বিচারবহির্ভূত হত্যা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়: শ ম রেজাউল

আইনের প্রশ্নে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।একই সঙ্গে মন্ত্রীর ভাষ্য, যখনই কোনো অপরাধীর বিচার করবেন না, তাদের প্রশ্রয় দেবেন, দায়মুক্তি দেবেন, তখন অপরাধীরা ভেবে নেয় অপরাধ করলে কিছুই হয় না, করে যাই।

শনিবার সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের সংস্কার কাজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।

বারের রাজনৈতিক প্রভাবের সমালোচনা করে সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী সমিতির সাবেক এই সম্পাদক বলেন, ‘বিচার বিভাগকে শক্তিশালী করতে হলে প্রয়োজন শক্তিশালী বার (আইনজীবীসমিতি)। বারের রাজনীতির প্রভাব কিছু কিছু সময় এতবেশি হয়ে যায়, তখন মনে হয় এটি কোনও রাজনৈতিক কার্যালয় হয়ে গেছে।আমাদের রাজনীতিকে রাজনীতির পরিসরে রাখা উচিত।বিচারিক অঙ্গনকে এমন কোনো পর্যায়ে নেয়া যাবে না, যেন একজন আইনজীবী আরেকজনের পক্ষে কথা বলতে পারবে না।’

সাম্প্রতিক সময়ে বারের এই অবনতি হয়েছে।আর এই অবনতির জন্য আইনজীবীদের দায়ী করেন শ ম রেজাউল হক। তিনি বলেন, ‘এই অবনতি সাম্প্রতিক সময়ে ঘটেছে।এই অবনতির জন্য আমরাই দায়ী।তাই সেই অবনতি থেকে আমাদের উত্তরণ অবশ্যই প্রয়োজন।না হলে আমাদের বিচার বিভাগ থাকবে না।’

বর্তমান সরকার বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে ভীষণ ভাবে বিশ্বাস করে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমান সরকার বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে ভীষণভাবে বিশ্বাস করে। নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনার পর অনেকেই বলেছেন বিচার হবে না।সেই দাম্ভিকতা কিন্তু চূর্ণ হয়েছে।তিন সেনা কর্মকর্তার মৃত্যুদণ্ডের রায় দেওয়া হয়েছে।বিডিআরকে নিয়ে অনেক শক্তি দেখানোর চেষ্টা হয়েছিল।কিন্তু তার বিচার হয়েছে।সে কারণেই অপরাধী যে দলেরই হোক তাদের আমরা প্রশ্রয় দেব না।’

আমার পক্ষে আসলে ঠিক আছে নইলে ঠিক নেই, বিচার বিভাগ নিয়ে এই প্রবণতা থেকে সব দলকে বেরিয়ে আসতে হবে- বলেন শ ম রেজাউল করিম।

সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী সমিতির সাবেক এই সম্পাদক বলেন, ‘বিচার বিভাগ যদি স্বাধীন ও শক্তিশালী না হয়, তাহলে সে দেশের গণতন্ত্র ও সুশাসন অর্থবহ হবে না।বিচার বিভাগকে কার্যকরভাবে স্বাধীন এবং শক্তিশালী করার ভেতর থেকেই আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত করতে হয়।আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত করতে না পারলে গণতন্ত্র থাকে না।গণতন্ত্র না থাকলে মানবাধিকার থাকে না।মানবাধিকার না থাকলে সভ্যতা থাকে না।আর সভ্যতা না থাকলে আমাদের যা কিছু অর্জন সব কিছু ধ্বংস হয়ে যাবে।’

বিচার না করে অপরাধীদের দায়মুক্তির বিষয় নিয়ে উদাহরণ দিতে গিয়ে শ ম রেজাউল করিম ১৯৭৫ সালে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার প্রসঙ্গটি তুলে আনেন।মন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করার পর একটি ইনডেমনিটি অর্ডার জারি করেছিলেন খন্দকার মোশতাক।তাতে দুটি পার্ট ছিল।যার একটিতে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কৃতকর্ম নিয়ে কোনও প্রশ্ন তোলা যাবে না।আরেকটিতে বলা হয়েছিল, ওই হত্যাকাণ্ডে যারা জড়িত তাদের কৃত কর্ম বৈধ নাকি অবৈধ তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যাবে না।কৌশলগতভাবে বলা হয়েছে, খুন এবং ক্ষমতাকে প্রশ্ন করা যাবে না।এটি কোনও আইন ছিলো না এবং এটি কার্যকর হয়নি।’

‘১৯৭৯ সালের ৪ এপ্রিল সংসদে একটি বিল আসলো।এরপর ৬ এপ্রিল এই বিলের ওপর আলোচনা হলো।কিন্তু সেই আইন করার বিষয়ে বিরোধীতা সত্ত্বেও ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স পাস করা হলো এবং ৯ এপ্রিল তৎকালীন রাষ্ট্রপতি সেটিতে সাক্ষর দিয়ে আইনে পরিণত করলেন।যার ফলাফল দাঁড়ালো বঙ্গবন্ধু হত্যা, জেলহত্যায় জড়িতদের আর বিচার করা যাবে না।এই আইন করার পর খুনিরা উচ্চস্বরে বললো, আমরা খুন করেছি পারলে কেউ গ্রেপ্তার করুক।এরপর দেশে একের পর এক হত্যাকাণ্ড ঘটলো।’

তাই পুলিশ বা র‌্যাবের দ্বারা যে দলেরই নেতাকর্মীরা ক্রসফায়ারের শিকার হোক না কেন, তাদের (আইনশৃঙ্খলাবাহিনী) জবাবদিহি করতে হবে- যোগ করেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী সমিতির সাবেক এই সম্পাদক।

(ঢাকাটাইমস/২২আগস্ট/এনআই/ইএস)