কফিনে মোড়া সমাজের চিন্তা, আপনার পরিবারে ঘটলে কি করবেন?

আমাদের সমাজব্যবস্থা আজও কফিনে মোড়া, বেরিয়ে আসতে পারেনি অন্ধকার আচ্ছন্ন থেকে। আমাদের চিন্তা-চেতনা এখনও ডাস্টবিনের তলায়। জাতি আজ সচেতন, চিন্তা-চেতনায় সুদূরপ্রসারী। আদৌ কি তাই?
আজকেও ধর্ষণের ইস্যু আলোচিত, কিন্তু সেই ইস্যুতে না গিয়ে সমাজে আরও একটি বিষয়ে হরহামেশাই খাটো করা হয়। খাটো চোখে দেখা হয়। আর তা হচ্ছে ডিভোর্সি নারীদের, কিন্তু কেন? এখানে কি কৃষ্ণ করলে লীলা, আমরা করলে দোষ- এমনটিই ভেবে ফ্রিজিং হয়ে আছে সমাজ? পুরুষ ধুয়ে ফেললে পবিত্র, আর মেয়ে চরিত্রহীন? কেন এমন ভাবা হয় এই সমাজে, কেন দোষটা নারীদের ওপরই চাপানো হয় বারবার? ডিভোর্সি মেয়েদের সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয় পরিচয় দিতে গিয়ে। আসলে আমাদের সমাজ-মননটাই দূষিত। তাই এই সমস্যা।
ভাবখানা এমন, নারীদের যেন জন্মই হয়েছে সমাজের চোখে নিচু হয়ে থাকার জন্য। আর ডিভোর্সি নারী মানেই তার জীবন ব্যর্থ হয়ে গেছে। এটি যেন তারই দোষ। যেন এক বিরাট পার্সোনাল ডিসক্রেডিট। যে মেয়ের সংসার ভেঙে গেছে, কারণ যা-ই হোক, অ্যাট দ্য ফার্স্ট চান্স, লোকেরা মনে করে, মেয়েটা নিশ্চয়ই খারাপ। যেন সে মোটেও সংসারী নয়। মাত্রাতিরিক্ত ইনটলারেন্ট ইত্যাদি।
প্রতিটি মেয়েই কি তাই? একজনও কি ভালো নেই? তাহলে এমন ভাবনায় কেন দেখছেন? রাস্তা চলতে গেলে দেখেছি ডিভোর্সি মেয়েকে বাঁকা চোখে দেখছেন, আত্মীয়স্বজনরাও আড় চোখে দেখছেন। একশ্রেণির লোকও আছেন সমাজে যার ঘরেই হাজারটা অসংগতি, আবার ঘুষখোর, সুদখোরও আছে, নিজের পাছায় গন্ধ না শুকে অন্যের মেয়ের দোষটা খুঁজে বেড়ান।
এক প্রকার শকুনও আছে আমাদের সমাজে যারা আশপাশে ডিভোর্সি মেয়ে পেলে সুযোগসন্ধানী হয়ে ওঠে। আমাদের সমাজের চিন্তা-চেতনা কেন এত বিকারগ্রস্ত? এমনও দেখেছি একটি ডিভোর্সি মেয়ের ভালো বিয়ে হতে গেলেও সমাজের লোকদের চুলকানি, বিখাউজ, পাঁচড়া সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো আচরে পড়ে। ছেলের বাড়িতে কু-পরামর্শ দিবে। না হলে তাদের পরিবারকে খোঁচা দিয়ে কথা বলতে শুরু করবে। আমাদের সমাজের চিন্তাগুলো কেন এমন কফিনে মোড়ানো? একবার কি ভেবেছেন ডিভোর্সি মেয়েটি যদি আপনার মেয়ে বা বোন হতো তাহলে কি আপনার চিন্তা কফিনে বন্ধ করে রাখতেন? কখনোই না।
আপনার পরিবারে এমন ঘটনা ঘটলে কি করতেন একবার ভেবে দেখুন। চাইতেন মেয়েটা জীবন সুখের হোক, সারাটি জীবন হাসি আনন্দে কাটুক। তাহলে অন্যের ক্ষেত্রে কেন এত চুলকানি আসে আপনাদের? অন্যের জায়গায় নিজেকে নিয়ে চিন্তা করুন, তাহলেই এই সমাজ কুসংস্কারের কফিন থেকে বেরিয়ে আলোর মুখ দেখবে। আমরা চাই, সুস্থ, স্বাভাবিক, সুন্দর ও সুখী মানবজীবন। চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স সমাজ। সুস্থ সমাজ মানেই সহজ ডিভোর্সের সুযোগ ও ডিভোর্সিদের বিয়ের সুব্যবস্থা।
যে সমাজ মানুষের স্বাভাবিক প্রকৃতিসম্মত জীবনযাপনে সহায়ক নয় তা অসুস্থ ও ভারসাম্যহীন। যেমন আমাদের এখনকার এই বাংলাদেশ সমাজ। এই অসুস্থ সমাজের অচলায়তন ভেঙে নতুন এক ভারসাম্যপূর্ণ সামাজিক কাঠামো গড়ে তোলা জরুরি। আমাকে, আপনাকে, প্রত্যেক বিবেকবান মানুষকে হতে হবে সমাজ পরিবর্তনের এই কাজে আন্তরিক, সোচ্চার ও সক্রিয়। আসুন সবাই মিলে কুসংস্কার মুক্ত সমাজ গড়ে তুলি।
পরিশেষে ডিভোর্সে হীনম্মন্যতায় ভোগা মেয়েরা আপনারাও শক্ত হোন। আপনি ডিভোর্সি অসুবিধা কী? হীনম্মন্য হয়ে পড়ে থাকার কিছু নাই। স্বাবলম্বী হোন। আত্মবিশ্বাসী হোন। কোনো অবস্থাতেই আত্মসম্মান ও ব্যক্তিত্ব বিসর্জন দিবেন না। আপনার জীবন ব্যর্থ হয়ে যায়নি। বিয়ে ভেঙে গেছে তারা বেহেশতে যেতে পারবে না, এমন তো নয়। নিজের অবস্থান থেকে সবার চিন্তা-চেতনায় পরিবর্তন আনুন, সমাজব্যবস্থাকে কুসংস্কারে মোড়ানো কফিনের অন্ধকার থেকে আলোর পথ দেখান। সবার জীবন সুখের হোক, পরম শান্তিময় হোক।
লেখক: সাংবাদিক
ঢাকাটাইমস/৮অক্টোবর/এসকেএস

মন্তব্য করুন