সেই চেয়ারম্যানের হাতে এবার লাঞ্চিত স্বাস্থ্য সহকারী

বাউফল (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৮ আগস্ট ২০২১, ১৯:৫৭ | প্রকাশিত : ০৮ আগস্ট ২০২১, ১৯:০৮

পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায় সালিস বৈঠকে কিশোরীকে বিয়ে করে সমালোচিত হওয়া সেই ইউপি চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদার এবার এক স্বাস্থ্যকর্মীকে প্রকাশ্যে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় বিচার চেয়ে ওই স্বাস্থ্যকর্মী রবিবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেছেন।

ঘটনার শিকার স্বাস্থ্যকর্মী মো. আল আমিন সিকদার (৪২) কনকদিয়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের স্বাস্থ্য সহকারী হিসেবে কর্মরত আছেন। শনিবার গণটিকাদান কর্মসূচির সময় বেলা ১১টায় ওই ইউনিয়নের পরিষদ ভবনে তাকে লাঞ্ছনার ঘটনা ঘটে। এ সময় প্রায় এক ঘণ্টা টিকাদান কর্মসূচি বন্ধ ছিল বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, শনিবার কনকদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে করোনা প্রতিষেধক টিকার কার্যক্রম চলার সময় বেলা ১১টার দিকে চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদার আসেন। এ সময় চেয়ারম্যান স্বাস্থ্যসহকারী আল আমিন সিকদারকে তার নির্দেশ অনুযায়ী টিকা কার্যক্রম পরিচালনা করতে বলেন।

আল আমিন সিকদার তার নির্দেশ পালন না করায় তাকে কিল-ঘুষি মারেন। এর প্রতিবাদ করলে আরেক সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক তাছলিমা বেগমকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন। এ ঘটনার কারণে প্রায় এক ঘণ্টা টিকাদান কর্মসূচি বন্ধ ছিল।

আল আমিন ওই ইউনিয়নের ঝিলনা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা বারেক সিকদারের ছেলে। তিনি বলেন, ‘সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী রেজিস্ট্রেশন করে আমরা কনকদিয়া ইউনিয়নে ৬০০ জনকে করোনা ভ্যাকসিন দেব। এজন্য সব আয়োজন সম্পন্ন করে কার্যক্রম শুরু করি। চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদার বেলা ১১টার দিকে এসে আমাদেরকে বলেন, যারা ভ্যাকসিন নিতে আসছেন তাদের ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি রেখে ভ্যাকসিন দিয়ে দেন।’

‘আমি সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী রেজিস্ট্রশনের কথা বললে তিনি (চেয়ারম্যান) আমার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে এলোপাথারি কিল-ঘুষি এবং লাথি মারেন। আমি অজ্ঞান হয়ে ফ্লোরে পড়ে যাই। একপর্যায়ে আমার সহকর্মীদের সেবায় আমি সুস্থ হয়ে উঠি। এরপর শুনি তাসলিমা আপাকেও (ইউনিয়ন সহকারি স্বাস্থ্য পরির্দশক) গালাগালি করেছেন তিনি।’ বলেন আল আমিন।

সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক তাছলিমা বেগম বলেন, ‘চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদার যে ভাষায় আমাকে গালাগাল করেছেন তা মুখে শোভা পায় না।’

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. প্রশান্ত কুমার সাহা বলেন, ‘আমার স্বাস্থ্যকর্মী আল আমিন সিকদার ভ্যাকসিন কার্যক্রম শেষ করে আমাকে ওই দিন রাতে ফোনে জানিয়েছেন। আমরা এ ব্যাপারে সরকারি বিধি অনুযায়ী আইনি ব্যবস্থা নেব।’

অভিযুক্ত চেয়ারম্যান শাহীন হাওলাদার বলেন, ‘নিজেদের দোষ ঢাকার জন্য আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে। যারা আইডি কার্ড নিয়ে আসবে তারা টিকা পাবে। অথচ এখানে টিকা দিতে এসে স্বাস্থ্যকর্মীরা নিজেদের আত্নীয়-স্বজনকে টিকা দিচ্ছেন। ফলে বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে আমি প্রতিবাদ করেছি।’

‘কাউকে মারধর কিংবা গালাগালি করার অভিযোগ সত্য নয়। স্বাস্থ্য সহকারী আল আমিন ও সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক তাছলিমা বেগম দুজনই বিএনপি করেন। তারা আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করতেই উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করেছেন।’ বলেন চেয়ারম্যান।

গত ২৫ জুন সালিস বৈঠকে এক কিশোরীকে জোর করে বিয়ের পর ব্যাপক সমালোচিত হন চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদার। এর আগে তিনি সরকারি কর্মকর্তা, মুক্তিযোদ্ধা, ব্যবসায়ী, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষকে মারধর করে ব্যাপক সমালোচিত হন। শাহিন হাওলাদার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি ওই ইউপি থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে পর পর দুইবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

(ঢাকাটাইমস/৮আগস্ট/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :