করোনা: মধ্যরাতের ঘাতক

আমিনুল ইসলাম
  প্রকাশিত : ২৫ নভেম্বর ২০২০, ১৫:০৯
অ- অ+

করোনার একদম শুরুর দিকেই দেশের বাইরের এক হাসপাতালে ডাক্তাররা হতভম্ব হয়ে দেখলেন রোগীদের বেশিরভাগই মারা যাচ্ছে রাতের বেলায় বিশেষ করে মধ্যরাত থেকে শেষ রাতের মধ্যে। এতে করে তারা তাদের ট্রিটমেন্ট প্রটোকলে পরিবর্তন নিয়ে আসে দিনের চেয়ে রাতের বেলা অধিক ঘন ঘন অক্সিজেনের মাত্রা মনিটরিংয়ের ওপর জোর দিয়ে।

আমরা যখন সাপ দেখি তখন যেমন বিস্ফোরিত নেত্রে চোখ দুটি বড় বড় করে দৌড় দেই, আমাদের হার্টরেট, শ্বাস-প্রশ্বাস তখন হুট করে বেড়ে যায়। আবার যখন কোনো মধুর সংগীত শুনি তখন চোখ দুটি যেন এমনিতেই বুঝে আসে, হৃদ ও শ্বাসের গতি থাকে কমতির দিকে। এই স্বাভাবিক শরীর বৃত্তের কোনোটাই কিন্তু আমরা ইচ্ছে করে করি না। পরিস্থিতিভেদে আমাদের স্বয়ংক্রিয় নার্ভাস সিস্টেম এটা আমাদের অজান্তেই শরীরকে দিয়ে করিয়ে নেয়। এই স্বয়ংক্রিয় ব্যাপারটাই ঘটে ঘুমন্ত কোভিড রোগীদের বেলায়। কেউ যখন ঘুমায় উদাহরণস্বরূপ তখন কারও স্বাভাবিক হার্টবিট যদি থাকে ৮০ সেটা নেমে আসতে পারে ৬৫ তে, স্বাভাবিক শ্বাস রেট ২০ থেকে নেমে আসতে পারে ১৫ তে। যদি কারও অটোনমিক নার্ভাস সিস্টেমও করোনায় আক্রান্ত হয় তবে এ কমা না কমাটা হতে পারে অস্বাভাবিক। ধরে নেই রোগীর অটোনমিক নার্ভাস সিস্টেম ঠিক আছে এবং স্বাভাবিক মানুষের মতোই তার হার্ট রেট ও শ্বাসরেট কমেছে। যে রোগীদের অক্সিজেনের মাত্রা অলরেডি কম শ্বাসের গতি কমার কারণে তার হাইপোক্সিয়া আরও বেড়ে যায়। যখন কারও অক্সিজেন কমে যায় তখন দেহের কেমিক্যাল তথা chemoreceptor উদ্দীপিত হয়ে শ্বাসের গতি বাড়ানোর জন্য ব্রেইনে সিগনাল পাঠায়। এভাবে দেহ অক্সিজেন আবার আগের অবস্থায় নেয়ার চেষ্টা করে।

কিন্তু ঘুমের যেকোনো অবস্থাতেই এই প্রতিক্রিয়া তথা অক্সিজেন কমে যাওয়ার প্রতি রেসপন্সটুকু হয় দুর্বল। এজন্য কোভিড রোগীদের ঘুমের মধ্যে অক্সিজেন কমে যাওয়ার যেমন ঝুঁকি থাকে তেমনি কমে গেলে সেটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় আবার বাড়ার কোনো উপায় থাকে না। তাই রাতের বেলা ঘুমের মধ্যে অক্সিজেন কমে হঠাৎ মৃত্যুর সম্ভাবনা দিনের চেয়ে বেশি আশঙ্কা থাকে। তাই কোভিড রোগীদেরকে দিনের চেয়ে রাতের বেলা ঘন ঘন অক্সিজেন চেক করার নির্দেশাবলীও আছে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে। আর ঘুমন্ত রোগীর হাইপোক্সিয়া পাওয়া গেলে সর্বপ্রথম তাকে জাগিয়ে দিয়ে তারপর অক্সিজেনসহ অন্য ব্যবস্থাপনার কথাও বলেন বিশেষজ্ঞরা।

উদাহরণস্বরূপ বলি, রাজস্থান সরকার বিশেষজ্ঞদের উদ্ধৃতি দিয়ে নির্দেশাবলী দিয়েছে ঘুমন্ত কোভিড রোগীর অক্সিজেন কমে গেলে তাকে যাতে জাগিয়ে দেয়া হয়, তাদের যাতে রাতের বেলা দিনের চেয়ে ফ্রিকুয়েন্টলি সেচুরেশন দেখা হয়।

একই উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে, হাসপাতালে ভর্তি বা ভর্তিযোগ্য কোভিড রোগীদের যেন ভরপেট খাবার, কথাবার্তায় যোগ দেয়া, টয়লেটে হেঁটে যাওয়া থেকে বিরত রাখা হয়। কেননা এই সামান্য পরিশ্রমেই বিশেষ করে রাতের বেলা তাদের হাইপোক্সিয়া হতে পারে।

কোভিড রোগীদের শ্বসন-পদ্ধতি (respiratory mechanics), অটোনমিক নার্ভাস ফাংশন স্বাভাবিকের মতো নয়, তাই অক্সিজেন কম বা হুটহাট কমে যায় এমন কোভিড রোগীদের lung attack কে heart attack এর রোগীদের অনুরূপ exertion ও stress মুক্ত রাখতে হবে।

লেখক: চিকিৎসক, এফসিপিএস (মেডিসিন), এমডি (চেস্ট ডিজিস), বিএসএমএমইউ

ঢাকাটাইমস/২৫নভেম্বর/এসকেএস

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
আশুরাকে ঘিরে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে: ডিএমপি ভারপ্রাপ্ত কমিশনার সারওয়ার
নির্বাচিত সরকার ছাড়া দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে না: লায়ন ফারুক
ডিএসইসির ফ্যামিলি ডে ৬ জুলাই
কুমিল্লায় একই পরিবারের ৩ জনকে কুপিয়ে হত্যা
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা