দখল-দূষণে রাজবাড়ীর চন্দনা নদী এখন খাল

এম. মনিরুজ্জামান, রাজবাড়ী
 | প্রকাশিত : ২৮ জুন ২০২১, ১৫:৪৯
এটা এককালের প্রমত্তা খরস্রোতা চদন্দা নদীর চিত্র। এখন ওই নদী পানিশূন্য, কোথাও হাঁটুপানি। কোথাও কোথাও মাটি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। যেসব জায়গায় পানি রয়েছে সেটুকুও স্থানীয়দের ময়লা-আবর্জনায় দূষিত হয়ে গেছে। অনেক প্রভাবশালী নদীর দুই পাড় দখল করে গড়ে তুলছেন আবাসিক বহুতল ভবন। নদীর দুই পাড়ে বসবাসকারী মানুষের ব্যবহারের বর্জ্য ও টয়লেটের মল এসে পড়ছে নদীতে। এতে করে দূষিত হচ্ছে নদীর পানি।

চন্দনা। যার জন্ম পদ্মা নদী থেকে। রাজবাড়ী জেলার পাংশা-কালুখালী-বালিয়াকান্দি উপজেলার উত্তর-পশ্চিম দিয়ে বেষ্টিত এই নদীটি। এক সময় যার ছিল যৌবন। চলত বড় বড় পানসি নৌকা। অথচ এ নদীটি এখন খালে পরিণত হয়েছে। একসময় এই চন্দনাও ছিল প্রমত্তা নদী। এখন বর্ষাকালে এ নদীতে কিছু দিনের জন্য পানি থাকলেও প্রায় সারা বছরই থাকে পানিশূন্য। আর এ সুযোগে প্রভাবশালী দখলদাররা নদীর দুপাশ দখল করে নিচ্ছে। নদীর দুপাড় প্রভাবশালী ও ভূমিদস্যুরা দখল করে গড়ে তুলছে আবাসিক বহুতল ভবন। অবৈধ দখলদারদের কারণে প্রতিনিয়ত সংকুচিত হয়ে বর্তমানে নদীটি খালে পরিণত হয়েছে।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, কোথাও পানিশূন্য, কোথাও হাঁটুপানি। কোথাও কোথাও মাটি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। যেসব জায়গায় পানি রয়েছে সেটুকুও স্থানীয়দের ময়লা-আবর্জনায় দূষিত হয়ে গেছে। অনেক প্রভাবশালী নদীর দুই পাড় দখল করে গড়ে তুলছেন আবাসিক বহুতল ভবন। নদীর দুই পাড়ে বসবাসকারী মানুষের ব্যবহারের বর্জ্য ও টয়লেটের মল এসে পড়ছে নদীতে। এতে করে দূষিত হচ্ছে নদীর পানি।

পাংশা উপজেলার বৃদ্ধ আব্বাস আলী বলেন, ‘এই নদীতে এক সময় নানা বৈচিত্র্যময় নৌকা, এক মাল্লা, দুই মাল্লা, গয়না, পানসি, ছিপ, ডিংগি চলত। কিন্তু দখলদারদের কারণে সেই নদীটি এখন খালে পরিণত হয়েছে। সেই সঙ্গে এই নদীতে চাষাবাদও শুরু করেছেন অনেক প্রভাবশালী দখলদাররা। জবরদখল-বসতি স্থাপন ও ভরাটের কারণে এখন নদীটির অস্তিত্ব ও নাব্যতা হারিয়ে খালে পরিণত হয়েছে। তার দাবি, নদী খনন ও দখলমুক্ত করে নদীর আপন গতি ফিরিয়ে আনবে প্রশাসন।

কালুখালী উপজেলার ছালাম শেখ জানান, ছোট বেলায় দেখেছি অনেকেই এই চন্দনা নদীতে মাছ ধরে তাদের পরিবার চালাত। এ ছাড়াও নদীর দুই পাশের কৃষি জমিতে সেচ, গৃহপালিত পশুপাখির গোসলসহ নানা কাজে নদীর পানি ব্যবহার করত। অথচ এখন পানিই থাকে না। যতটুকু থাকে সেটাও ব্যবহার অনুপযোগী। বসতবাড়ির টয়লেটের মল গিয়ে পানি দূষিত হচ্ছে।

পলাশ হোসেন নামে আরেকজন বলেন, দখলদারদের কারণে নদীটি এখন মৃত প্রায়। কয়েক বছর আগে নদীর নাব্য ফিরিয়ে আনতে ড্রেজিং করা হলেও কোনো কাজে আসছে না। এখন বর্ষাকালেও পানি থাকে না।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, এক সময় চন্দনা নদীর প্রস্থ ছিল ২০০ ফুটের মতো। বর্তমানে সেটা দাঁড়িয়েছে ৮০ থেকে ১০০ ফুটে। এ ছাড়াও রাজবাড়ীতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমি আছে ১৭৭৬ একর। তবে কী পরিমাণ জমি বেদখল আর নদী দখল করে অবৈধ স্থাপনা গড়া হয়েছে তার কোনো তথ্য নেই ।

রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল আহাদ জানান, চন্দনা নদী দখলের বিষয়টি তার জানা নেই। সাংবাদিকদের কাছ থেকে প্রথম জানতে পারেন তিনি। পরে তিনি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অভিযোগ করতে বলেন। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে অভিযোগের কপি পেলে অভিযোগকারীকে সঙ্গে নিয়ে দখল হওয়া স্থান পরিদর্শনে যাবেন। পরিদর্শন শেষে নদী দখলের বিষয়ে সত্যতা পাওয়া গেলে পানি উন্নয়ন বোর্ড দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন।

(ঢাকাটাইমস/২৮জুন/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :