ডিবি এখন আস্থার জায়গা: রেজাউল করিম
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটগুলোর একটি গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। বিগত সময়ে ডিবির বিরুদ্ধে ছিল নানা অভিযোগ, আলোচনা-সমালোচনা। বিশেষ করে সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদকে ঘিরে সবচেয়ে বেশি সমালোচনা হয়। এক পর্যায়ে কার্যালয়টিকে ‘হারুনের ভাতের হোটেল’ বলে আখ্যা দিতে শুরু করে মানুষ।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ডিবিকে নানাভাবে ঢেলে সাজানো হয়েছে। আলোচিত রুমটি, যেখানে বিভিন্ন মানুষকে খাবার খাইয়ে ছবি তুলে প্রচার করা হতো, কর্মকর্তাদের অফিস কক্ষ বানানো হয়েছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর যেসব মামলা হয়েছে তার বেশির ভাগ আসামি গ্রেপ্তার করেছে ডিবি পুলিশ, সংখ্যায় তা দুই শতাধিক হবে।
ডিবির বর্তমান কার্যক্রম নিয়ে ঢাকা টাইমসের সঙ্গে কথা বলেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের এ গোয়েন্দা শাখাটির দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত কমিশনার রেজাউল করিম মল্লিক। তিনি এরই মধ্যে ডিবিতে দুই মাস পূর্ণ করেছেন।
রেজাউল করিম মল্লিকের কাছে ঢাকা টাইমস জানতে চেয়েছিল ‘হারুনের ভাতের হোটেল’ বলে আখ্যা পাওয়া সেই কক্ষটি সম্পর্কে। এ বিষয়ে ডিবিপ্রধান বলেন, ‘ভাতের হোটেল তো এখন নেই, অনেক আগেই তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যে রুমকে ভাতের হোটেল বলা হতো, সেটি কর্মকর্তাদের অফিস কক্ষ বানানো হয়েছে।”
‘জনগণের সেবা ও কল্যাণ বলতে যা বোঝায়, ডিবি এখন সেটা করার চেষ্টা করছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। বলেন, “আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ নিয়ে এলে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে সমাধানের চেষ্টা করি। এতে সেবাপ্রত্যাশীরা অনেক খুশি। এখন তারা সরাসরি দেখা করে কথা বলতে পারেন।”
ডিবি এখন আস্থার জায়গা। অনেক সেবাপ্রত্যাশী বলছেন, ‘ডিবি আমাদের সমস্যার সমাধান করতে পারুক বা না পারুক অন্তত চেষ্টা করে। আগে তো আমরা ডিবিতে ঢুকতেই পারতাম না’।
একসময় ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদসহ অনেককে তুলে এনে নির্যাতন করা হতো ডিবিতে। আদায় করা হতো মোটা অঙ্কের টাকা- এমন অভিযোগ ছিল। এ বিষয়ে রেজাউল করিম মল্লিকের ভাষ্য, তিনি যোগ দেওয়ার পর গত দুই মাসে এসব কিছুই ঘটেনি, ভবিষ্যতেও ঘটবে না।
তিনি বলেন, “আগে প্রায় সময়ই গণমাধ্যমে দেখতাম ডিবি তুলে এনে টাকা নিয়েছে, নির্যাতন করেছে, মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করেছে। এখন খোঁজ নেন, দেখেন কিছু পান কি না।”
“কেন অন্যায়ভাবে একজনকে তুলে আনব, কেন মিথ্যা মামলা দিব?” বলেন রেজাউল করিম।
সাধারণ মানুষ যেন সুবিচার পায়, জুলুম থেকে বাঁচতে পারে সেটি নিশ্চিত করেছেন বলে দাবি ডিএমপির গোয়েন্দা প্রধানের। তিনি নিজেও আইনের ঊর্ধ্বে নন। কোনো কর্মকর্তা আইন লঙ্ঘন করলে, দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন- এমনটাও উল্লেখ করেন।
ডিবি এখন কোন কোন বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে জানতে চাইলে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার রেজাউল করিম বলেন, “আমাদের অস্ত্র-মাদক উদ্ধার, সাইবার, মানবপাচারসহ একাধিক টিম আছে। তারা সবসময় তাদের কাজ করেন। রাজধানীতে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং অপরাধ নির্মূলে কাজ করছি।”
সম্প্রতি রাজধানীতে অপরাধ কর্মকাণ্ড বেড়েছে। বিশেষ করে চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ইভটিজিং হচ্ছে। এসব বন্ধে ডিবির অভিযান আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমরা গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে চেকপোস্ট ও টহল বাড়িয়েছি। অনেককে আমরা আইনের আওতায় এনেছি।”
‘দ্রুতই অপরাধ প্রবণতা আরও কমে আসবে’ বলে মনে করেন এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা।
উল্লেখ্য, রেজাউল করিম মল্লিক পুলিশ বাহিনীতে কর্মজীবন শুরু করার দেড় বছরের মধ্যে বরখাস্ত করে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এলে তিনি চাকরি ফিরে পান। আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে আবার ক্ষমতায় এলে বিভিন্নভাবে নির্যাতন, অবহেলার শিকার হন পুলিশের এই কর্মকর্তা। প্রায় ১৮ বছর তাকে পুলিশের কম গুরুত্বপূর্ণ পদে রাখা হয়। দেওয়া হয়নি পদোন্নতি। সর্বশেষ তিনি টাঙ্গাইল ও সিলেট সিআইডি এবং ট্যুরিস্ট পুলিশের এসপি হিসেবে দীর্ঘদিন কর্মরত ছিলেন।
ডিবির মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় কীভাবে দায়িত্বে পেলেন- জানতে চাইলে রেজাউল করিম মল্লিক বলেন, “ঢাকায় কর্মজীবন কাটাব, বিষেশ করে ডিএমপিতে দায়িত্ব পাব এটা কোনো দিন ভাবিনি। যেভাবে অবহেলিত ছিলাম, ধরেই নিয়েছিলাম এভাবেই চাকরি জীবন শেষ হবে। কিন্তু ৫ আগস্টের পর বর্তমান সরকার আমাকে তুলে এনেছে। আমি অনেক কষ্ট সহ্য করেছি। পুলিশের যত অগুরুত্বপূর্ণ পদ আছে সেখানে আমাকে পদায়ন করা হতো। ছুটি দেওয়া হতো না। আমাকে তারা এতটাই কষ্ট দিয়েছে, আমার বাবা, মা ও বড় ভাইয়ের মৃত্যুর সময় তাদেরকে দেখতে দেয়নি। পিবিআইয়ের সিলেট বিভাগের দায়িত্বে থাকাকালীন সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচন ছিল। তখন আমি বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হকের পক্ষে কাজ করব- এই ভেবে আমাকে রাতারাতি রংপুরে বদলি করে দেওয়া হয়।”
ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালানো আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের শতাধিক নেতাকর্মীকে চিহ্নিত করেছে ডিবি। তাদের গ্রেপ্তারে গঠন করা হয়েছে গোয়েন্দা পুলিশের একটি বিশেষ দল। তারা বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাচ্ছে- জানান রেজাউল করিম মল্লিক। এ বিষয়ে ঢাকা টাইমসকে তিনি বলেন, “জুলাই ও আগস্টে শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালানো অধিকাংশকে এরই মধ্যে শনাক্ত করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল ফুটেজের পাশাপাশি সিসিটিভি ক্যামেরা, গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবি ও গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণ করে তাদের নাম-পরিচয় বের করা হয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারে ডিবির বিশেষ টিম কাজ করছে।”
(ঢাকাটাইমস/০৩নভেম্বর/এসএস/এফএ)
মন্তব্য করুন