পাউবো’র জায়গা দখল করে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য

খাইরুল ইসলাম বাসিদ, পাবনা
| আপডেট : ০৮ ডিসেম্বর ২০২০, ১৩:৩২ | প্রকাশিত : ০৮ ডিসেম্বর ২০২০, ১৩:০০

পাবনার বেড়া উপজেলার নাকলিয়া বেড়িবাঁধের প্রায় ৩০০ ফুট জায়গা অবৈধভাবে দখল করে কোটি টাকার বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের বিরুদ্ধে। স্থানীয়দের অভিযোগ, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও উপজেলা প্রশাসনের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে এই অনৈতিক কর্মকাণ্ড চলছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার হাটুরিয়া-নাকালিয়া ইউনিয়নের নাকালিয়া বাজারের পাশেই বেড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ। সেখানে নদী পারাপারের জন্য বাঁধানো হয়েছে ঘাট। বাঁধের পাড় ঘেঁষেই স্থানীয় প্রভাবশালীরা গড়ে তুলেছেন মেঝেপাকা টিনশেডের বড় বড় দোকান ও গুদামঘর। সরকারের পানি উন্নয়ন বোর্ডের এই জায়গা অবৈধভাবে প্রভাব খাটিয়ে দখল নিয়ে গড়ে তোলা ঘর মোটা টাকা জামানতের বিনিময়ে ভাড়া দেয়া হয়েছে। দোকান ও গুদাম ঘর ভাড়াটিয়ার কাছ থেকে প্রায় কোটি টাকা জামানত হিসেবে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। প্রতিমাসে নেয়া হচ্ছে ইচ্ছেমাফিক ঘর ভাড়া। তাদের ক্ষমতা ও প্রভাবে স্থানীয় কেউ কিছু বলার সাহস পান না।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পাবনার মোল্লা কফিল ও তার সহোদর মিলে নিজেদের জমির পাশেই পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমির অবৈধ দখল নিয়ে প্রকাশ্যে কোটি টাকার রমরমা বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কেউ কোনো প্রতিবাদ করলেই তাকে দোকান ঘর থেকে উচ্ছেদ করে আর্থিকভাবে ক্ষতি করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা ও ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘নাকালিয়া বাজারটি অনেক বড়। এখানে মাঝে মধ্যেই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। কিন্তু দখলদাররা এমনভাবে ঘর তুলেছে, ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢুকে নদী থেকে পানি নিতে পারে না।’

তারা আরও বলেন, ‘এ বিষয়ে বেশ কয়েকবার আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ড ও ইউএনও বরাবর আবেদন করেছি। বেশ কয়েকবার কয়েকটি টিম এলেও তারা ঘুরে চলে যায়। কিন্তু কোনো কাজ হয় না।’

স্থানীয় ইউপি সদস্য সিল্টু জানান, এ সমস্যা নিরসনে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। কিন্তু যে কমিটি করা হয়েছে তাদের তিনজনই দখলদার হওয়ায় কমিটিটি কোনো কাজে আসছে না।

আবু সাঈদ নামে এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বলেন, ‘জামানত দিয়ে ঘর ভাড়া নিয়েছিলাম। কিন্তু আমাকে জোর করে দোকান থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। কোনো কথা বলা যাবে না, বললেই আমাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়া হয়েছে।’

এটা রহস্যজনক ছাড়া আর কি হতে পারে এমন মন্তব্য করে তিনি অভিযোগ করেন, সরকারি জায়গা দখল করে, অথচ সরকারি লোকজন এসে ঘুরে গেলেও দখল উচ্ছেদ বা তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নেওয়া হয় না।

তবে অভিযুক্ত মোল্লা কফিল উদ্দিন বলেন, ‘নিজের জমির সামনে সরকারি জায়গা অন্য কেউ ব্যবহার করবে, এটা মেনে নেয়া যায় না। পাউবোর কাছে লিজ চেয়ে পাইনি। তাই দখল করে দোকানঘর নির্মাণ করেছি। যেহেতু নির্মাণ করতে টাকা খরচ হয়েছে, সেহেতু দোকানঘর ভাড়াটিয়াদের কাছ থেকে জামানতসহ ভাড়ার চুক্তিতে ঘর দেয়া হয়েছে।’

আর বেড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল হামিদ বলেন, অবৈধভাবে দখল উচ্ছেদে থানায় মামলা করেছি। ডিসি অফিসে আবেদন করেছি। কিন্তু তাদের উচ্ছেদ করতে পারছি না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা রিপোর্ট করেন, আমি ওই রিপোর্টের পরেই উচ্ছেদ অভিযান চালাবো’। আমাদের চেষ্টার কোনো ত্রুটি নেই। আপনারা সহযোগিতা করলে আমাদের কাজের সুবিধা হবে।’

অন্যদিকে বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসিফ আনাম সিদ্দিকী বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড বা স্থানীয়দের কাছ থেকে এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে ম্যাজিস্ট্রেটসহ অভিযান পরিচালনায় প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হবে।

(ঢাকাটাইমস/৮ডিসেম্বর/পিএল)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :