সৌদি রাজকুমারী বাসমাহ ‘নিখোঁজ’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ২০ নভেম্বর ২০১৯, ১১:২০
অ- অ+

প্রায় আট মাস ধরে কোনো হদিস মিলছে না সৌদি রাজকুমারী বাসমাহ বিনতে সৌদের। চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার সময় তাকে আটক করা হয়েছে এবং গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে বলে দাবি করেছেন তার ঘনিষ্ঠজনরা। খবর ডয়চে ভেলের।

মানবাধিকার নিয়ে কাজ করার জন্য পরিচিত সৌদি রাজকন্যা বাসমাহ। বেশ কিছুদিন ধরে তার কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। কোনো রকমের আইনি প্রক্রিয়া ছাড়াই তাকে রিয়াদে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বাসমাহর ঘনিষ্ঠ একজনের বরাত দিয়ে জার্মান গণমাধ্যমটি জানিয়েছে, বাসমাহ চাইলেও তার বক্তব্য প্রকাশ করতে পারছেন না, কেননা তার সমস্ত যোগাযোগের ওপর নজর রাখা হয়েছে৷ নিরাপত্তার স্বার্থে ওই ব্যক্তি নাম প্রকাশ করতে চাননি৷

বাসমাহ দীর্ঘদিন ধরে সৌদি আরবের সাংবাধিনিক সংস্কার এবং মানবাধিকার নিয়ে কথা বলে আসছেন৷ তার মতো দেশটির রাজতন্ত্রের সমালোচকরা ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের ক্রোধের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে৷ রাজপরিবারের অনেককেই এজন্য হত্যা, গুম, কারাবন্দি ও হুমকির শিকার হতে হয়েছে৷

সূত্র অনুযায়ী, কন্যাকে নিয়ে বিদেশ পালিয়ে যেতে পারেন এমন সন্দেহে চলতি বছরের মার্চে বাসমাহকে বন্দি করা হয়৷ চিকিৎসার জন্য তার সুইজারল্যান্ডে যাওয়ার কথা ছিল৷ সুইস ডাক্তারের অনুরোধের প্রেক্ষিতে ১৮ ডিসেম্বর বাসমাহ কন্যাসহ জেদ্দা ত্যাগের ছাড়পত্র পান৷ কিন্তু ভ্রমণের দিনই দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয় এবং উড়োজাহাজ থেকে নামিয়ে আনা হয় বলে জানান তার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আইনজীবী লিওনার্ড বেনেট৷

বেনেটে বলেন, দুই মাস পর থেকে তার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না৷ কেউ জানে না তিনি কোথায় আছেন৷ আমরা প্রকৃতপক্ষে খারাপ কিছুর আশঙ্কা করছি৷

বেনেট জানান, কয়েক দফা ফোন কল করার পর তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হলেও তিনি তেমন কিছু বলেননি৷ বাসমাহর কথা শুনে মনে হয়েছে তিনি বন্দি অবস্থায় রয়েছেন৷

বেনেট বলেন, বাসমাহর গন্তব্য সুইজারল্যান্ডের জেনেভা হলেও, যাওয়ার কথা ছিল তুরস্ক হয়ে৷ অঙ্কারার সঙ্গে শত্রুতামূলক সম্পর্ক থাকায় রিয়াদ বিষয়টিকে দেখেছে সন্দেহের চোখে৷

বাসমাহর ঘনিষ্ঠ সূত্রটি জানিয়েছে, ‘(পালিয়ে যাওয়ার) অভিযোগ সত্য কিনা তারা (কর্তৃপক্ষ) সেই তদন্ত শেষ করেছে৷ তারপরও এখন পর্যন্ত কোনো জবাব পাওয়া যায়নি৷ বাসমাহর বিরুদ্ধে দেয়া তথ্য মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে, কিন্তু কেন এখনো তাকে আটকে রাখা হয়েছে সেটি তাদের জানা নেই৷

কে তাকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছে তা পরিষ্কার নয় বলে জানিয়েছে এই সূত্র৷ রাজকন্যার নিখোঁজের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাসমাহর এক বন্ধু এবং ব্যবসায়িক সহকর্মী৷ নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, শাসক পরিবার ঠিকই জানে বাসমাহ কোথায় আছেন৷

৫ সন্তানের জননী বাসমাহ ২০০৬ সাল থেকে সৌদি গণমাধ্যমে নিয়মিত লেখালেখি করেন৷ কিন্ত তার ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড ও জনগণের হয়ে কথা বলার বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি দেশটির শাসকরা৷

বিবাহ বিচ্ছেদের পর ২০১০-২০১১ এর দিকে তিনি লন্ডনে পাড়ি জমান৷ পরিচিতি পান গণমাধ্যমে৷ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে আরব অঞ্চলের দুর্নীতি, মানবাধিকার এবং সম্পদের বৈষম্য নিয়ে কথা বলে ব্যাপক আলোচনায় আসেন বাসমাহ৷ সৌদি আরবে ধর্মীয় পুলিশের ক্ষমতা হ্রাস, নারীদের অধিকারসহ বিভিন্ন সাংবিধানিক সংস্কারের দাবিও জানান তিনি৷ প্রশাসনের সমালোচনা করলেও রাজ পরিবারের বিরুদ্ধে অবশ্য কখনো সরাসরি কোনো কথা তাকে বলতে শোনা যায়নি৷

২০১৫ সালের দিকে সৌদি আরবে ফিরে আসেন বাসমাহ৷ লন্ডনের বেশ কিছু ব্যবসা তিনি গুটিয়ে ফেলেন৷ ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে বিবিসি অ্যারাবিককে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ইয়েমেন যুদ্ধের ইতি টানতে সৌদি আরবের প্রতি আহবান জানান৷ এরপর থেকে তাকে আর গণমাধ্যমে দেখা যায়নি৷

বাসমাহ সাবেক সৌদি রাজার উত্তরসূরি ১১৫ সন্তানের একজন৷ এই পরিবারের একটি অংশকে বর্তমান রাজা সালমান ও তার পুত্রের সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দী বলে মনে করা হতো৷ বর্তমান সৌদি রাজপরিবারের মোট ১৪ হাজার সদস্য রয়েছেন, যাদের মধ্যে ক্ষমতা বিস্তারের জন্য বেশ কয়েকটি বিভাজন রয়েছে৷

লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের সৌদি রাজনীতি ও রাজপরিবার বিষয়ক বিশেষজ্ঞ মাদাওয়ি আল-রাশিদ বলেন, রাজা আবদুল্লাহর শাসনকালে রাজকন্যারা সব ধরনের আলোচনায় অংশ নিতে পারতেন৷ এটা অনেকটা জনসংযোগের মতো ছিল৷

ঢাকা টাইমস/২০নভেম্বর/একে

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
অনুমোদনহীন সংগঠন গঠনের বিষয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের সতর্ক করেছে বিএনপি
সংস্কার বিষয়ে বিএনপির আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই: মির্জা ফখরুল
মসজিদের দোতলা থেকে শিশুর রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার 
দেশে ফিরেছেন ৬৬ হাজার ৩৬২ হাজি, মৃত্যু ৪৩ জনের
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা