বেদের বেশে কড়ি তাবিজের আড়ালে ইয়াবা নিয়ে ঢাকায়

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ০৫ মে ২০২১, ১৭:০৯| আপডেট : ০৫ মে ২০২১, ১৯:৫২
অ- অ+

বেদের ছদ্মবেশ ধারণ করে দীর্ঘদিন ধরে চলছিল ইয়াবার কারবার। কমসময়ে বেশি টাকা উপার্জনের আশায় ছদ্মবেশে চলছিল তাদের কারবার। যার সঙ্গে জড়িত ছিল এই সম্প্রদায়ের পাঁচ তরুণ। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ৭৭ হাজার পিস ইয়াবা।

র‌্যাব বলছে, তাদের পূর্বপুরুষেরা বেদে ছিল। তবে বাপ-দাদার আমলের বেদে জীবন থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে তারা। কিন্তু ইয়াবা ব্যবসায়ীদের খপ্পড়ে পড়ে লাভের আশায় ফের ভাসমান বেদের ছদ্মবেশ নিয়ে ইয়াবার কারবার শুরু করে।

বুধবার দুপুরে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে ব্রিফিং করে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান র‌্যাব-২ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ইমরান উল্লাহ সরকার।

তিনি বলেন, কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত আসার ক্ষেত্রে তারা মহাসড়ক ব্যবহার না করে বিকল্প হিসেবে গ্রামের ভেতরের রাস্তা দিয়ে বিভিন্ন ইজি বাইক, সিএনজি, টেম্পু ব্যবহার করে পথ পাড়ি দিতো। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা আসার ক্ষেত্রে তারা চট্টগ্রাম সিটি গেটসহ বিভিন্ন স্থানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চেকপোস্ট এড়াতে প্রথম ধাপে চট্টগ্রামের আনোয়ারা থেকে হাটহাজারী-মানিকছড়ি-গুইমারা-রামগড় হয়ে ফেনী আসতো। সেখান থেকে তারা নোয়াখালীর-চৌমুহনী-সোনাইমুরী এবং চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ হয়ে মতলব লঞ্চঘাট পর্যন্ত আসত। দ্বিতীয় ধাপে তারা সেখান থেকে ইঞ্জিন চালিত নৌকায় চড়ে মুন্সীগঞ্জ হয়ে বুড়িগঙ্গা নদী দিয়ে ঢাকার প্রবেশ করত। এতে করে তাদের চার-পাঁচ দিন অথবা কোনো কোনো সময় এক সপ্তাহ পর্যন্ত লেগে যেত বলে জানায়।

ইমরান উল্লাহ সরকার জানান, এই দীর্ঘ সময় তারা বেদেদের মতোই জীবন-যাপন করতো এবং সাধারণ মানুষের সন্দেহ দূর করতে পথের মাঝে বিভিন্ন মনিহারী দ্রব্য যেমন-চুড়ি, কড়ি, চুল বাধার ফিতা, শিশুদের কোমরে বাধার ঘণ্টা, চেইন, সেইফটি পিন, বাতের ব্যথার রাবার রিং ইত্যাদি বিক্রি করতো। মাদক পরিবহনের ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এই ধরনের কৌশলের মুখোমুখি ইতিপূর্বে কখনও হয়নি এবং তারা যে রুটটি ব্যবহার করছে তাও একেবারে নতুন বলা চলে।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা জানান, কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে জনৈক ইয়াবা ব্যবসায়ীকে না চিনলেও লাভের আশায় বেদের ছদ্মবেশ ধারণ করে বেশ কয়েকটি ইয়াবার বড় চালান ঢাকায় পৌঁছে দেয় তারা। তবে গতরাতে ধরা পড়ে মুন্সীগঞ্জের ওই পাঁচ তরুণ মাদক কারবারি। তারা হলেন, মো. তারিকুল ইসলাম, মো. সিনবাদ, মো. মিম মিয়া, মো. ইমন এবং মো. মনির।

এদিকে মঙ্গলবার রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বসিলা ব্রিজ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে বেদের ছদ্মবেশে মাদক পাচারকালে ৭৭ হাজার পিস ইয়াবাসহ তাদের গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-২ এর একটি দল।

ইমরান উল্লাহ বলেন, র‌্যাব সদরদপ্তরের গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জানতে পারে, একদল মাদক কারবারি মাদকের একটি বড় চালান নিয়ে নদীপথে বুড়িগঙ্গা নদী দিয়ে মোহাম্মদপুরের বসিলা ব্রিজ এলাকায় হস্তান্তরের উদ্দেশে আসছে। ওই তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় ছদ্মবেশ ধারণের সরঞ্জামাদি, রান্নার হাড়ি-পাতিল, বালতি, বহনযোগ্য ডিসপ্লে র‌্যাক এবং নানান ধরনের ইমিটেশন অলংকার উদ্ধার করা হয়।

র‌্যাব-২ এর সিও জানান, গ্রেপ্তারকৃতরা পারস্পরিক যোগসাজশে নিয়মিত কক্সবাজারের সীমান্ত এলাকা ও সমুদ্রপথে বাংলাদেশে আসা ইয়াবা রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করে আসছিল।

গ্রেপ্তার মাদক কারবারিরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়াতে অভিনব কায়দা হিসেবে বেদের ছদ্মবেশ ধারণ করে মাদক বহন করে নিয়ে আসতো। মাদক পরিবহনের জন্য টিনের তৈরি সহজে বহনযোগ্য রান্না করার চুলার মধ্যে বিশেষ কায়দায় ইয়াবা লুকিয়ে তা আবার ঝালাই করে জোড়া লাগিয়ে দিত। তারা মাদকের চালান কক্সবাজার এলাকা থেকে রাজধানী ঢাকায় নিয়ে আসার ক্ষেত্রে কখনই মহাসড়ক ব্যবহার করতো না।

(ঢাকাটাইমস/০৫মে/এসএস/এইচএফ/জেবি)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
সেনাপ্রধানের সঙ্গে তুরস্কের প্রতিরক্ষাশিল্প সচিবের সাক্ষাৎ
অবিরাম বৃষ্টিতে পটুয়াখালী পৌর এলাকায় জলাবদ্ধতা
‘মুজিবুল হক চুন্নুই জাতীয় পার্টির বৈধ মহাসচিব’
কুষ্টিয়ায় আবরার ফাহাদের কবর জিয়ারত করলেন এনসিপির শীর্ষ নেতারা
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা