দক্ষ জনবল ও উদ্যোক্তা তৈরিতে কাজ করছে আইসিটি বিভাগ: আইসিটি সচিব
জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার বিপ্লবের পর ড. ইউনুস নেতৃত্ব গঠিত হয় বিপ্লবী সরকার। গত ১৫ সেপ্টেম্বর এই সরকারের আইসিটি সচিব হিসেবে যোগদান করেন শীষ হায়দার চৌধুরী (এনডিসি)। সৎ ও নিষ্ঠাবান এই কর্মকর্তা দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে অনিয়ম দূর হয়ে গতি ফিরছে আইসিটি বিভাগের কাজে। চলমান প্রকল্পগুলোকে ক্লোজ মনিটরিং করছেন নিজেই। একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে একটি মনিটরিং টিমও কাজ করছে।
শুধু তাই নয়, দক্ষ জনবল তৈরির পাশাপাশি বিপ্লবে আহত ছাত-জনতা ও বেকারদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ কর্মী এবং উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে চায় সরকারের আইসিটি বিভাগ।
ঢাকা টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা জানান শীষ হায়দার চৌধুরী।
তিনি বলেন, আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে যে প্রকল্পগুলো চলমান সেই প্রকল্পগুলোকে ক্লোজ মনিটরিং করছি। একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে একটি মনিটরিং টিম কাজ করছে।
সচিব বলেন, আমার মন্ত্রণালয়ে অধীনে অনেকগুলো সংস্থা রয়েছে। যেমন হাইটেক পার্ক, বেসিহ, টিআইসিটি। এরমধ্যে ২১টি প্রকল্প চলমান, যার মধ্যে বৈদেশিক অর্থায়নের কয়েকটি প্রকল্প রয়েছে। আর অধিকাংশ আমাদের অর্থায়নে হচ্ছে। এই প্রকল্পগুলো আসলে কীভাবে হয়েছে না হয়েছে সেটা দেখা হচ্ছে। একটা প্রকল্প তৈরি করা হয় কী টার্গেট নিয়ে বা প্রকল্পে কি কাজ রয়েছে আমরা সেটা খতিয়ে দেখছি। আমরা টাইম টাইম রিপোর্ট পাচ্ছি এবং সেই আলোকেই কাজ করছি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে একটি প্রকল্প রয়েছে, যেখানে ১৬০ মিলিয়ন ডলার আমরা সেভ করেছি। এই প্রকল্পটি ২৬ সালের ডিসেম্বর শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু সেপ্টেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত আমরা এটার কাজ শেষ করতে পারব। আর মাত্র ১০ মাস প্রকল্পে চলবে। তারপরে আসবাবপত্র পড়ে থাকবে সেটা নয়। প্রকল্পের আউটপুট যেটা আছে সেটা যোগ্য হাতে হস্তান্তর করা হবে। সে অর্থ দিয়ে আমরা ওয়ার্ল্ড ব্যাংকে আরও কয়েকটি প্রকল্প কাজ চালাতে পারব।
তিনি আরও বলেন, যারা স্বৈরাচারীর দোসর, যাদের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ ছিল ছাত্রজনতার আন্দোলনকে প্রতিহত করার, তাদেরকে চিহ্নিত করা হচ্ছে। তাদের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করছে। আর কিছু আছে যেমন চাকরি করতে গিয়ে, চাকরি বাঁচাতে গিয়ে হোক বা ভীতি থেকে হোক অথবা স্বল্প প্রেমের জন্য হোক তাদের বিষয়টিও সেভাবে দেখা হচ্ছে। স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ বিগত ১৫ বছর যেভাবে প্রত্যেকটি স্তরে তাদের লোক প্রদান করেছে সেই ক্ষেত্রে দেশপ্রেমিক লোক খুঁজে পাওয়া খুবই দুরূহ। তারপরও কিছু লোক আছে যাদের দেশপ্রেম ১০০% আবার কারো ৫০% রয়েছে। এখন মন্দের ভালো নিয়ে এগোতে হবে। নতুন করে সৎ ও যোগ্য লোক তৈরি করার কাজ করতে হবে। বর্তমান বিপ্লবী সরকার যেই কাজ করছে তার মধ্যে অন্যতম হলো কোনো ব্যক্তির পূজা থাকবে না। দেশের জন্য কাজ করতে হবে আমরা সেই দিকটা গুরুত্বসহ দেখছি। যারা দেশে ও বিদেশি পরিশ্রম করে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল করছে তাদের সেই পরিশ্রম যেন ব্যর্থ না হয় সেই আলোকে কাজ করে যাচ্ছে বর্তমান সরকার।
তিনি বলেন, আমরা যখন সংস্কার নিয়ে কাজ করছি তখন আমাদের তিনটা ধাপে অগ্রসর হতে হচ্ছে-
১. আমরা জিডিপি অর্জন করতে পেরেছি কি না ২. যে প্রকল্পগুলো নেওয়া হয়েছে কীভাবে নেওয়া হয়েছে, সঙ্গে কারা জড়িত ৩. যে প্রকল্পগুলো আসবে সেটা কোন নিয়মের আওতায় আসবে। যেমন- অনেক প্রকল্প ছিল একটা বিশেষ পরিবারের নামে। একই নামে একাধিক প্রকল্প ছিল। আমাদের একটা প্রকল্প চলমান যার মাঝে একে পরিবারে ১৩ জনের সুযোগ সুবিধা নেওয়ার ব্যাপারে কথা আছে। তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি কাজ করছে। সেই প্রকল্প এখন বন্ধ আছে।
তিনি বলেন, আমার একটা স্বাক্ষরে চলে যাবে অডিট অফিসে। কিন্তু সেটা করার আগে আমি একটা তদন্ত কমিটি মাধ্যমে তদন্ত করিয়ে একটি রেজাল্ট এনে সেটা অতীতের রিপোর্টের সাথে মিলিয়ে দেখি যে কোথাও কোনো গরমিলের সুযোগ নিয়েছে কি না। যদি হয়ে থাকে তাহলে যথাযথ কর্তৃপক্ষ সেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। এছাড়াও যে কোম্পানিগুলো আমাদের সাথে অতীতে কাজ করছে তাদের নিয়ে অনেক কথা রয়েছে। আমরা সে বিষয়টিও খতিয়ে দেখছি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যে প্রকল্পগুলো চলমান আছে সেগুলো চলবে। যেগুলো নিয়ে সন্দেহ অথবা সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রশ্ন উঠেছে অথবা গণমাধ্যমের মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি সেগুলোর তদন্ত চলছে। তদন্তের স্বার্থে সেই প্রকল্পগুলো বন্ধ আছে। আর যে প্রকল্পগুলো স্বচ্ছতার সহিত কাজ করছে এবং বিশ্ব ব্যাংকসহ যারা অর্থায়ন করছেন তাদের রিপোর্ট যদি পজিটিভ হয় এবং তারা যদি মনে করে যে সঠিক কাজ চলমান তাহলে তারা একটি রিপোর্ট দেয়। তারপরে কাজটি বা প্রকল্পটি চলমান থাকবে।
তিনি আরও বলেন, উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেছেন যে ছাত্র বা জনতা জুলাই বিপ্লবের আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয় অথবা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীরা আহত হয়েছেন অথবা যে পরিবারগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদেরকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উদ্যোক্তা তৈরি করে তাদের পাশে থাকার সুযোগ রয়েছে।
আইসিটি সেক্টরকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য আমরা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে চাই। তাহলে দক্ষ লোকের বিকল্প নেই। এই বিপ্লবী সরকার চাচ্ছে যে যুবকশ্রেণি বেকারত্বের রোষানালে আছে তাদেরকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলতে। একজনকে দেখতে হবে যে তিনি আরও ১০০ জনকে উদ্যোক্তা হতে সহায়তা করবেন। তাহলে আমরা বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে পারব। বর্তমান সরকার এই দিক বিবেচনা করে কাজ করা যাচ্ছে। আমরা সেই কাজের সহযোগী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছি।
ঢাকাটাইমস/০৭নভেম্বর/ িএস
মন্তব্য করুন