এপ্রিল থেকেই ইনফ্লুয়েঞ্জা মৌসুম শুরু, মার্চের মধ্যে টিকা নেওয়ার সুপারিশ গবেষকদের

​​​​​​​নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
 | প্রকাশিত : ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ২০:৪৫

দেশে এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাসে ইনফ্লুয়েঞ্জা সংক্রমণের প্রকোপ বাড়ায় এই সময়টাকে ফ্লুর মৌসুম হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে প্রতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের টিকা নেওয়ার সুপারিশ গবেষকদের

বুধবার দুপুরে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) এবং আইসিডিডিআর,বির গবেষকরা যৌথভাবে মহাখালীর আইইডিসিআর অডিটোরিয়ামেইনফ্লুয়েঞ্জা সার্ভেইল্যান্স ইন বাংলাদেশ শীর্ষক সেমিনার থেকে কথা জানানো হয় সেমিনারে ২০০৭ সাল থেকে বাংলাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে পরিচালিত দেশব্যাপী ইনফ্লুয়েঞ্জা সার্ভেইল্যান্স থেকে প্রাপ্ত ফলাফল উপস্থাপন করা হয়

যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (ইউএস-সিডিসি) এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কারিগরি সহায়তায় এই সার্ভেইল্যান্সটি বাংলাদেশে পরিচালিত হয়ে আসছে এখন দেশের ১৯টি হাসপাতালে চলমান সার্ভেইল্যান্সের মূল লক্ষ্য বাংলাদেশে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের সংক্রমণ মৌসুমি বৈচিত্র বোঝার পাশাপাশি ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের বিভিন্ন ধরন শনাক্ত করা

সার্ভেইল্যান্সের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশে ইনফ্লুয়েঞ্জা সংক্রমণের প্রকোপ বাড়ে তাই এই সময়টাকে গবেষকরা ফ্লু এর মৌসুম হিসেবে চিহ্নিত করেছেন ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস থেকে সর্বোচ্চ সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশে প্রতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের টিকা বা ফ্লু-শট নেওয়ার সুপারিশ দেন গবেষকরা

এছাড়াও ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকা নেওয়ার জন্য স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী, বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্ত রোগীদের অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত বলেও গবেষকরা মনে করেন

আইসিডিডিআর,বির অ্যাসোসিয়েট সায়েন্টিস্ট ডা. ফাহমিদা চৌধুরী বিশ্বব্যাপী ফ্লু সংক্রমণের ধরনের বিষয়ে ধারণা দিয়ে বলেন, ‘বিশ্বে প্রতি বছর দুই লাখ ৯০ হাজার থেকে ছয় লাখ ৫০ হাজার মানুষ ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে

বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে ইনফ্লুয়েঞ্জার মৌসুমি বৈচিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি এবং ফ্লু টিকা দেওয়ার সঠিক সময়ের ওপর ধারণা দিয়ে ি ডা. ফাহমিদা চৌধুরী আরও বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশ তাদের ফ্লু মৌসুমের আগে ফ্লু ভ্যাকসিন কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে

বাংলাদেশে ইনফ্লুয়েঞ্জা সারভেইল্যান্স থেকে প্রাপ্ত ফলাফল তুলে ধরে আইইডিসিআর এবং ন্যাশনাল ইনফ্লুয়েঞ্জা সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিন বলেন, ‘স্বল্প সময়ের জ্বর এবং কাশির অভিযোগ নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা এক লাখ ১৫ হাজারের বেশি রোগীর মধ্যে প্রায় ১১ শতাংশ রোগীর মধ্যে ইনফ্লুয়েঞ্জার উপস্থিতি পাওয়া যায়

অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিন বলেন,‘হাসপাতালে ভর্তি ইনফ্লুয়েঞ্জা পজিটিভ রোগীদের মধ্যে প্রায় প্রতি একশ জনে একজন হাসপাতালেই মারা যান ৬০ বছরের বেশি বয়স্ক ব্যক্তি এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে এই মৃত্যুর হার স্বাভাবিকের চেয়ে তিন গুণ বেশি দেখা যায়

ডা. তাহমিনা বলেন, ‘তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে যে, বাংলাদেশে সারা বছরই ফ্লু শনাক্ত হয়ে থাকে তবে প্রতি বছরের এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাসে ফ্লু শনাক্তের হার বাড়ে এবং জুন থেকে জুলাই মাসে এর প্রকোপ সর্বোচ্চ হয় এই কারণে এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত বাংলাদেশে ইনফ্লুয়েঞ্জা মৌসুম হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে এছাড়াও মৌসুম শুরুর আগেই ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকা নিয়ে সুরক্ষিত রাখার প্রতি এবং ইনফ্লুয়েঞ্জার মৌসুমে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা ইনফ্লুয়েঞ্জার একটা মহামারি সম্ভাবনা এবং অ্যান্টিবায়োটিকের অযৌক্তিক ব্যবহার প্রতিরোধের ওপর জোর দিয়ে বলেন, ‘চলমান এই ফ্লু এর মৌসুমে যদি জ্বর, সর্দি, কাশির মতো লক্ষণ দেখা দেয় তাহলে অ্যান্টিবায়োটিক নেওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে যেন ওষুধের প্রতি রেজিস্ট্যান্স তৈরি না হতে পারে এছাড়া হাত ধোয়া, মাস্ক পরা এবং কাশি দেওয়ার শিষ্টাচারগুলো সারা বছর মেনে চললে আমরা শুধু ইনফ্লুয়েঞ্জা বা শ্বাসতন্ত্রের অসুখ নয় অন্যান্য সংক্রামক রোগও প্রতিরোধ করতে পারবো

আইসিডিডিআর,বি- নির্বাহী পরিচালক . তাহমিদ আহমেদ বিশেষ অতিথি হিসেবে তার বক্তব্যে বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্য নীতিনির্ধারণে বাংলাদেশে ইনফ্লুয়েঞ্জা সারভেইল্যান্সের গুরুত্ব তুলে ধরেন বলেন, ‘২০০৮ থেকে ২০১০ সালে আইসিডিডিআর,বি- বিজ্ঞানী . কে জামান গবেষণা করে দেখেছিলেন যে গর্ভাবস্থায় মাকে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন দিলে মায়ের পাশাপাশি নবজাতকেরও ৬৩ শতাংশ রোগের ঝুঁকি কমিয়ে দেয় এই গবেষণার ফলাফলের ভিত্তিতে পরবর্তীতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গর্ভাবস্থায় মাদের ফ্লু ভ্যাকসিন দেওয়ার পরামর্শ দেয়

সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ইনফেকশাস হ্যাজার্ড ম্যানেজমেন্ট অফিসার . এএসএম আলমগীর, ইউএস-সিডিসির এপিডেমিওলজিস্ট, . গ্রেচেন কাওম্যান, গ্লোবাল হেলথ ডেভেলপমেন্ট (জিএইচডি) এবং ইস্টার্ন মেডিটার্নিয়ান পাবলিক হেলথ নেটওয়ার্কের প্রতিনিধি অধ্যাপক . মাহমুদুর রহমান প্রমুখ এছাড়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা, চিকিৎসক, বিভিন্ন ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির প্রতিনিধি এবং গণমাধ্যমকর্মীরা সেমিনারে অংশ নেন

(ঢাকাটাইমস/১৭এপ্রিল/টিএ/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

স্বাস্থ্য বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :