৪০ বছরেও ভাগ্য পরিবর্তন হয়নি হকার আইন উদ্দিনের

আনোয়ার হোসেন তরফদার, ভালুকা (ময়মনসিংহ)
| আপডেট : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৪:১৯ | প্রকাশিত : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৩:২৬

৪০ বছরেও ভাগ্য পরিবর্তন হয়নি পত্রিকা হকার আইন উদ্দিনের। ৪০ বছর যাবৎ ভালুকায় পত্রিকা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন তিনি। হাফ প্যান্ট পরার বয়সে পত্রিকা বিক্রি শুরু করেছিলেন এই আইন উদ্দিন। তিনি দুই ছেলে ও এক মেয়ের জনক। কষ্ট করে দুই সন্তানকে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন। এখন বয়সের ভারে অনেকটাই ন্যুব্জ।

১৯৭৮ সালের দিকে গফরগাঁও রেলওয়ে বুকস্টল থেকে রেডিও মেকার প্রয়াত বাচ্চু মিয়া মাত্র ১০ কপি দৈনিক সংবাদ পত্রিকা এনে ভালুকায় বিভিন্ন জায়গায় দিয়ে পত্রিকা পাঠক তৈরি শুরু করেন। পরবর্তীতে পত্রিকা বিতান নামে একটি এজেন্সির মাধ্যমে গফরগাঁওয়ের বাচ্চু মিয়া ভালুকায় প্রথম সংবাদপত্রের দোকান শুরু করেন।

এর আগে দুয়েকটি দৈনিক পত্রিকা নদীপথে লঞ্চযোগে ভালুকায় আসতো। পাঠক ছিলেন হাতে গোনা কয়েকজন মাত্র। ওই সময় দোকানপাট অফিস কাচারি ছিল খুবই কম। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক চালু হওয়ার পর ভালুকায় উন্নয়নের ছোঁয়া লাগতে শুরু করে। ৮০’র দশকে দেশের বিরাজমান পরিস্থিতিতে সংবাদপত্রের কদর বেড়ে যায় ভালুকাতেও।

বাচ্চু মিয়া ঢাকা থেকে সরাসরি পত্রিকা আনতে শুরু করেন। ঠিক ওই সময় পত্রিকা পাঠকের কাছে পৌঁছে দিতে প্রয়োজন হয় হকারের। ভালুকার রাস্তায় ঘুরতে দেখে আইন উদ্দীনকে ডেকে পত্রিকা বিক্রির কাজে লাগিয়ে দেন বাচ্চু মিয়া। কিশোর আইন উদ্দীন বাচ্চু মিয়ার বিশ্বস্ত ও অনুগত হয়ে উঠেন। পত্রিকা বিক্রি করে মোটামুটি দুবেলা আহার জোগাড় করতে সক্ষম হয় এই আইন উদ্দীন।

শিল্প কারখানা স্থাপন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রসার, প্রশাসনের রদবদলে থানা উপজেলায় রূপান্তর হওয়ায় অফিস আদালত বেড়ে যায়। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ে সংবাদপত্রের চাহিদা। তখন সাইকেল কিনে পেছনের ক্যারিয়ারে বক্স তৈরি করে তাতে সংবাদপত্র বহন করে পাঠকদের কাছে পৌঁছে দিতে শুরু করেন আইন উদ্দিন। শিশু আইন উদ্দীন সংবাদপত্র হাতে নিয়ে কৈশোর, যৌবন পেরিয়ে বার্ধক্যে উপনীত হয়েছে।

সংসারে স্ত্রী, দুই ছেলে নিয়ে কোনো রকমে দিন পার করছেন। বড় ছেলে সোহেল (২৬) ক্যামেস্ট্রিতে অনার্স মাস্টার্স শেষ করে একটি ফিড মিলে স্বল্প বেতনে চাকরি করছেন। ছোট ছেলে আনোয়ার (২০) অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে লেখাপড়া করছে। মেঝো মেয়ে আমেনার বিয়ে হয়েছে। শত দুঃখ কষ্টের মাঝে স্ত্রী ফাতেমা (৪৫) ঘর সংসার সামাল দিয়ে তার পাশে থেকে দুই ছেলেকে লেখাপড়া করাতে সক্ষম হয়েছেন।

বদলেছে দিন কিন্তু বদলায়নি আইন উদ্দীনের ভাগ্যের চাকা। নিরক্ষর আইন উদ্দীন যিনি পত্রিকা দেখেই বুঝেন কোনটা কী পত্রিকা। সাইকেলের চাকা ঘুরিয়ে সংবাদপত্র বিক্রির টাকায় সংসার খরচ চালিয়ে দুই ছেলেকে শিক্ষিত করেছেন। ২০১৮ সালের ২ জানুয়ারি পত্রিকা বিতানের মালিক বাচ্চু মিয়া মারা যাওয়ার পর তার ছেলে শের-ই বাংলা ব্যবসাটি ধরে রেখেছেন।

হকার আইন উদ্দীন জানান, অনেক হকার আসছে গেছে কিন্তু তিনি বাচ্চু ভাইয়ের পত্রিকা বিতান ছেড়ে কোথাও যাননি। বাচ্চু ভাইয়ের কাছে তিনি ঋণ স্বীকার করে বলেন, দুই ছেলেকে শিক্ষিত করতে পেরে আমি খুবই গর্ব বোধ করি। করোনার কারণে পত্রিকার কাটতি অনেক কমে যাওয়ায় আয় রোজগার কমে গেছে। তার আশা বড় ছেলেটির পাশাপাশি এখন ছোট ছেলেটিও একটি চাকরি পেয়ে সংসারের হাল ধরা।

দীর্ঘ ৪০ বছর সংবাদপত্র বিক্রির সাথে জড়িত থেকে আজ তিনি বয়সের ভারে ক্লান্ত। চলার সাথী সাইকেলটি পুরোনো হয়ে গেছে। তার ইচ্ছা জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সংবাদপত্র নিয়ে পাঠকের সেবায় হাজির থাকবেন।

(ঢাকাটাইমস/১৩ফেব্রুয়ারি/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :