বোয়ালমারীতে ঐতিহ্যবাহী ‘ঝাপান খেলা’

বোয়ালমারী (ফরিদপুর) প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ২৩ অক্টোবর ২০২০, ১৯:২১
অ- অ+

ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে হয়ে গেল চিরায়ত বাংলার ঐতিহ্যবাহী বিষধর সাপের ‘ঝাপান খেলা’। উপজেলার ঘোষপুর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর বাজারে প্রতিযোগিতামূলক ‘ঝাপান খেলা’র আয়োজন করে স্থানীয় যুব সমাজ।

সাপের নানা কসরত ‘ঝাপান খেলা’কে ঘিরে এলাকাটিতে তৈরি হয় উৎসবের আমেজ। বসে গ্রামীণ মেলা। দেশের দূর-দূরান্ত থেকে আসা ছয়টি সাপুড়ে দলের প্রায় শতাধিক সাপ নিয়ে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি চলে প্রতিযোগিতামূলক ঝাপান উৎসব। খোলা মাঠে সাপের জন্য তৈরি করা হয় উঁচু মঞ্চ। প্রতিটি দল নিজেকে সেরা প্রমাণ করতে উঁচু মঞ্চে তাদের সাপ ছেড়ে দিয়ে খেলা প্রদর্শন করে থাকে। আলাদা আলাদা সাপ দিয়ে প্রদর্শন করে তাদের আকর্ষণীয় কসরত। বিষধর সাপের এই দুর্লভ খেলা দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন দর্শনার্থীরা। মানুষকে এ আনন্দ দেওয়াটাই যেন সাপুড়েদের মূল উদ্দেশ্যে।

বাদ্যের তালে তালে দলপতি নিজে নানা অঙ্গভঙ্গিমার সাথে ফনা তুলে বিষধর সাপকেও নাচাতে থাকে। কখন সাপকে অঙ্গে জড়িয়ে কখনও মাথায় মুকুট বানিয়ে-সাপকে নাচানোই এ খেলার প্রধান আকর্ষণ। শুধু সাপ খেলাই নয়, একই সাথে চলে গুনিন দলের মন্ত্রতন্ত্র। সাপুড়ে দলই দেশ সেরা তান্ত্রিকদের সাথে নিয়ে আসে যাতে নিজেদের সাপের উপর প্রতিপক্ষের তান্ত্রিকদের যাদু-টুনা কাজ না করে। চলে মনসা দেবীর বন্দনা। গীত, মন্ত্র-তন্ত্র আর নানা অঙ্গভঙ্গিমা দিয়ে মানুষের মন জয়করার আপ্রাণ চেষ্টা করে চলে সাপুড়ে দল।

ঝাপান খেলা দেখতে আসা একজন দর্শক জানান, গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য যে এত মনোমুগ্ধকর- তা ‘ঝাপান খেলা’ না দেখলে বুঝতাম না।

ঝিনাইদহ থেকে আগত সাপুড়ে দলের প্রধান মানোয়ার হেসেন জানান, দেশের বিভিন্ন স্থানে ১৩ বছর ধরে সাপের ‘ঝাপান খেলা’ প্রদর্শন করে আসছি। আমরা মানুষকে খেলা দেখিয়ে আনন্দ দেই এবং এর থেকে আনন্দ পাই। এজন্যই দেশের বিভিন্ন স্থানে গিয়ে এ খেলা দেখাই, তবে সাপের খেলা দেখানোই আমার মূল পেশা নয়।

বাহাদুরপুরের ফেলু সাপুড়িয়া জানান, অতীতের মত এখন আর সাপের এই ঝাপান খেলা হয় না। আমাদের পূর্বপুরুষরা সাপের খেলা দেখিয়ে জীবিকা নির্ভর করলেও আয়োজকদের অভাবে অনেকেই এখন আর এ পেশায় নেই। সাপকে বাঁচিয়ে রাখতে প্রচুর অর্থ খরচ হয়। সঠিক পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে ভবিষ্যতে খেলাটি হারিয়ে যাবে। নতুন করে আমাদের বংশধররা এ পেশায় আসতে চায় না।

ঘোষপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি এসএম ফারুক হোসেন বলেন, চিরায়ত বাংলার ঐহিত্যবাহী এ খেলা দিন-দিন হারিয়ে যেতে বসেছে। তাই হারিয়ে যাওয়া এ ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে আর এলাকার মানুষকে নির্মল আনন্দ দিতেই এ আয়োজন করা হয়েছে।

প্রতিযোগিতামূলক বিষধর সাপের এ খেলায় পাঁচটি দলকে পেছনে ফেলে প্রথম হয় ঝিনাইদহ জেলার সাপুড়ে মানোয়ার হোসেন, দ্বিতীয় হয়েছে বশিরের দল আর তৃতীয় হয়েছে মধুখালী উপজেলার স্বপন বিশ্বাস।

(ঢাকাটাইমস/২৩অক্টোবর/এলএ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ সফরে আসছেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী
পাংশায় আত্মহত্যার প্ররোচনা মামলার এজাহারনামীয় আসামি গ্রেপ্তার
শেখ হাসিনা পালানোর আগে স্বজনদেরকে খুদে বার্তা পাঠিয়েছিল: আলাল
মাহমুদুর রহমানের মায়ের ইন্তেকালে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের শোক প্রকাশ
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা