এতো বড় শোক নজিরবিহীন…

শাহান সাহাবুদ্দিন
 | প্রকাশিত : ২২ জুলাই ২০২০, ১২:০১

জীবদ্দশায় তাঁর সংগে আমার একাধিক বার দেখা হয়েছে। বিশেষ করে আমার বাড়ি থেকে মাত্র ৭ কিলো. পশ্চিমে কাবা ঘরের বেশ আগে ভাওয়াল গড়ের ভেতর সাধুসন্ত পুরুষদের তপোবনের মতো শিল্পের চূড়ান্ত মেধা ও মনীষার সংযোগে যে নুহাশ পল্লী তৈরি হলো সেখানে দেখা হওয়ার ব্যাপারটি খুবই গুরুত্ত্বপূর্ণ ।

সেদিন শাওন মেম, চিত্রনায়ক রিয়াজ, অভিনেতা স্বাধীন খসরু, ডা. এজাজ, ফারুক, চ্যালেঞ্জার ও মাসুম আজিজ প্রমূখকে নিয়ে তিনি ‘উড়ে যায় বক পক্ষীর’ শ্যুটিং সেটে ছিলেন। আমার সংগে ছিলো ১০/ ১২ জন।

উনি নির্বিকার ভঙ্গিতে বেয়াদব প্রকৃতির এতোগুলো ছোঁকড়াকে দেখছিলেন। উনাকে আমরা কেউ সালাম দেইনি। আমরা নিশ্চিত ছিলাম, উনি সহস্র সালাম এমনিতেই পান। উনাকে বিরক্ত করা কাজের কথা না! আর তাছাড়া এসবের উনি ধার ধারেন না। তখন আমি এইচ এস সি পড়ুয়া বালক। আমার ভাবনা ছিলো এরকমঃ এই ভদ্রলোক তো ছফা ভাইয়ের ক্রিয়েশন। আমার ক্রিয়েশন আহমদ ছফা!

আহমদ ছফার সঙ্গে আমার একটা রুহানী যোগাযোগ থাকার সূত্রে ধরেই নিতে পারি রুহানী ক্লাশে উনি আমার ব্যাচমেট! সো, আমি কিছু বলি বা না বলি উনার উচিৎ ছিল আমার কোশলাদি জিজ্ঞেস করা। আমার ‘যাযাবর’ বিপ্লবের খোঁজ খবর নেয়া। আল্লাহর রাসূল মেহমানদের আপ্যায়নের ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ত্ব আরোপ করেছেন। এটা হুমায়ূন আহমেদের অজানা থাকার কথা নয়!

তারপর উনি যখন ইহধাম ছাড়লেন, যতোটুকু মনে পড়ে, টিভি সেটে উনার দেহ ত্যাগের খবর বিশেষ বুলেটিন হিসেবে প্রচার পাওয়ার সময় থেকে পরবর্তী ৬ দিন আমাদের বাড়িতে শোকের ছায়া ছিলো। এতো বড় শোকের পরিবেশ আমার দাদা দাদীমার মৃত্যু পরবর্তিতে নজির বিহীন ঘটনা।

আমার মা- বাবা, বোন ও ছোট্ট ভাগ্নি মা মনির চোখে ছিল মহত্ত্বম অশ্রুকাব্য। বাবা উনার জানাযার নামাজে গেলেন। আমি গেলাম না। আমার মধ্যে মৃত্যুচেতনা এতো প্রবল যে, হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে প্লানচেটে আত্মা আনা ছাড়াই অদৃশ্য ইপিসোডে কথা বলতে বলতে আমি নিজেই কোমায় চলে যাবার অবস্থা। মৃত হুমায়ূন আহমেদকে আমি দেখতে চাইনি।

আমি জেনেছি আমার কাছের অপর প্রিয়ভাজন কথাশিল্পী ও মনঃচিকিৎসক মোহিত কামাল ওখানে এসেছেন। হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটে মোহিত কামাল মহোদয়ের সঙ্গে অনেক কথা হয়েছে। বিশেষ করে সেন্টমার্টিনের সমুদ্র বিলাশ প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট, মোহিত কামালের তাতে যোগসূত্র, ভূমিকা, পরস্পর হার্দিকতা ইত্যাদি নিয়ে। তখন হুমায়ূন আহমেদ নিউইয়র্কে চিকিৎসাধীন।

কেন জানি মনে হয়েছে হুমায়ূন আহমেদ এর লাশের পাশে মোহিত কামালকে দেখলে আমার বুক নদীর আবেগি ঢেউকে আমি নিয়ন্ত্রণ করতে পারতাম না! শেষে বিনয়ের সংগে সংক্ষেপে বলি, জীবদ্দশায় হুমায়ূন আহমেদকে আমি যথেষ্টই ঈর্ষা করতাম!

হুমায়ূন আহমেদ নামের প্রজ্বলিত আলোকপিন্ডের তাপে আমি অন্ধ হয়ে যেতাম। এই অন্ধত্ব কোন অবস্থাতেই হোমারের অন্ধত্বকে মহিমান্বিত করেনা! পরম দয়াময়ের কাছে ক্ষণজন্মা মহান শিল্পীর আত্মার শান্তি প্রাথর্না করছি।

লেখক: কবি,লেখক ও সাংবাদিক

ঢাকাটাইমস/২২জুলাই/এসকেএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফেসবুক কর্নার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :