অথৈ পানিও থামাতে পারেনি স্কুলের উপস্থিতি!

নিজস্ব প্রতিবেদক, টাঙ্গাইল
 | প্রকাশিত : ১২ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৯:০০

দেড়বছর পর স্কুল। আনন্দে আত্মহারা শিশুরা। বছরের শুরুতে নতুন বই হাতে পেলেও ক্লাস পায়নি স্কুল কলেজের শিশুরা। গেলো বছরেও একই অবস্থা। নতুন বই পেয়ে বিদ্যালয়ে খেলাধুলা শেষ না হতেই ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ হয়ে যায় দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সেই থেকে দেড়বছর বন্ধ ছিল শিক্ষার্থীদের প্রিয় ক্যাম্পাস।

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের মাত্রা কমে যাওয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার ঘোষণা দেয় সরকার। চারদিকের বন্যায় অনেকটা অনিশ্চয়তায় ছিল ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি। অবশেষে অথৈ পানিও থামাতে পারেনি শিক্ষার্থীদের স্কুলের উপস্থিতি। নৌকা বেয়ে ক্লাসে এসেছে বন্যা কবলিত এলাকার শিক্ষার্থীরা। এমন চিত্র লক্ষ করা গেছে টাঙ্গাইলের বন্যা কবলিত এলাকা বাসাইলে। কোমলমতি শিশুদের এমন আগ্রহে মুগ্ধ হয়েছেন শিক্ষকরাও। সহপাঠীদের সঙ্গে দেখা করতে পেরে উল্লাসিত এসব শিশু।

‘দীর্ঘদিন বাড়িতে বসে থেকে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। অপেক্ষায় ছিলাম কবে বিদ্যালয় খুলবে। আজ সেই অপেক্ষার প্রহর শেষ। আজ বিদ্যালয় খুলেছে। বন্যার পানি চারদিকে থৈ থৈ করছে। তারপরও নৌকা বেয়ে ঝুঁকি নিয়েই বিদ্যালয়ে এসেছি। বিদ্যালয়ে পৌঁছানো মাত্রই শিক্ষকরা আমাকে বরণ করে নেন।’ এভাবেই কথাগুলো বলছিল টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের সৈদামপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী হাবিবা আক্তার।

হাবিবা বলেন, ‘বিদ্যালয়ে গিয়ে প্রিয় শিক্ষক ও বন্ধু-বান্ধবীদের সঙ্গে দেখা হলো। বাবা-মা আরও উৎসাহিত হয়ে আমাকে বিদ্যালয়ে পাঠিয়েছেন। আমি নিজেই দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে নৌকা বেয়ে বিদ্যালয়ে এসেছি। আমার সঙ্গে আরও দুজন বান্ধবী নৌকায় এসেছে। তারাও আমাকে সহযোগিতা করেছেন। বিদ্যালয়ে এসে বেশ আনন্দ পেয়েছি।’

পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী সেজুতি সরকার বলে, ‘বিদ্যালয়ে এসে আমি খুবই আনন্দিত হয়েছি। দীর্ঘদিন পর শিক্ষক ও বন্ধু-বান্ধীদের সঙ্গে দেখা হলো। আমিও নৌকা নিয়ে বিদ্যালয়ে এসেছি। বন্যার পানি থাকায় সকল সড়ক ডুবে গেছে। এজন্য নৌকা ছাড়া আর বিকল্প উপায় নেই। বিদ্যালয়ে আসা মাত্রই শিক্ষকরা আমাদের বরণ করে নেন।’

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পারভীন সুলতানা খান বলেন, ‘প্রায় দেড় বছর পর আজ বিদ্যালয় খুলেছে। আমরা এই দিনটির অপেক্ষায় ছিলাম। শিক্ষার্থীরা খুব আগ্রহ নিয়ে বিদ্যালয়ে এসেছে। আমরা তাদের বরণ করে নিয়েছি। বিদ্যালয়ে ক্লাস নিতে ও তাদের বরণ করতে আমাদের আগে থেকেই প্রস্তুতি ছিল। বিদ্যালয়ে আসার পর সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে শিক্ষার্থীদের নিয়ে করোনাভাইরাস ও ভেঙ্গু বিষয়ে আলোচনা করা হয়। শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে এসে খুবই আনন্দ পেয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘প্রথম দিন আমরা পঞ্চম ও তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিচ্ছি। প্রথম দিনে পঞ্চম শ্রেণিতে ৪১ জনের মধ্যে ২৮ জন ও তৃতীয় শ্রেণিতে ৪১ জনের মধ্যে ৩২ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত রয়েছে।’

বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘বিদ্যালয়ে সব প্রস্তুতি আগে থেকেই নেওয়া হয়েছিল। সকালে শিক্ষার্থীদের বরণ করে নেওয়া হয়। এরপর সঠিক সময়ে ক্লাস শুরু হয়। আমরা করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সব ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছি। বিদ্যালয়ে পানি নেই। তবে বিদ্যালয়ের চারদিকেই বন্যার পানি রয়েছে। এজন্য শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা নৌকা করে বিদ্যালয়ে এসেছে।’

এদিকে কোথাও কোথাও ক্যাম্পাসে পানি থাকায় পাশের বাড়িতেও ক্লাস নেয়ার খবর পাওয়া গেছে।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সদানন্দ পাল বলেন, ‘উপজেলায় ৭৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েই একযুগে পাঠদান শুরু হয়েছে। তবে একটি বিদ্যালয়ে পানি থাকার কারণে পাশের বাড়িতে পাঠদান করানো হচ্ছে। এছাড়া আর কোনও সমস্যা নেই। ’

জেলা শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়, টাঙ্গাইলের দুই হাজার ৪২০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শ্রেণি কক্ষে ক্লাশ শুরু হয়েছে। এর মধ্যে এক হাজার ৬২৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ৭৯৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফুল দিয়ে বরণসহ নানা আয়োজনে শিক্ষার্থীদের বরণ করে নেয়া হয়েছে। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাস্কসহ করোনা প্রতিরোধক সামগ্রীর ব্যবস্থা করা হয়েছে। দীর্ঘদিন পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলায় শিক্ষার্থীরা উচ্ছ্বাসিত।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল আজিজ বলেন, ‘জেলার সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণি কক্ষে স্বশরীরে ক্লাশ নেয়া হয়েছে। বাসাইলের রাশড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে ও শ্রেণিকক্ষে পানি থাকায় পাশের বাড়ির উঠানে ক্লাস নেয়া হয়েছে। এই বিদ্যালয়টি একতলা। কিন্তু বন্যার পানি প্রবেশ করা অন্য সব স্কুল ভবন বহুতল হওয়ায় বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষেই ক্লাস নেয়া সম্ভব হয়েছে।’

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা লায়লা খানম বলেন, ‘সারাদেশের সঙ্গে এক সঙ্গে টাঙ্গাইলের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শ্রেণিকক্ষে ক্লাস নেয়া হয়েছে। দীর্ঘ দিন পর স্কুলে ক্লাস করার সুযোগ পেয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক উচ্ছ্বাস দেখা গেছে।’

(ঢাকাটাইমস/১২সেপ্টেম্বর/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :