এবারও চামড়ার দাম বিপর্যয়, সতর্ক থাকায় লোকসান কম

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ০২ আগস্ট ২০২০, ১৩:৫৭| আপডেট : ০২ আগস্ট ২০২০, ১৪:১৩
অ- অ+

এবের দাম বিপর্যয় দেখল কোরবানির পশুর চামড়া। গতবারের চেয়ে প্রায় ৩০ শতাংশ কমিয়ে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। তার ওপর করোনার কারণে এবার অন্তত ১৫-২০ শতাংশ কম কোরবানি হবে বলে ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন মহল ধারণা করেছিল। সে হিসেবে গতবারের চেয়ে চামড়া কম আসার কথা। তারপরও দামের বিপর্যয় ঠেকানো যায়নি।

ঢাকায় গরুর চামড়া চামড়ায় কিছু দাম পাওয়া গেলেও ছাগলের চামড়া একরকম বিনা পয়সায় দিয়ে দিতে হয়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে ১৫০ থেকে ৫৫০ টাকায়। আর ছাগলের চামড়া ১০ টাকা।

সরকার এবার কোরবানির গরুর লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করেছিল প্রতি বর্গফুট ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, যা গতবার ছিল ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। দাম কমানো হয় ২৯ শতাংশ। আর ঢাকার বাইরে প্রতি বর্গফুট ২৮ থেকে ৩২ টাকা, যা গতবার ছিল ৩৫ থেকে ৪০ টাকা।

বড় আকারের গরুর চামড়া গড়ে ৩৫-৪০ বর্গফুট, মাঝারি আকারের ২৫-৩০ এবং ছোট আকারের গরুর চামড়া গড়ে ১৬-২০ বর্গফুটের হয়। সরকারের নির্ধারিত দামের হিসাবে বড় চামড়া ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা, মাঝারি চামড়া ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা ও ছোট চামড়ার দাম হয় ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা।

এবার চামড়ার দাম নিরধারণের সময় বাণিজ্যমন্ত্রী দাম বিপর্যয় ঠেকাতে চামড়া রপ্তানির ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু এবার আরও কমে গেছে চামড়ার দাম।

কোরবানিদাতারা কোরবানির পশুর চামড়ার টাকা মসজিদ, এতিমখানা ও গরিব-মিসকিনদের দিয়ে থাকেন। কেউ কেউ সরাসরি মসজিদ-এতিমখানায় চামড়া দিয়ে দেন। দাম বিপর্যয়ের কারণে মূলত এতিমখানা ও গরিব-মিসকিনরা ক্ষতিগ্রস্ত হলো।

গতবারের চামড়ার দাম বিপর্যয়ের কারণে এবার এলাকায় মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কম দেখা গেছে। অনেক মসজিদ-মাদ্রাসার লোকজন ভ্যান নিয়ে ঘুরে ঘুরে চামড়া সংগ্রহ করেন। তাদের কাছ থেকে এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী চামড়া নিয়ে গেছেন পাইকার কিংবা আড়তে।

রাজধানীর জিগাতলা ট্যানারি মোড়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে চামড়া এসে জমা হতে দেখা গেছে। জানা গেছে, এখানে আকারভেদে সর্বনিম্ন ১৫০ থেকে সরবোচ্চ ৫৫০ টাকায় বিক্রি হয় গরুর চামড়া। আর পোস্তার আড়তে সরবোচ্চ ৬০০ টাকায়। সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে অনেক কমে বিক্রি হচ্ছে কোরবানির পশুর চামড়া।

আড়তদাররা বলছেন, তারা নগদ অর্থের সংকটে আছেন। ট্যানারিগুলোর কাছে তাদের পাওনা টাকা পড়ে আছে। আর লবণসহ প্রক্রিয়াজাতকরণের খরচ বাদ দিলে কাঁচা চামড়ার যে দাম দেওয়া হচ্ছে তা ঠিক আছে বলে তাদের দাবি।

পুরান ঢাকার পোস্তায় সারি সারি পিকআপ ও ট্রাকে করে কোরবানির পশুর চামড়া আড়তে আসছে। দরদাম করে কিনছেন আড়তদারেরা। পরে আড়তের ভেতরে চামড়া লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। একজন আড়তদার জানান, প্রতি বর্গফুট চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতে ৮ টাকা খরচ হয় তাদের।

আড়তদারদের বকেয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, হাজারীবাগ থেকে সাভারের হেমায়েতপুরে ট্যানারি স্থানান্তরের পর থেকে ট্যানারির মালিকেরা অর্থসংকটে আছেন। সে জন্য আড়তদারদের পাওনা সময়মতো পরিশোধ করতে পারছেন না অনেকে।

সুলতান আহমেদ নামের এক ব্যবসায়ী একটি বড় পিক আপে ১৭০টি চামড়া নিয়ে যান প্রথমে জিগাতলায়। সেখানে দামে না পোষানোয় আনেন পোস্তায়। এখানে সামান্য কিছ বেশি পাওয়া চেড়ে দিয়েছেন। তবে তার কোনো লাভ থাকেনি বলে জানান তিনি।

গতবারের মতো এবার প্রান্তিক ব্যবসায়ীরা সর্বস্বান্ত হওয়ার মতো বড় লোকসানের মুখে পড়েননি। গতবারের অভিজ্ঞতার কারণে তারা এবার অনেক সতরকার সঙ্গে চামড়া কেনেন।

গত বছর ঈদুল আজহায় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঈদের দিন চামড়ার অস্থায়ী বাজারে আকারভেদে গরুর চামড়া ৩০০-১০০০ টাকায় কেনাবেচা হয়। সেদিনই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পড়তে থাকে চামড়ার দাম। একসময় এমন দাঁড়ায় ১০০০ টাকার চামড়া ১৫০ টাকায় বিক্রি করতে হয়।

অনেকে বিক্রি করতে না পেরে ক্ষোভে-কষ্টে কাঁচা চামড়া সড়কে ফেলে রেখে যায়। কোথাও কোথাও চামড়া বিক্রি না করে মাটিতে পুঁতে ফেলেন অনেকে।

(ঢাকাটাইমস/২আগস্ট/মোআ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি আজ সরাসরি সম্প্রচার
১৮ জুলাই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিরোধ দিবস
‘জুলাই বললে লাল হয়ে যায় স্মৃতি’: প্রেস সচিব শফিকুল আলম শেয়ার করলেন নিউটনের কবিতা দিয়ে
শহীদের রক্ত, বিপ্লব সমুন্নত হোক: আসিফ মাহমুদ
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা