করোনা থেকে বাঁচতে কি মাংস খাওয়া ছাড়তে হবে?

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১১ জুন ২০২১, ১৭:৩৮ | প্রকাশিত : ১১ জুন ২০২১, ১৬:১৮

বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে বিভিন্ন দেশে চলছে বিস্তর গবেষণা। চিকিৎসা, প্রতিষেধক নিয়ে নানা রকম গবেষণায় ব্যস্ত বিজ্ঞানীরা। বাদ নেই খাদ্যাভ্যাস নিয়ে চর্চাও। এর মধ্যেই ছয় দেশে একটি গবেষণা করেছেন বিজ্ঞানীরা। খাদ্যাভ্যাস নিয়ে করা এ গবেষণায় উঠে এসেছে, যাদের খাবার তালিকায় বেশি পরিমাণে মাংস থাকে তাদের শরীর করোনা প্রতিরোধে তেমন একটা কার্যকর নয়। কিন্তু যাদের খাদ্যাভ্যাসে মাংস নেই, তাদের শরীরে করোনা খুব গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারবে না।

এমনই এক রিপোর্ট প্রকাশিত হয় ‘বিএমজে নিউট্রিশন, প্রিভেনশন অ্যান্ড হেল্থ’ পত্রিকায়। ২৮৮৪টি স্বাস্থ্য সংস্থা যারা কোভিড রোগীদের দায়িত্বে ছিল তাদের মধ্যে একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে নিরামিষ ভোজীদের মধ্যে গুরুতর সংক্রমণের আশঙ্কা ৭৩ শতাংশ কম। অন্যদিকে যারা মাছ খান, কিন্তু মাংস নয়, তাদের মধ্যে সেটা ৫৯ শতাংশ কম।

তবে নিরামিষভোজীদের যে করোনা হবে না বা শুধু খাদ্যাভ্যাসের কারণে সংক্রমণ কতটা গুরুতর হবে, তা নির্ভর করবে— এমন কোনো প্রমাণ সেই রিপোর্ট থেকে পাওয়া যায়নি। তবে ধরে নেয়া যায়, শাক-সবজি-ফলে যথেষ্ট পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ এবং অন্যান্য পুষ্টিগুণ রয়েছে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। মাছে রয়েছে ওমেগা-থ্রি এবং ভিটামিন ডি যা শরীরের মধ্যে নানা রকম ফোলাভাব কমাতে সাহায্য করে। হয়তো সেই কারণেই এই ধরনের খাদ্যাভ্যাস যাদের, তাদের মধ্যে করোনা খুব মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে না- এমনটাই মত গবেষকদের।

আমেরিকার বাসিন্দাদের মধ্যে মহামারিতে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া কমেছে এবং জাঙ্ক ফুড বা অন্যান্য অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। ২০২০ সালের জুনে ২০০০ জনের মধ্যে একটি খাদ্যাভ্যাসের সমীক্ষা করা হয়েছিল। তা থেকেই এমন তথ্য উঠে এসেছে। সিডিসি’র তরফ থেকে বারবার সতর্ক করা হয়েছে, মানুষ যাতে অতিমারিতে তাদের খাদ্যাভ্যাসের দিকে বিশেষ নজর দেয় এবং যতটা সম্ভব স্বাস্থ্যকর খাবার বেছে নেয়।

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টারের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক আ ব ম ফারুকের সঙ্গে। তিনি বললেন ভিন্ন কথা। তার ভাষ্যমতে, মাংস খেলে যে করোনা প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়, এটা সত্য নয়। শরীরে প্রোটিন লাগবে। মাছ মাংস, দুধ ডিম, সবজি সবই খেতে হবে।

ঢাকা টাইমসের সঙ্গে আলাপকালে অধ্যাপক ফারুক বলেন, করোনার সময়ে নানা জনের নানান ধরনের কথা সামনে আসবে। এর মধ্যে হয়তো কোনো কোনোটা ৫% সম্ভাবনার। আর বাকি ৯৫% কল্পনাও হতে পারে। মাংস খাওয়াটা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়, এটা আমরা জানি। মাংস খেলে যা হয় তার মধ্যে অন্যতম হলো মুটিয়ে যাওয়া। মোটা হয়ে যাওয়াটা কোনোভাবেই ভালো নয়। যদিও আমাদের দেশে বাবা মায়েদের চিন্তা তাদের সন্তান মোটা হচ্ছে না কেন? কিন্তু এখন আমরা জানি মোটা হওয়াটা সুস্বাস্থ্য নয়।

তিনি বলেন, সুস্বাস্থ্য হচ্ছে, শরীরে চর্বি কম থাকবে। কিন্তু শরীরে মাংস থাকবে না বা শক্তি থাকবে না তা নয়। সুস্বাস্থ্য মানে হচ্ছে মোটা না হওয়াও নয়। আর মাংস যারা খায় তাদের শরীরে চর্বির পরিমানটা বেশি হয়। এ কারণে রক্তে চর্বি বেশি জমে। সে কারণে হার্ট অ্যাটাকও তাদেরই বেশি হয়। ব্লাড প্রেশারও হয়। রক্ত জমে যাওয়ার কারণে ব্রেইন স্ট্রোক হতে পারে। ব্লাড প্রেশার বেশি হলে কিডনিরও সমস্যা হতে পারে।

মোট কথা, একটার পর একটা কিন্তু সমস্যা লেগেই থাকবে। আর এই সকল সমস্যা শুধু চর্বির কারণেই হয়। এই চর্বি শুধু মাংস থেকেই আসে। এখন যদি মাংস না খান বা আমাদের দেশে অনেকেই আছেন ভেজিটেরিয়ান। তারা মাছ মাংস খান না। শুধু আমাদের দেশে না পৃথিবীর অনেক দেশেই আছেন ভেজিটেরিয়ান। শুদু নিরামিষেও কিন্তু আবার সমস্যা আছে। ভিটামিন বি-১২ এটা কিন্তু কোনো ভেজিটেবলে থাকে না। এটারও কিন্তু প্রয়োজন আছে শরীরে। বি-১২ শরীরে না থাকলে রক্ত সল্পতার একটা জটিল অসুখ হয়। কিছুতেই শরীরে রক্ত থাকে না বা রক্ত তৈরি হয় না এবং সেটাও তৈরি হয় ধিরে ধিরে রক্তের কণিকা ভেঙে যায়। ফলে এই মানুষটিও বেশি দিন বাঁচে না।

অধ্যাপক আ ব ম ফারুক, তাহলে করোনা থেকে বাঁচতে করণীয় কী? ভিটামিন বি-১২ তো আমাদের শরীরে প্রয়োজন। সে কারণেই বলা হয়, আপনি যাই করেন সুষম হতে হবে। খাবারে ভারসাম্য থাকতে হবে। বি-১২ যে উৎস সেগুলোও তো আমাদের নিতে হবে। ভারসাম্যপূর্ণ খাবার যদি আমরা খাই তাহলে আমাদের স্বাস্থ্য যেমন ভালো থাকে, তেমনি রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো থাকে। রক্তের মধ্যে যে শ্বেত কণিকা থাকে তার মধ্যে অনেক ধরনের শ্বেত কণিকা আছে। যা বিভিন্ন ধরনের কাজ করে। মানুষের শরীরে অপ্রয়োজনীয় কোনো কিছু তৈরি হয় না। সে কারণেই আমরা বলি, যতই আমরা জানছি, নতুন নতুন আবিস্কার করছি। ততই আমরা অবাক হই। মানবদেহ কত জটিল!

এই পুষ্টিবিদ বলেন, করোনাকালে আমরা যেটা করতে পারি, শুধু মাংস খাবো তা নয়। আবার মাংস খাবো না তাও নয়। মাংসের চর্বি বাদ দিয়ে খাবো। মাছ খাবো, সবজি খাবো। রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা ধ্বংস হয় এমন কিছু খাবো না। সবজি বা অন্যান্য খাবার খাওয়ার সময়ে দেখতে হবে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা ধ্বংস হয় এমন কিছু খাওয়া যাবে না। ফাস্টফুড খাওয়া যাবে না। মাঝে মধ্যে সখ করে খেলাম সেটা ভিন্ন কথা; কিন্তু সব সময় নয়। এতে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা ধ্বংস হয়। সবচেয়ে বড় কথা করোনার এই সময়ে ভারসাম্যপূর্ণ খাবার খেতে হবে।

এই পুষ্টিবিদের কথা, মাংস খাওয়ার সঙ্গে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যাওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। শরীরে প্রোটিন লাগবে। মাছ মাংস, দুধ ডিম, সবজি সব খেতে হবে। স্কুলে যেমন পড়ানো হতো। শর্করা আমিষ, প্রোটিন, আশ জাতীয় খাবার সব খেতে হবে। সব কিছু মিলিয়ে সুষম খাবার খান, স্বাস্থ্যবিধি মানেন, টিকানেন। তাহলে ইনশা আল্লাহ করোনা আমাদের ছুতে পারবে না।

(ঢাকাটাইমস/১১জুন/কেআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

স্বাস্থ্য বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

স্বাস্থ্য এর সর্বশেষ

দেশে নতুন করে বাড়ছে ম্যালেরিয়া আক্রান্তের সংখ্যা, ঢাকা কতটা ঝুঁকিতে?

বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস: জানুন মশাবাহিত এ রোগ প্রতিরোধের উপায়

গরমে স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পর্কে সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি

ঔষধি গাছ থেকে তিন শতাধিক ওষুধ তৈরি হচ্ছে ইরানে

কণ্ঠের সব চিকিৎসা দেশেই রয়েছে, বিদেশে যাওয়ার প্রয়োজন নেই: বিএসএমএমইউ উপাচার্য 

এপ্রিল থেকেই ইনফ্লুয়েঞ্জা মৌসুম শুরু, মার্চের মধ্যে টিকা নেওয়ার সুপারিশ গবেষকদের

স্বাস্থ্য খাতে নতুন অশনি সংকেত অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

ভাতা বাড়লো ইন্টার্ন চিকিৎসকদের

বিএসএমএমইউ বহির্বিভাগ ৪ দিন বন্ধ, খোলা থাকবে ইনডোর ও জরুরি বিভাগ

তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের কাজ করতে বললেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :