জিদানের কাছে পয়েন্টের চেয়ে জয়ের গুরুত্ব বেশি

সর্বোচ্চ গোলদাতা, অধিনায়ক ও সর্বোচ্চ চুক্তিভুক্ত খেলোয়াড়কে ছাড়াই শনিবার মাঠে নেমেছিলে রিয়াল মাদ্রিদ। চতুর্থ স্থানে থাকা সেভিয়ার বিপক্ষে সে কারণেই হয়ত জয়টা সহজে আসেনি। তবে শেষ পর্যন্ত সেভিয়াকে ২-১ গোলে পরাজিত করে বার্সেলোনাকে টপকে লিগ টেবিলের শীর্ষে উঠে এসেছে রিয়াল মাদ্রিদ।

সান্তিয়াগো বার্নব্যুতে এদিন অনুপস্থিত ছিলেন করিম বেনজেমা, সার্জিও রামোস ও এডেন হ্যাজার্ড। তবে তাদের অনুপস্থিতিতে ক্যাসেমিরো নিজেকে প্রমানে ব্যস্ত ছিলেন। দলের হয়ে দুটো গোলই করেছেন ২৭ বছর বয়সী এই ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার। প্রথমার্ধ গোলশূন্য থাকার পর ম্যাচের তিনটি গোলই হয়েছে দ্বিতীয়ার্ধে। ক্যাসেমিরোর গোলে ৫৭ মিনিটে স্বাগতিকরা এগিয়ে যাবার সাত মিনিটের মধ্যে লুক ডি জং সেভিয়ার পক্ষে সমতা ফিরিয়েছিলেন। এরপর ৬৯ মিনিটে ক্যাসেমিরোর গোলে রিয়ালের জয় নিশ্চিত হয়। ম্যাচ শেষে রিয়াল কোচ জিনেদিন জিদান বলেছেন, ‘তার কাছ থেকে দুই গোল পাওয়াটা খুবই অস্বাভাবিক।’

গত মৌসুমে যে কোচের অধীনে রিয়ালকে লা লিগায় ভুগতে হয়েছে সেই কোচ জুলেন লোপেতেগুয়ের অধীনে এবার সেভিয়া দারুণভাবে নিজেদের একের পর এক প্রমান করে চলেছে। ইতোমধ্যে ২০ ম্যাচের ১০টিতেই জয় তুলে নিয়ে রিয়ালের থেকে মাত্র ৮ পয়েন্ট পিছিয়ে তৃতীয় স্থানে থাকা অ্যাতলেটিকোর সাথে সমান ৩৫ পয়েন্ট সংগ্রহ করেছে সেভিয়া। আর এবারের মৌসুমের পারফরমেন্স বিচারে সেভিয়ার বিপক্ষে এই জয় হয়তবা আগামী মে মাসে রিয়ালকে শিরোপা জয়ের পথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

জিদান বলেন, ‘এই জয়টা আসলেই আমাদের জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এটা শুধুমাত্র তিন পয়েন্ট অর্জন না, তাদের বিপক্ষে জয় তুলে নেয়াটা অনেক বড় বিষয়।’

দিনের আরেক ম্যাচে রেলিগেশন জোন থেকে মাত্র দুই ধাপ দূরে থাকা এইবারের কাছে ২-০ গোলে পরাজিত হয়ে হতাশ করেছে অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদ।

এখনো হাঁটুর ইনজুরি থেকে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠতে পারেননি রামোস। কিন্তু ম্যাচ শুরুর আগে সদ্য জয় করা স্প্যানিশ সুপার কাপের শিরোপা হাতে নিয়ে সান্তিয়াগোতে স্বাগতিক সমর্থকদের সাথে সেই আনন্দ এদিন ভাগাভাগি করে নিতে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন রিয়াল অধিনায়ক। বেনজেমাও কিছুটা পায়ের ইনজুরিতে ভুগছেন। যে কারণে দ্বিতীয়ার্ধে ৬২ মিনিটে লুকা জোভিচের স্থানে তিনি নেমেছিলেন। তবে রামোস ও হ্যাজার্ডের পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠতে আরো সময় লাগবে। শুক্রবার অনুশীলন করা সত্ত্বেও ম্যাচে দলেই ছিলেন না গ্যারেথ বেল। অসুস্থতার কারণে তিনি সৌদি আরব সফরেও দলের সাথে ছিলেন না।

গত মৌসুমে বরখাস্ত হবার পর এই প্রথমবারের মত সান্টিয়াগোতে ফিরে এসেছিলেন লোপেতেগুয়ে। মাত্র ১৩৮ দিনের মাথায় লোপেতেগুয়েকে বরখাস্ত করেছিল গ্যালাকটিকোরা। এখনো সেই স্মৃতি ভুলতে পারেননি এই স্প্যানিয়ার্ড। শুধু বলেছেন, ‘এখানকার জয়গুলো এখনো আমি অনুভব করি।’

কাল তার দল সেভিয়ার আরো বেশি আগ্রাসী হওয়া উচিৎ ছিল। কিন্তু গোলখরা কাটানোর যে পুরোনো সমস্যা সেভিয়ার রয়েছে তা আরো একবার প্রমাণিত হলো। আক্রমনভাগে একমাত্র ডাচ ফরোয়ার্ড ডি জং ছাড়া আর কেউই খুব একটা তৎপর ছিলেন না। প্রথমার্ধে ডি জং একটি গোলও করেছিলেন। কিন্তু ভিএআর প্রযুক্তির সহায়তায় দেখা গেছে তাকে মার্ক করা এডার মিলিটাওকে ফাউল করা হয়েছে। জার্সি ধরে টান দেবার অপরাধে মার্সেলোর বিপক্ষে পেনাল্টির আবেদনটি নাকচ হয়ে যায়। একসময় পুরো মধ্যমাঠ দখলে নিয়ে নেয় সেভিয়া। যে কারনে খুব একটা উঠে খেলতে পারছিল না রিয়াল। এমনকি দ্বিতীয়ার্ধের ১২ মিনিট পর্যন্ত রিয়ালকে আটকে রাখে সেভিয়া। ৫৭ মিনিটে লুকা জোভিচের ব্যাকহিল পাস থেকে ক্যাসেমিরো গোল করে রিয়ালকে এগিয়ে দেন। ৬৪ মিনিটে রাফায়েল ভারানে, ক্যাসেমিরো ও মার্সেলো ট্যাকেল করতে ব্যর্থ হবার পর মুনির আল হাদাদি প্রথম প্রচেষ্টায় গোল করতে পারেননি। কিন্তু ডি জং কোন ভুল করেননি। দারুন এক গোলে সেভিয়াকে সমতায় ফেরান। যদিও সেভিয়ার এই উৎসব খুব বেশীক্ষন স্থায়ী হয়নি। লুকাস ভাসকুয়েজের ক্রস থেকে ক্যাসেমিরো নিজের দ্বিতীয় গোল করার পাশাপাশি দলের জয় নিশ্চিত করেন। ম্যাচের শেষের দিকে টনি ক্রুস ব্যবধান কমাতে ব্যর্থ হন। অন্যদিকে ভাসকুয়েজের ভুল পাসে সেভিয়া গোল প্রায় দিয়েই ফেলেছিল।

(ঢাকাটাইমস/১৯ জানুয়ারি/এসইউএল)