিল/একে

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
মসজিদের দোতলা থেকে শিশুর রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার 
দেশে ফিরেছেন ৬৬ হাজার ৩৬২ হাজি, মৃত্যু ৪৩ জনের
গাজীপুরে পানিতে ডুবে ২ শিশুর মৃত্যু
পবিত্র আশুরা উপলক্ষে রাজধানীতে শিয়া সম্প্রদায়ের তাজিয়া মিছিল
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা