‘খুঁতখুঁতে স্বভাব’ এক ধরনের মানসিক রোগ

বারবার হাত ধোওয়া, ঘনঘন ঘর পরিষ্কার এবং আলমারি গোছানো, ইত্যাদি উদ্বেগজনিত ব্যাধির লক্ষণ হতে পারে, যাকে চিকিৎসার ভাষায় বলা হয় অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার বা ওসিডি। ওসিডি এক ধরনের মানসিক সমস্যা। সাধারণত শুচিবায়ু বলা হয়ে থাকে। স্বভাবসুলভভাবে মানসিক সমস্যার নাম শুনেই নাক সিটকানোর কিছু নেই। ওসিডিতে আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে এক ধরনের অবসেশন বা আচ্ছন্নতা কাজ করে। সে বুঝতে পারে না, সে যা করছে তা কেন করছে। শুধু জানে যে তাকে করতে হবে। একটা ঘোরের মধ্যে সে তার কাজকর্ম পরিচালনা করে।
এই ব্যাধিতে আক্রান্ত ব্যক্তিরা যুক্তিহীন অবসেশন এবং কম্পালসনের এক চক্রের মধ্যে আটকে পড়েন। এর ফলে অবঞ্ছিত চিন্তার সৃষ্টি হয় যা সেই ব্যক্তির মানসিক যন্ত্রণার কারণ হতে পারে। ওসিডি-র লক্ষণগুলি ধীরে ধীরে প্রকাশিত হয়, তবে প্রাথমিক পর্যায়ে সঠিক ব্যবস্থা নিলে সহজেই এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
অতিরিক্ত হাত ধোওয়া
হাত পরিষ্কার রাখা একটি স্বাস্থ্যকর অভ্যাস। বিশেষত, এই মহামারির সময় বারবার হাত ধোওয়া আমাদের স্বাস্থ্যের পক্ষেই ভাল। এটি ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের ঝুঁকি কমায়। তবে জীবাণু এবং ব্যাকটেরিয়ার ভয়ে অতিরিক্ত হাত ধোওয়া ওসিডি-র লক্ষণ হতে পারে। আপনার যদি দিনে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি হাত ধোওয়ার বা স্যানিটাইজার ব্যবহারের অভ্যাস থাকে, তবে তা উদ্বেগজনক।
সবকিছু পুনরায় চেক করা
দরজা, গ্যাসের নব এবং অন্য সবকিছু বারবার চেক করা এই ব্যাধির লক্ষণ হতে পারে। ওসিডি-তে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ৩-৪ ঘণ্টা অন্তর সবকিছু পুনরায় চেক করা একটি সাধারণ আচরণ।
নিউমেরিকাল প্যাটার্ন অনুযায়ী চলা
এই ব্যক্তিরা কিছু নিউমেরিকাল প্যাটার্ন অনুযায়ী ক্রিয়াকলাপ সম্পাদন করে এবং বেশিরভাগ সময় তারা এটি অনুসরণ করে, যেমন - সিঁড়ি বেয়ে ওঠার সময় গুনতে থাকা বা নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট ক্রিয়াকলাপ করা। এই আচরণগুলো বেশিরভাগই কুসংস্কার ভিত্তিক। তারা আশঙ্কা করে যে, তারা যদি এই কাজটি না করে তবে খারাপ কিছু ঘটতে পারে।
নির্দিষ্ট প্যাটার্নে সবকিছু করে
ওসিডি-তে আক্রান্ত ব্যক্তিরা একটি নির্দিষ্ট প্যাটার্নে সবকিছু করে, যেমন - ডেস্কের বামদিকে ফোন এবং ডানদিকে পানির বোতল রাখা, ইত্যাদি। তারা তাদের চারপাশের জিনিসপত্রের স্থান নির্ধারণ এবং সেগুলির পরিবর্তনের বিষয়ে তারা খুব খুঁতখুঁতে।
পারফেকশনিস্ট
ওসিডি-তে আক্রান্ত বেশিরভাগ মানুষই সবকিছুতে নিখুঁত থাকতে চান। তারা তাদের লুক বা শরীরের কোনও নির্দিষ্ট অংশ সম্পর্কে সর্বাধিক সচেতন হন
কোনো অসুস্থতাই ব্যক্তির সাহস ও সুস্থ হয়ে ওঠার বাসনার চেয়ে কখনোই বড় হতে পারে না। বলা হয়, নিজেকে আর নিজের শত্রুকে চেনা থাকলে একটিও না হেরে একশটি যুদ্ধ জেতা যায়। যুদ্ধটা যখন নিজের সাথে, তখন নিশ্চয় এই যুদ্ধে জয় আওতার বাইরে নয়। শরীরের সাথে সমান গুরুত্ব পাক প্রতিটি মানুষের মন। শারীরিক, মানসিক, সামাজিক, সামগ্রিক সুস্থ্যতা প্রত্যেকের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করুক।
(ঢাকাটাইমস/২০ অক্টোবর/আরজেড/এজেড)

মন্তব্য করুন