তিন যুগ পর স্বজনদের খোঁজ পেলেন হাসিনা

আব্দুল আউয়াল মন্ডল, বড়াইগ্রাম (নাটোর)
 | প্রকাশিত : ৩১ জানুয়ারি ২০২১, ১৩:৫৮

নাটোরের বড়াইগ্রাম থেকে ৩৬ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া হাসিনা খাতুন(৪৬) অবশেষে ফিরে পেয়েছেন তার স্বজনদের। নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে স্বজনদের কাছে পেলেন ১০ বছর বয়সে হারিয়ে যাওয়া হাসিনা। শনিবার তিনি বড়াইগ্রাম পৌরসভার রয়না গ্রামে তার বাবা মৃত মখলেছুর রহমানের বাড়িতে ফিরে এলে আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে তাকে এক নজর দেখার জন্য ভিড় জমায় বহু মানুষ।

হাসিনার স্বজনরা জানান, সহজ-সরল হাসিনার স্মৃতিশক্তি একটু দুর্বল ছিল। কোনো কিছু ঠিকঠাক মনে রাখতে পারতেন না। প্রায় ৩৬ বছর আগে একদিন হাসিনা কাউকে কিছু না বলে তার প্রতিবেশী এক নানীর সঙ্গে বনপাড়া বাজারে যান। এরপর থেকে তার আর কোনো খোঁজ মেলেনি।

হাসিনা খাতুন জানান, তিনি বনপাড়া থেকে বাড়ি ফেরার জন্য একাই বাসে উঠে বসেন। তবে ভুল বাসে উঠায় চলে যান ঈশ্বরদী। পরে যান ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশনে। কিন্তু ফিরবেন কিভাবে বুঝতে না পেরে বসে বসে কাঁদছিলেন। এ সময় আলমগীর হোসেন নামে রেলওয়ের একজন টিটি তাকে দেখতে পেয়ে নিজ বাড়িতে নিয়ে যান। কিছুদিন চেষ্টা করেও তার পরিচয় জানতে না পেরে পরে হাসিনার আশ্রয় মেলে আলমগীরের দুলাভাই কুষ্টিয়ার মিরপুর থানার কলাবাড়িয়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেনের বাড়িতে।

এরপর তারাই লালন-পালন করে গ্রামের এক যুবকের সঙ্গে বিয়ে দেন। কিন্তু দীর্ঘ ১২ বছরেও কোনো সন্তান না হওয়ায় এক পর্যায়ে ভেঙে যায় সে সংসার। এরপর হাসিনার পুনরায় বিয়ে হয় কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ভাদালিয়া গ্রামের বাসিন্দা কুষ্টিয়া চিনিকলের পাওয়ার টারবাইন অপারেটর হিসেবে কর্মরত আব্দুস সাত্তারের সঙ্গে।

হাসিনা খাতুনের সঙ্গে আসা সোহেল রানা জানান, হাসিনার বর্তমান স্বামী সম্পর্কে রানার দুলাভাই। বিয়ের পর হাসিনা প্রায়ই বাবা-মাকে দেখতে চাইতেন। কিন্তু ঠিকানা বলতে পারতেন না। তবে বাড়ি লক্ষীকোল, বাবার নাম মখলেছ। আর বাড়ির পাশে বড়াল নদী আছে। শুধু এতটুকুই বলতে পারতেন। গত তিন বছরে এটুকু তথ্যের ভিত্তিতেই সোহেল রানা ও তার দুলাভাই হাসিনার স্বজনদের খুঁজে পেতে নাটোরের বিভিন্ন স্থানে ঘুরেছেন। কিন্তু খোঁজ পাননি।

অবশেষে ১৫ দিন আগে তারা বড়াইগ্রাম পৌরসভার লক্ষীকোলের পাশে রয়না গ্রামে এসে খুঁজে পান হাসিনার স্বজনদের ঠিকানা। এরপর শনিবার তারা হাসিনাকে নিয়ে আসেন স্বজনদের কাছে। কিন্তু ইতোমধ্যেই হাসিনার বাবা মখলেছুর রহমান ও সৎ মা- দুজনই মারা গেছেন। আছেন শুধু তার ছোট দুই বোন আর বাড়ি সংলগ্ন মামী ও মামাতো ভাইবোনেরা।

শনিবার শৈশবের স্মৃতিবিজড়িত বাড়িতে ফিরে এলে কান্নায় ভেঙে পড়েন হাসিনা ও তার স্বজনরা। বাবা-মা বেঁচে না থাকলেও তাদের স্মৃতি আর বেঁচে থাকা স্বজনদের বুকে জড়িয়ে দীর্ঘ তিন যুগ পর নতুন করে বাঁচার অবলম্বন পেলেন হাসিনা খাতুন।

হাসিনার মামাতো ভাই আসাদুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘ সময় পার হয়ে যাওয়ায় আমরা আর কোনো দিন তাকে পাবো এমন আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম। কিন্তু অবশেষে তাকে ফিরে পেয়ে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি।

হাসিনা খাতুন বলেন, সব সময়েই বাবা-মাসহ স্বজনদের দেখতে ইচ্ছা করতো। কিন্তু বাড়ির ঠিকানা সঠিকভাবে বলতে না পারায় শুধু নীরবে কেঁদেছি। স্বামীর চেষ্টায় অন্তত তাদের মুখ দেখতে পেরেছি এতেই আমার কলিজা ঠান্ডা হয়েছে। এখন এটুকু ভেবে শান্তি পাচ্ছি যে, পৃথিবীতে আমারও আপন বলে কেউ আছে।

(ঢাকাটাইমস/৩১জানুয়ারি/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :