মধ্যপ্রাচ্যে ফের আরব বসন্ত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ৩০ অক্টোবর ২০১৯, ০৯:৩৩
অ- অ+

একদিকে ইরাকের রাজপথে গুলিতে প্রাণ হারাচ্ছেন বিক্ষোভকারীরা। অন্যদিকে লেবাননে বিরোধীরা অচল করে দিয়েছে দেশ এবং পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছে প্রধানমন্ত্রী সাদ আল-হারিরি। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে মিশরীয় নিরাপত্তা বাহিনী দেশটির প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল সিসির পুলিশি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে জনতার বিক্ষোভ চেষ্টা নস্যাৎ করে দিয়েছে।

ইরাক, লেবানন এবং মিশরের মধ্যে ভিন্নতা প্রচুর। কিন্তু আরব মধ্য প্রাচ্য-জুড়ে বিরোধীদের ক্ষোভের চিত্র অভিন্ন এবং তাতে লাখ লাখ লোকের অংশগ্রহণ ঘটেছে, বিশেষ করে তরুণরা। মোটামুটিভাবে ধারণা করা হয় যে, এই অঞ্চলের জনসংখ্যার ৬০ শতাংশের বয়স ৩০ বছরের নিচে।

তরুণ জনগোষ্ঠী যেকোনো একটি দেশের জন্য বিশাল জনসম্পদ। তবে তা কেবল তখনই যখন দেশের অর্থনীতি, শিক্ষা ব্যবস্থা এবং রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলো তরুণদের প্রয়োজন পূরণে কার্যকর থাকে। লেবানন, ইরাক এবং এই অঞ্চলের অন্য কোন দেশের তরুণ জনগোষ্ঠীকে প্রায়ই গ্রাস করছে হতাশা, যা সহজেই পাল্টে রূপ নেয় ক্ষোভে।

এই অঞ্চলের প্রধানতম দুটো অভিযোগ হচ্ছে, দুর্নীতি এবং বেকারত্বের বিরুদ্ধে। একটা আরেকটাকে ছাড়িয়ে। বিশ্বব্যাপী দুর্নীতির একাধিক সূচক অনুসারে, বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত অন্যতম দেশের তালিকায় ইরাকের অবস্থান। লেবাননের অবস্থা কিছুটা ভালো, তবে খুব বেশি নয়। দুর্নীতি যেন একটি ক্যান্সার। যারা এর শিকার হয় তাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং আশা নি:শেষ হয়ে যায়।

দুর্নীতিগ্রস্ত রাষ্ট্র ব্যবস্থার মধ্যে থেকে যারা নি;স্ব হয় এবং যখন কোন শিক্ষিত ব্যক্তি কাজ পায়না, তারা অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হয়ে যেতে পারে এবং খুব দ্রুত। যখন রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠানগুলো- যেমন সরকার, আদালত এবং পুলিশ বাহিনী-দুর্নীতিতে জড়িয়ে যায়, পুরো সিস্টেমই যে ব্যর্থ সেটার একটা সংকেত হয়ে ওঠে তা।

ইরাক এবং লেবানন-দুই দেশেই বিক্ষোভরত ব্যক্তিরা কেবলমাত্র সরকারের পদত্যাগের দাবিই তোলেনি। তারা সমগ্র প্রশাসন ব্যবস্থারই সংস্কার বা পরিবর্তনের দাবি তুলেছে। ইরাকের প্রেক্ষাপটে মর্মান্তিক এক বাস্তবতা হল, সমাজে সহিংসতা দৃঢ়ভাবে জেঁকে বসেছে। যখন বিক্ষোভকারীরা বেকারত্ব, দুর্নীতি এবং সরকারে বিরুদ্ধে শ্লোগান দেয়, রাজপথ দখল করে বিক্ষোভ দেখায়, তা খুব একটা স্থায়িত্ব পায়না কারণ তাদের বিরুদ্ধে সরাসরি গুলি চালানো হয়।

ইরাকের রাস্তায় বিক্ষোভকারীদের এখনো পর্যন্ত নেতৃত্ব-হীন অবস্থায় দেখা গেছে। কিন্তু সরকারের মধ্যে আশংকা হল, সময় যত গড়াচ্ছে এবং হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে, বিক্ষোভকারীরা আরও বেশি সুসংগঠিত হয়ে উঠবে।

আন্দোলনকারীরা সরকারের শক্তির প্রধান দুর্গকে টার্গেট করেছে, বিশেষ করে বাগদাদের প্রাচীর-বেষ্টিত গ্রিন জোন। এটি আমেরিকান আগ্রাসনের কেন্দ্রস্থল ছিল। এখন এখানে সরকারি দপ্তর এবং দূতাবাস অবস্থিত এবং সেইসাথে বিখ্যাত ব্যক্তিদের বাড়ি দিয়ে বাগদাদে বিক্ষোভের সূচনা।

পবিত্র শহর কারবালাতে যখন গুলি চালানো হয়েছিল, এক রাতের মধ্যে বহু মানুষ নিহত এবং আহত হওয়ার তথ্য জানা গেছে। লোকজনের প্রাণ বাঁচাতে ছুটে পালানোর দৃশ্য সামাজিক মাধ্যমে ঠাঁই পেয়েছে।

যখন থেকে বিক্ষোভের শুরু হয়, হতাহতের হার ক্রমাগতভাবে বেড়ে যায়। বাগদাদ থেকে পাওয়া খবরে বলা হয়, কিছু ইরাকি সৈন্যকে জাতীয় পতাকা তাদের কাঁধে ঝুলিয়ে, রাস্তায় নামতে দেখা যায় যার মাধ্যমে তারা আন্দোলনরত বিক্ষোভকারীদের প্রতি কিছুটা একাত্মতা প্রকাশ করছে বলে মনে করা হয়।

কিন্তু কোন কোন খবরে বলা হয় কালো পোশাক পরা পুরুষেরা, যাদের কারো কারো মুখে মুখোশ পড়া তাদের গুলি ছুড়তে দেখা গেছে।

১৭ই অক্টোবর লেবাননে বিক্ষোভ শুরু হয় যখন সরকার তামাক, পেট্রোল এবং হোয়াটসঅ্যাপ কলের ওপর কর বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া। নতুন এসব কর দ্রুত প্রত্যাহার করে নেয়া হয় তবে ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। দেশটিতে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে সত্যিকারের উত্তেজনা নজরে আসছে।

তাহলে এটা কি নতুন করে আরব বসন্তরে সূচনা? এটা যেন ২০১১ সালের অসমাপ্ত কর্মকাণ্ডের একটি প্রতীক। নিপীড়নকারী নেতাদের বিরুদ্ধে যারা বিক্ষোভ করেছিল সেই বছরের অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তাদের স্বাধীনতা আসেনি। তবে সেই অভ্যুত্থানের ফলাফল এখনও অনুভূত হচ্ছে, সিরিয়া, ইয়েমেন, লিবিয়া এবং শক্তিশালী পুলিশি রাষ্ট্র মিশরে।

যেসমস্ত ঘটনা ২০১১ সালের আরব বসন্তকে উশকে দিয়েছিল সেখানে তা এখনো বহাল।, কোথাও কোথাও আরও গভীর হয়েছে। একটি বিশাল এবং তরুণ জনগোষ্ঠীর চাহিদাগুলি পূরণে দুর্নীতি-গ্রস্ত ব্যবস্থার ব্যর্থতার নিশ্চয়তা দেয় যে, বিক্ষোভের পেছনে কাজ করা ক্রোধ এবং হতাশা সহসা দূর হচ্ছে না।

ঢাকা টাইমস/৩০অক্টোবর/একে

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
হজমশক্তি বাড়ানোর স্বাস্থ্যকর উপায়
দেশ ছেড়েছেন শেখ হাসিনার চাচা শেখ কবির
‘তারেক রহমানের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক ইতিবাচক বার্তা হতে পারে’
আজ থেকে সচিবালয় ও যমুনার আশপাশে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা