আশ্বাসের বৃত্তে তিন বছর পার

মৌনতায় ঘরে ফিরে যাওয়ার আকুতি রোহিঙ্গাদের

নজরুল ইসলাম, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৫ আগস্ট ২০২০, ২২:১৫

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশের কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের তিন বছর পূর্ণ হয়ে চতুর্থ বছরের প্রথম দিন গেল আজ। ২০১৮ ও ২০১৯ সালে বড় আকারে সমাবেশ আয়োজন, মসজিদে মসজিদে দোয়া, ব্যানার ফেস্টুন, টি শার্ট ইত্যাদি নিয়ে ব্যাপক আকারে দিনটি স্মরণ করলেও এবার করোনাভাইরাসের কারণে কোনো কর্মসূচি দেয়নি রোহিঙ্গা শরণার্থীরা।

শুধু প্রতীকী আয়োজন হিসেবে ‘ঘরে ফিরে যাওয়াই প্রধান রক্ষা’ হিসেবে কুতুপালং ক্যাম্পের সামনে মাস্ক রেখে দিনটি স্মরণ করে তারা।

জানা গেছে, এবার সমাবেশ করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের কাছে অনুমতি চেয়েছিল রোহিঙ্গারা। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে অনুমতি মেলেনি। রোহিঙ্গাদের সংগঠন আরকান রোহিঙ্গা সোসাইট ফর পিস অ্যান্ড হিউমিনিটির (এআরএসপিএস) ভাষ্য, এবার তাই নীরবেই প্রতিবাদ জানান তারা। মৌনতার মাধ্যমেই তারা বোঝাতে চেয়েছেন ‘ঘরে ফিরে যাওয়াই প্রধান রক্ষা’।

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বাংলাদেশে তিন বছরের এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে ঢাকার পক্ষ থেকে দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালানোর পরও রোহিঙ্গা সমস্যার কোনো সমাধান আসেনি। এই সময়ে দুবার প্রত্যাবাসনের খুব কাছাকাছি গিয়েও মিয়ানমারের আন্তরিকতা্র অভাবে একজন রোহিঙ্গাকেও প্রত্যাবর্তন করা সম্ভব হয়নি।

তিন বছর আগে ঠিক এই দিনে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও উগ্র বৌদ্ধদের হত্যা-ধর্ষণ, জ্বালাও-পোড়াও থেকে বাঁচতে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ছুটে আসতে থাকে রোহিঙ্গারা। সেসময় সীমান্ত ও হৃদয় দুটোই খুলে দেয় বাংলাদেশ। পরের কয়েক মাসে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এর আগে থেকে বিভিন্ন সময়ে আশ্রয় নিয়ে আছে আরও প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা।

সব মিলিয়ে সাড়ে ১১ লাখ রোহিঙ্গার অবস্থান বাংলাদেশের জন্য বাড়তি একটি চাপে পরিণত হয়। এই চাপ নিয়ে সীমিত সম্পদের দেশটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে এই সমস্যা সমাধানে দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এতে করে পশ্চিমা দেশগুলো থেকে শুরু করে মিয়ানমারকে নিয়ন্ত্রণকারী চীন, প্রতিবেশী বন্ধুরাষ্ট্র ভারত, আসিয়ান রাষ্ট্র, ওআইসি রাষ্ট্রসহ সবাই বাংলাদেশকে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আশ্বস্ত করে আসছে। সেই আশ্বাসের বৃত্তেই এখনো ঘুরপাক খাচ্ছে রোহিঙ্গা সমস্যা।

তবে এই সময়ে রোহিঙ্গাদের জন্য একমাত্র আশা জাগানোর ঘটনা যেটি ঘটেছে, তা হলো মিয়ানমারে থেকে যাওয়া অবশিষ্ট রোহিঙ্গাদের ওপর সম্ভাব্য গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ থেকে তাদের সুরক্ষা দিতে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) নির্দেশ।

সবশেষ গত বছরের শেষের দিকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে চীনের বিভিন্ন উদ্যোগ আশার আলো দেখা দিলেও তাতে কোনো ফল মেলেনি। এরই মধ্যে চলতি বছরের শুরুর দিকে প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে সরকারের পক্ষ থেকে চীনের সঙ্গে আরও জোরালো কূটনৈতিক তৎপরতার বাড়ানোর সংবাদ পাওয়া যায়। কিন্তু সেই প্রচেষ্টায় হানা দেয় চীনের উহানে শুরু হওয়া নতুন মহামারি করোনাভাইরাস।

গত মার্চের প্রথম দিকে দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের পর বাংলাদেশও করোনা ঠেকাতে মনোযোগী হয়ে পড়ে। এতে প্রায় চার মাসের বেশি সময় ভাটা পড়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যু।

করোনাভাইরাসে সৃষ্ট পরিস্থিতির জন্য রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর প্রচেষ্টার গতি ধীর হয়ে গেছে বলে স্বীকার করেছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। গত ৫ জুলাই আওয়ামী লীগের গবেষণা উইং সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) আয়োজিত 'লেটস টক' অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন একথা স্বীকার করেন। এ পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার পর এ বিষয় নিয়ে আলোচনায় গতি আসবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।

করোনা পরিস্থিতির শুরু থেকে ভারতকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে খুব একটা কথা বলতে শোনা যায়নি। তবে মাসখানেক আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনকে লেখা এক চিঠিতে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর জানান, দ্রুত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে ভারত। সবশেষ গত দিনসাতেক আগে ঢাকা সফরে এসে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশের পাশে থাকার আশ্বাস দেন।

করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও প্রত্যাবাসনে লক্ষ্যে কাজ থেমে ছিল না জানিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘করোনাভাইরাসের সময় প্রায় ৬ লাখ রোহিঙ্গার তালিকা মিয়ানমারের কাছে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে যাচাই-বাছাই করে তারা (মিয়ানমার) ৩০ হাজার লোকের তালিকা পাঠিয়েছে। এসব প্রত্যাবাসনের জন্যই করা হচ্ছে, কাজ চলছে।’

সোমবার পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আয়োজিত এক ওয়েবিনারে জানিয়েছেন, চলতি বর্ষা মৌসুম শেষে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের সিদ্ধান্তের কথা ভাবছে সরকার।

মূলত করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের প্রথম দিকে সাগর থেকে উদ্ধার করা ৩০৬ রোহিঙ্গাকে নোয়াখালীর ভাসানচরে পাঠানো হয়। তারা সেখানে ভালো আছেন। তাদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে রোহিঙ্গাদের প্রথম দলকে ভাসানচরে পাঠাতে চায় সরকার।

অনুষ্ঠানে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রসঙ্গে মাসুদ বিন মোমেন বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের আত্তীকরণের সম্ভাবনাকে নাকচ করে দিয়ে বলেছেন, ‘বাংলাদেশ সরকারের এ ধরনের কোনো পরিকল্পনা নেই।’

এদিকে গতকাল এক ভিডিও কনফারেন্সে মতবিনিময়কালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানান, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে সরকার কূটনীতিক প্রচেষ্টা জোরদার করেছে।

সাত বছর পররাষ্ট্র সচিবের দায়িত্ব পালন করা মো. শহীদুল হক প্রথম থেকে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে কাজ করেছেন। এই সমস্যা কীভাবে সমাধান করা যেতে পারে- জানতে চাইলে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে মিয়ানমার কখনও আন্তরিক ছিল না। দায়বদ্ধতা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার মাধ্যমে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। এজন্য দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও বহুপক্ষীয় ব্যবস্থার অধীনে জোর প্রচেষ্টা চালাতে হবে।’

জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে শরণার্থীদের দুই-তৃতীয়াংশের উৎস পাঁচটি দেশ—সিরিয়া, ভেনেজুয়েলা, আফগানিস্তান, দক্ষিণ সুদান ও মিয়ানমার।

রাখাইনে বসবাসকারী রোহিঙ্গা মুসলমানদের বাঙালি আখ্যা দিয়ে জাতিগত নির্মূলের অভিযোগ আছে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে।

(ঢাকাটাইমস/২৫আগস্ট/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

উপজেলা নির্বাচন: প্রথম ধাপে দেড় লক্ষাধিক আনসার-ভিডিপি সদস্য মোতায়েন

১ কোটি পরিবারের জন্য টিসিবির পণ্য বিক্রি শুরু মঙ্গলবার

সুন্দরবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে আছে: মন্ত্রিপরিষদ সচিব

‘গোল্ডেন রাইস-বিটি বেগুন বাণিজ্যের জন্যই করা হয়েছে’

ভোটের আগে-পরে ১৪ দিন বৈধ আগ্নেয়াস্ত্র বহন ও প্রদর্শনে নিষেধাজ্ঞা

দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে নিবিড়ভাবে কাজ করার আহ্বান স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধির বিষয়ে আরও আলোচনা হবে, সংসদে জনপ্রশাসনমন্ত্রী

বুধবার ১৪১ উপজেলায় সাধারণ ছুটি

সপ্তাহে সাত দিন সরাসরি জেদ্দায় ফ্লাইট যাবে ইউএস-বাংলার, যাত্রা শুরু ১ আগস্ট

একদিনেই ৭ ডিগ্রি কমেছে ঢাকার তাপমাত্রা

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :