করোনা প্রতিরোধে সমন্বয়হীনতার ছাপ স্পষ্ট

রেজাউল করিম
  প্রকাশিত : ০৮ এপ্রিল ২০২১, ১৪:১৫
অ- অ+

দেশের করোনা পরিস্থিতি কী? স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলছেন পরিস্থিতি প্রায় নিয়ন্ত্রণের বাইরে। একদিকে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীর ঢিলেঢালা লকডাউন, অন্যদিকে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় গণপরিবহন চলার ঘোষণা!

সার্বিক বিবেচনায় মনে হচ্ছে এক হযবরল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। পরিস্থিতি আসলে নিয়ন্ত্রণে নেই। সবকিছুর মধ্যেই সমন্বয়হীনতার ছাপ স্পষ্ট। এক অদ্ভুত ধরনের পরিস্থিতি বিরাজ করছে সর্বত্র।

জরুরি কাজ ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়ার আহ্বান থাকলেও বের না হওয়ার কঠোর কোনো নির্দেশনা নেই। স্বাস্থ্যবিধি মানায় কঠোরতা নেই, তাহলে সারাদেশ লকডাউন করা তামাশা নয়তো কী?

লকডাউন করলেই জনসাধারণকে আর্থিক ও খাদ্য-সহায়তা দেয়ার প্রশ্ন আসে। কিন্তু সরকারের পক্ষে কি এখন সবাইকে না হোক ৫০ শতাংশ নাগরিককে খাদ্য ও আর্থিক সহায়তা দেয়া সম্ভব? মনে হয় না। সরাসরি সহায়তা দিতে না পারলে, খাবার না থাকলে জনগণ কঠিন লকডাউনেও ফুঁসে উঠতে পারে। তাই সরকার সারাদেশে লকডাউন ঘোষণা করলেও কঠোর হতে পারছে না।

স্বাস্থ্য খাতের অবস্থাও তথৈবচ। একবছরেও তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। সবদিক থেকেই আমরা পিছিয়ে। চিকিৎসা সরঞ্জামের যেমন অপ্রতুলতা আছে। মানবিকতার কাঙ্ক্ষিত স্তরেও পৌঁছাতে পারিনি। সবার জন্য এটা প্রযোজ্য না হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে পরিস্থিতি খুবই প্রকট আকার ধারণ করেছে।

গত এক বছরে সারা বিশ্বের পরিস্থিতি দেখেও আমাদের হুঁশ ফিরেনি। করোনা অজুহাতে দেশের সাধারণ চিকিৎসাব্যবস্থা পুরোপুরি ধসে পড়েছে। সাধারণ রোগীও আশানুরূপ চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতাল ঘুরেও চিকিৎসা মিলছে না। বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর অভিযোগও উঠছে প্রায়ই।

রাজধানী থেকে জেলা শহর, সারাদেশে একই অবস্থা। ক্যানসারের রোগীকেও হাসপাতালগুলো নিতে চাচ্ছে না। রোগী নিয়ে গেলে হাসপাতাল থেকে বলা হচ্ছে, চিকিৎসক নেই। আর শ্বাসকষ্ট নিয়ে যারা যাচ্ছেন তাদেরতো রীতিমতো দূর দূর করে তাড়িয়ে দিচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এদেশে শ্বাসকষ্টে ভোগা সবাই করোনা রোগী না। এমনিতেই আমাদের দেশে দূষণের কারণে শ্বাসকষ্টের রোগী বেড়ে যায়।

শঙ্কার জায়গা হচ্ছে, হাসপাতালগুলো ফিরিয়ে দেয়ার কারণে সাধারণ শ্বাসকষ্টের অনেক রোগী মারা যায় বিনা চিকিৎসায়। ধরে নেয়া হয় করোনা লক্ষ্মণ। গণ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ ধরনের বেশ কিছু অভিযোগও প্রকাশিত হয়েছে। অব্যবস্থাপনা ও দায়িত্ব পালনে অবহেলার কারণে সাধারণ শ্বাসকষ্টের রোগী মারা যাচ্ছেন।

বড়কথা হলো আমাদের দেশে একবছরেও করোনা মোকাবিলার কোনো পরিকল্পিত নীতিমালা তৈরি হয়নি।

বাস্তবতা হচ্ছে, আমাদের অনেক প্রশ্নেরই উত্তর মেলে না। করোনায় রোগী ও মৃত্যুর হিসাব মেলে না। রাষ্ট্রের সঙ্গে নাগরিকের হিসাব মেলে না। দেশের সঙ্গে বিদেশিদের হিসাব মেলে না। অর্থনীতির সূচকগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে ধনী-দরিদ্রের হিসাব মেলে না। এই হিসাব মেলা না মেলার এক বিশাল শুভঙ্করের ফাঁকির মধ্যে আমাদের দেশ দাঁড়িয়ে আছে। করোনার সংকট সেই শুভঙ্করের ফাঁকির রূপটি প্রকাশ্যে নিয়ে এসেছে। মাঝখানে বলির পাঠা হচ্ছে সাধারণ জনতা।

লেখক: সাংবাদিক

ঢাকাটাইমস/৮এপ্রিল/এসকেএস

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
‘মন হালকা হতে কুয়াকাটা গিয়েছিলেন’সেই ব্যাংক কর্মকর্তা
নাজিমগঞ্জ হাটে বিএনপির প্রচার অভিযান, নেতৃত্বে কাজী আলাউদ্দিন
হকিতে চীনকে উড়িয়ে টানা তৃতীয় জয়ে শীর্ষে বাংলাদেশ
কারবালার শাহাদাত থেকে সত্য ও মানবতার শিক্ষা নেওয়ার আহ্বান আল্লামা ইমাম হায়াতের
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা