পিপিই: যার দরকার তার নেই অপচয় করছে অন্যরা

নজরুল ইসলাম, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৮ মার্চ ২০২০, ০৮:০৪
রাজধানীর একটি ব্যাংকে কর্মরতরা পিপিই পরিধান করে কাজ করছেন। ছবি: সংগৃহীত

‘দেশে নাকি পিপিই সংকট! অথচ এটা যাদের পরার কথা তারা পায় না, অপ্রয়োজনে অন্যরা পরে দিব্যি দৌড়াচ্ছে। আবার কেউ কেউ দেখি এটা নিরাপত্তাকর্মীদেরও পরিয়ে রেখেছেন।’ কথাগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষক হাবিবুর রহমান।

সারা বিশ্বে ছড়িয়ে যাওয়া কোভিড-১৯ ভাইরাসের সঙ্গে যুদ্ধ করছে বাংলাদেশও। কিন্তু এই যুদ্ধে অন্যতম সংকট হয়ে দাঁড়িয়েছে করোনা মোকাবিলার সরঞ্জাম। এই সংকট বিশ্বের প্রায় সব দেশেরই।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা সামগ্রীটি হলো পারসোনাল প্রোটেকটিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই)। এই সুরক্ষা সরঞ্জামটি মূলত চিকিৎসক (ডাক্তার) ও তাদের সহকারীদের (নার্স) জন্য জরুরি। এটি ব্যবহারের মাধ্যমে তারা নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে করোনাভাইরাস আক্রান্তদের সেবা দিয়ে থাকেন। তা না হলে করোনা রোগীর চিকিৎসা করতে গিয়ে উল্টো তাদের সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি শতভাগ।

দেশে এই সুরক্ষা সরঞ্জামটি চিকিৎসকদের জন্য পাওয়া না গেলেও গত কয়েক দিনে ধরে অন্য পেশার মানুষদের মধ্যে ব্যবহারের হিড়িক পড়েছে। উপজেলা প্রশাসন, বিভিন্ন ব্যাংকের কর্মকর্তা, নিরাপত্তাকর্মীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও পিপিই পরে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নানা সমালোচনার জন্ম হয়।

পিপিইর অপচয় নিয়ে গতকাল শুক্রবার পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম তার ভেরিফায়েড ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। প্রতিমন্ত্রী লেখেন, ‘গোটা পৃথিবীতে PPE-র সংকট আছে। শুধু সংকট বলেই নয়, WHO এগুলো ব্যবহারের একটা গাইডলাইন তৈরি করেছে যা তাদের ওয়েবসাইটে ২৭ ফেব্রুয়ারি প্রকাশ করেছে।

‘এগুলো সত্যিকার অর্থেই ডাক্তার এবং নার্সদের জন্য। আমরা দেখা যাচ্ছে সিকিউরিটি গার্ডদেরও এগুলো পরিয়ে ফেলে এগুলোর অপচয় করছি।’

স্ট্যাটাসে শাহরিয়ার আলম তার এক প্রবাসী বন্ধুর অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন। তিনি লেখেন, ‘আমার একজন পারিবারিক বন্ধু পশ্চিমা বিশ্বের একটি দেশে হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করছেন N95 মাস্ক ছাড়া!!! পরিস্থিতিটা সবাইকে উপলব্ধি করতে হবে।’

ঢাকা মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহকারী পরিচালক ড. আরমান হোসেন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘প্রথমত আমাদের জানা উচিত পিপিই কারা ব্যবহার করবেন। নিরাপত্তাকর্মী বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এটা ব্যবহার করার প্রয়োজন নাই। সাধারণ মানুষ বা ওনাদের ক্ষেত্রে হ্যান্ডগ্লাভস ও মাস্ক পরাটাই যথেষ্ট। ফুল পিপিই পরে সেটা নষ্ট করা ঠিক হচ্ছে না। আমাদের যেখানে এটার সংকট দেখা গেছে, সেহেতু এটা আমাদের সামগ্রিক সংকট বিবেচনায় নিয়ে এটা যাদের পরার দরকার তাদের এটা পরা উচিত।’

সংকট মোকাবিলায় সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে এই মেডিসিন বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘পিপিই নিয়ে সবার সহযোগিতা করা উচিত। কীভাবে এই সংকট (করোনা) মোকাবিলা করতে পারি সেটাই এখন বড় বিষয়।’

দেশে করোনা মোকাবিলায় ব্যবহৃত চিকিৎসা সামগ্রীর সংকটের মধ্যে গত বৃহস্পতিবার চীন বাংলাদেশের জন্য ১০ হাজার টেস্টিং কিট ও পিপিই এবং এক হাজার ইনফ্রারেড থার্মোমিটার পাঠিয়েছে। এটি চীনের বাংলাদেশে পাঠানো দ্বিতীয় চালান।

গতকাল শুক্রবার চীনা প্রতিষ্ঠান আলিবাবা ৩০ হাজার চিকিৎসা সামগ্রী পাঠিয়েছে বাংলাদেশে।

এর আগে বাংলাদেশও চীন যখন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিল, তখন বাংলাদেশও চীনকে বিভিন্ন সহায়ক সামগ্রী পাঠিয়েছিল। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে চীনকে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় শুভেচ্ছা স্মারক হিসেবে ১০ লাখ হাতমোজা, পাঁচ লাখ মাস্ক, এক লাখ ৫০ হাজার ক্যাপ, এক লাখ হ্যান্ড স্যানিটাইজার, ৫০ হাজার জুতার কাভার ও আট হাজার গাউন উপহার দেয় বাংলাদেশ।

৩১ ডিসেম্বরের পর প্রায় আড়াই মাসে চীনে ৮০ হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছিল করোনাভাইরাসে। তাদের মধ্যে মৃত্যু হয় ৩ হাজার ২৭৮ জনের। বর্তমানে চীন প্রায় করোনামুক্ত।

এদিকে বাংলাদেশে গত ৮ মার্চ প্রথম তিনজনের করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংবাদ আসে। গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত দেশে মোট ৪৮ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। আর মারা গেছেন পাঁচজন।

(ঢাকাটাইমস/২৮মার্চ/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :