পাকিস্তানে দুবার বিক্রি বাংলাদেশি গৃহবধূ, ফিরলেন ৩০ বছর পর

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, ২০:২৪

ফেসবুকের কল্যাণে ৩০ বছর পর নিজ বাড়িতে ফিরেছেন। তারপরও থাকতে পারছেন না মায়ের কাছে। ফিরে যেতে হবে আবার পাকিস্তানে। সেখানে তার সংসার আছে, আছে স্বামী-সন্তান। বাড়ি ফিরে গ্রামের সেই চেনা মেঠা পথ আর প্রিয় মানুষগুলো জাহেদার কাছে বড্ডো অপরিচিত লাগে। তারপরও শান্তি, তিনি মায়ের মুখ দেখতে পেরেছেন।

ঝিনাইদহ পৌরসভা এলাকার জব্বার আলী শেখের বড় মেয়ে জাহেদা খাতুন। এক সময় বাংলাদেশে স্বামী-সংসার সবই ছিল তার। কিন্তু সতিনের চক্রান্তে নারী পাচারকারীদের হাত বদলাতে বদলাতে আশ্রয় পান পাকিস্তানে। সেখানেই থিতু হন তিনি। পাকিস্তানি যুবকের সঙ্গে নতুন করে সংসার পাতেন জাহেদা।

৩৫ বছর পর ফেসবুকের কল্যাণে জাহেদা ফিরে আসেন বাবার পুরানো ভিটায়। সাক্ষাৎ পান মা, বোন, ভাই ও পাড়া প্রতিবেশীদের। রূপকথার গল্পের মতো মনে হলেও ঝিনাইদহের সেই জাহেদার লড়াকু জীবনের বাস্তবতা এমনই।

প্রতিকূল পরিবেশ মানিয়ে জাহেদা বারবার যুদ্ধ করেছেন জীবনের সঙ্গে। বাঁচার জন্য তিনি লড়ে গেছেন। ২৫ বছর বয়সে তিনি পাকিস্তানে পাচার হয়েছিলেন। এখন তার বয়স ৫৫ বছর।

১৯৮০ সালে ২০ বছর বয়সে পাবনা জেলার ঈশ্বরদী গ্রামের আব্দুর রহিমের সঙ্গে বিয়ে হয় জাহেদা খাতুনের। রহিমের আরও একটি স্ত্রী ছিল। সতিনের ঘর। বিবাদ লেগেই থাকত। বিয়ের পাঁচ বছর পর শ্বশুরবাড়ির লোকজন নেশাজাতীয় ওষুধ খাইয়ে নারী পাচারকারী চক্রের কাছে বিক্রি করে দেয় জাহেদা খাতুনকে। গোপন থেকে যায় সেই খবর।

অনেক খোঁজাখুঁজির পরও তাকে না পেয়ে পরিবারের লোকজন ভেবেছিল মারা গেছেন তিনি। অবশেষে গত ২৯ আগস্ট সবাইকে চমকিয়ে বাড়ি পেরেন জাহেদা।

জাহেদার এই ফিরে আসার গল্প অনেক লম্বা। বাংলাভাষা ভুলে গেছেন জাহেদা। উর্দু ভাষায় জাহেদা জানান, নারী পাচারকারীরা পাকিস্তানের করাচি শহরে নিয়ে যায় তাকে। সেখানেও তাকে দুই দফায় বিক্রি করা হয়। সব শেষ এক মৌলভী সাহেব কিনে নেন তাকে। ঠাঁই হয় পাকিস্তানের একটি মাদ্রাসায়। ভাগ্য ভালো জাহেদার। ওই মাদ্রাসার মৌলভী সাহেব এক পাকিস্তানী যুবক গুল্লা খানের সঙ্গে বিয়ে দেন তাকে।

দুই সন্তানের মা হন জাহেদা। ছেলে মারা গেছেন। একমাত্র মেয়ে ইয়াসমিন (২২) ও পাকিস্তানি স্বামীকে নিয়ে এখন সংসার তার। মেয়ের বিয়ে হয়েছে। কিন্তু কিভাবে বাংলাদেশে ফিরলেন, এমন প্রশ্নের জবাবে জাহেদা বলেন, ২০১৮ সালের দিকে পাকিস্তানি যুবক ওয়ালিউল্লাহ মারুফের কাছে জীবনের করুন কাহিনী তুলে ধরেন জাহেদা।

ফেসবুক পেজে জাহেদাকে নিয়ে ভিডিওসহ উর্দুতে পোস্ট করেন যুবক ওয়ালিউল্লাহ মারুফ। তার দেওয়া পোস্ট চোখে পড়ে নেত্রকোণা জেলার ছেলে মনজুর আহমেদের। তিনি সেটি বাংলায় অনুবাদ করেন। এরপর শুরু হয় জাহেদার শিকড়ের সন্ধান। মনজুর আহমেদ ছুটে আসেন ঝিনাইদহের ভুটিয়ারগাতী গ্রামে। সেখানেই পেয়ে যান জাহেদার মা-বাবার পরিচয়।

মনজুর ফেসবুকে যোগাযোগ করেন পাকিস্তানের ওই যুবকের সঙ্গে। তার মাধ্যমে মায়ের সঙ্গে কথা হয় জাহেদার। মায়ের সঙ্গে কথা বলার পর দেশে ফিরে আসার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেন তিনি। টাকা ও পাসপোর্টের অভাবে ফিরতে পারছিলেন না জাহেদা খাতুন। পাকিস্তানের যুবক ওয়ালিউল্লাহ মারুফ সব ব্যবস্থা করে দেন।

অবশেষে গত ২৮ আগস্ট দুরু দুরু মন আর স্বজনদের সঙ্গে মিলিত হওয়া উচ্ছ্বাস বুকে নিয়ে বিমানে চেপে বসেন জাহেদা। নেত্রকোণার যুবক মনজুর আহমেদ বিমানবন্দর থেকে জাহেদাকে নিয়ে ঝিনাইদহে ফেরেন।

৩০ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া জাহেদা ফিরে আসার খবর ছড়িয়ে পড়লে গ্রামের মানুষ, আত্মীয় স্বজন সবাই ছুটে আসেন জাহেদাকে দেখতে। জাহেদা জানান, মাত্র তিন মাসের ভিসা নিয়ে এসেছেন বাংলাদেশে।

বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহ পৌরসভার মেয়র সাইদুল করিম মিন্টু বলেন, দীর্ঘ ৩০ বছর পর জাহেদা তার বাবার বাড়ি ফিরে আসায় তিনি খুব খুশি হয়েছেন। তাকে ফিরিয়ে আনতে যারা কাজ করেছেন, তাদের প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। একইসঙ্গে পাচারের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেন জাহেদা।

(ঢাকাটাইমস/৬সেপ্টেম্বর/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :