নাব্য সংকটে ডুবোচরে আটকা পড়ছে নৌযান

নোয়াখালী প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ৩০ মার্চ ২০২১, ১৬:৫৮ | প্রকাশিত : ৩০ মার্চ ২০২১, ১৬:৫৫

নোয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার জনগণদের জেলা তথা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাতায়ত করতে হয় নৌপথে। ঢাকা-হাতিয়া, চট্টগ্রাম-হাতিয়া এবং নলচিরা (হাতিয়া)-চেয়ারম্যানঘাট (জেলা শহর থেকে আসার ঘাট) রুটে প্রতিদিন নৌপথে যাতায়ত করে হাজার হাজার যাত্রী। গত ৬-৭ মাস ধরে প্রতিনিয়ত ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে নৌপথে চলাচলকারী এ যাত্রীদের।

নদীতে নাব্য সংকটের কারণে সৃষ্টি হওয়া ডুবোচরে প্রতিনিয়ত আটকা পড়ছে সকল ধরনের নৌযান। ক্ষতিগ্রস্তদের দাবি, স্থানীয়দের সঙ্গে সমন্বয় করে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ নদীতে ড্রেজিং ব্যবস্থা করলে দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হবে।

নৌপথে যাতায়তকারী ও নৌযান চালকরা জানান, গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ হাতিয়ার মেঘনা নদীর বিভিন্ন এলাকায় ড্রেজিং করে। কিন্তু তারা কারো সঙ্গে কোনো প্রকার সমন্বয় না করে নিজেদের মতো কাজ শেষ করে চলে যায়। কয়েকদিন নৌযান চলাচলে সমস্যা না হলেও মাত্র এক মাসের মাথায় আবারও নদীতে দেখা দেয় নাব্য সংকট, সৃষ্টি হয় ডুবোচরের। আর এ ডুবোচরের কারণে বেশি বিপদে পড়তে হচ্ছে ঢাকা-হাতিয়া রুটে চলাচলকারী যাত্রীদের। প্রতিদিন ঢাকা থেকে হাতিয়ার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা তিনতলা বিশিষ্ট বড় লঞ্চগুলো নদীতে নাব্যতা সংকটের কারণে ডুবোচরে আটকা পড়ছে। এছাড়াও ছোট লঞ্চ চলাচল প্রায়ই ব্যাহত হচ্ছে। আর নৌযানগুলো এভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছে যাত্রী সাধারণ।

জানা গেছে, উপজেলার নলচিরা-চেয়ারম্যানঘাট রুটে অন্তত ৭-৮টি ডুবোচর রয়েছে। যার ফলে গত ৪-৫ বছরে এই রুটটির পরিবর্তন হয়েছে দুই বার। বর্তমানে এ রুটে তেমন একটা সমস্যা না থাকলেও প্রায়সময় নদীতে জোয়ার না থাকলে ডুবোচরে আটকা পড়ে সবধরনের নৌযান। বর্তমানে এ দ্বীপের যাত্রীদের মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে মনপুরা-তমরদ্দি রুটের ডালেরচর এলাকার কয়েকটি বড় ডুবোচর ও ভোলা জেলার মনপুরা উপজেলার পূর্ব পাশে, হাতিয়া উপজেলার তমরদ্দি ঘাটের তিন কিলোমিটার পশ্চিমে বধনারচর এলাকার মেঘনা নদীতে থাকা একটি ডুবোচর। এই ডুবোচরের কারণে অনেক সময় হাতিয়ার ব্যবসায়ীদের কাঁচামালবাহী নৌযানও চরে আটকা পড়ে। পরবর্তীতে জোয়ার এলে নৌযান চলাচল স্বাভাবিক হলেও আটকা পড়া নৌযানে থাকা কাঁচামাল নষ্ট হয়ে ক্ষতির মুখে পড়ছেন ব্যবসায়ীরা।

তমরদ্দি বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজী মো. ইব্রাহীম জানান, ঢাকা থেকে তমরদ্দিঘাটে লঞ্চ আসা যাওয়া করায় এখানে (তমরদ্দি বাজার) বড় পাইকারি বাজারে পরিনত হয়েছে। বর্তমানে বাজারটিতে প্রায় অর্ধশতাধিক আড়ৎ রয়েছে। আর এই আড়ৎগুলো থেকে উপজেলার বিভিন্ন বাজারের খুচরা ব্যবসায়ীরা মালামাল ক্রয় করেন। কিন্তু বর্তমানে নদীতে ডুবোচরের কারণে নির্দিষ্ট সময়ে লঞ্চ ঘাটে না পৌঁছার কারণে ব্যবসায়ীরা সঠিক সময়ে মালামাল আনা নেওয়া করতে পারছেনা।

তিনি আরও জানান, লঞ্চ চলাচলের এ রুটটিতে অসংখ্য ডুবোচর রয়েছে। নদীতে ভাটার সময় কোনো কোনো চর জেগে ওঠে, আবার জোয়ারে তা তলিয়ে যায়। আর এসব চরেই আটকা পড়ে লঞ্চগুলো। এ আটকা পড়ার কারণে রাতে লঞ্চগুলোতে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে অতিদ্রুত নদীতে ড্রেজিং ব্যবস্থা করে নৌ চলাচল নিরাপদ করার দাবি করেন তিনি।

হাতিয়ার ব্যবসায়ী শামীমুজ্জামান জানান, ব্যবসার কাজে ঢাকা-হাতিয়া রুট হয়ে সপ্তাহে অন্তত ১-২ দিন লঞ্চ যোগে ঢাকা যেতে হয়। মালামাল নিয়ে সন্ধ্যা ৬টা ঢাকার সদরঘাট থেকে রওনা দিলে ৬ ঘণ্টায় তমরদ্দি এসে পৌঁছার কথা থাকলেও লঞ্চ কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের সুবিধার্থে ভোর ৬টার দিকে ঘাটে পৌঁছায়। কিন্তু এর মধ্যে রাতে ডুবোচরে লঞ্চ আটকে গেলে ঘাটে আসতে পরদিন বেলা ১১টা হয়ে যায়। এতে কাঁচা মালামাল নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়। এদিকে লঞ্চ আটকা পড়া সময়ে দ্রুত ঘাটে পৌঁছাতে অনেক যাত্রী ঝুঁকি নিয়ে ছোট ট্রলার যোগে ঘাটের উদ্দেশ্যে রওনা হন।

এ বিষয়ে কথা বলতে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) ড্রেজিং বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী আবদুল মতিনের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেন নি।

অন্যদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, হাতিয়া অঞ্চলের ডুবোচরগুলো নিয়ে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ একটি জরিপ করেছেন। এখানে ড্রেজিং করতে হলে সবচেয়ে বড় ইঞ্জিন ব্যবহার করতে হবে। কিন্তু হাতিয়ার পার্শ্ববর্তী সন্দীপ চ্যানেলে ড্রেজিং করার সময় তাদের ইঞ্জিনটি বিকল হয়ে যাওয়ায় তা এদিকে পাঠানো যাচ্ছে না।

(ঢাকাটাইমস/৩০মার্চ/পিএল)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :