কোথায় হারালেন মুরাদ হাসান?

দেখতে দেখতে দুই সপ্তাহ পার হলো কোনো দেশে ঢুকতে না পেরে দেশে ফিরেছেন আলোচিত সংসদ সদস্য মুরাদ হাসান। তবে দেশে ফেরার পর আর কোনো হদিস নেই তার। একবারের জন্যও প্রকাশ্যে দেখা যায়নি তাকে। কোথায় আছেন সে নিয়ে আছে ধোঁয়াশা। যদিও নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে জানা গেছে, তিনি দেশে ফেরার পর উত্তরাতে তার ভাইয়ের বাসায় গিয়েছেন। সেখানেই সময় কাটছে তার।
ডা. মুরাদ নিজের ধানমন্ডির বাসায় গিয়েছেন কি না সে নিয়েও নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি৷
তবে কোনো খোঁজ না থাকলেও দেশের একাধিক জেলায় মুরাদের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা হচ্ছে। কোথাও করা হচ্ছে মামলার আবেদন৷ কোথাও তদন্ত করার জন্য নির্দেশনা দিচ্ছে আদালত। একাধিক জায়গায় ইতিমধ্যে মামলার আবেদন খারিজ করে দেয়া হয়েছে।
নানা সময়ে রাজনীতির ভেতরে-বাইরের বিভিন্ন ইস্যুতে বিতর্কিত বক্তব্য রেখে আলোচনা-সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে মুরাদ হাসানকে। সবশেষ বিএনপি চেয়ারপারসন ও তার পরিবারের নারী সদস্যদের নিয়ে বিতর্কিত বক্তব্য দেয়া নিয়ে কড়া সমালোচনার মুখে পড়েন সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান।
এই বক্তব্যের রেশ কাটতে না কাটতেই চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহীর সঙ্গে অশ্লীল ফোনালাপ ফাঁস হয় ডা. মুরাদের। এরপরই বেকায়দায় পড়ে যান মুরাদ। এমন কর্মকাণ্ডে চটে যান খোদ প্রধানমন্ত্রী। নির্দেশ দেন প্রতিমন্ত্রীর পদ ছাড়তে।
এরপরই শুরু হয় দলের অ্যাকশন৷ অব্যাহতি দেয়া হয় মুরাদের জেলা জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য সম্পাদকের পদ থেকে। একে একে উপজেলা, ইউনিয়নের পদ থেকেও মুরাদ হাসানকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
এরইমধ্যে আত্মগোপনে চলে যান এই রাজনীতিক। আত্মগোপনে থাকাবস্থায় জমা দেন পদত্যাগপত্র। গৃহীত হওয়ায় মন্ত্রীপরিষদের তালিকা থেকে বাদ পড়েন একসময়ে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা ডা. মুরাদ।
পরে হঠাৎ করেই খবর শোনা যায় দেশ ছাড়ছেন মুরাদ। যাচ্ছেন কানাডা। কিন্তু সেখানেও ভাগ্য সহায় হয়নি তার। বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন বিভাগের কর্মকর্তাদের জেরার মুখে আর দেশটিতে ঢোকার সুযোগ পাননি সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী। পরে চলে দুবাই। সেখানেও ব্যর্থ হওয়ার পর আর উপায় না পেয়ে মুরাদ হাসান গত ১২ ডিসেম্বর দেশে ফেরেন।
দেশে ফেরার পর ডা. মুরাদ এখন কোথায় আছেন, সেই তথ্য নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। তিনি এখন কোথায় আছেন, তা কেউ জানে না। তার ফোনও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।
অনেকের ধারণা, ডা. মুরাদ আত্মগোপনে রয়েছেন। সেখান থেকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। তার বিরুদ্ধে দেশের জেলায় জেলায় মামলা হচ্ছে, অনেক জেলায় মামলা দায়েরের আবেদন করা হয়েছে। ঢাকায়ও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। এসব কারণে হয়ত তিনি নিজেকে আপাতত আড়াল করে রেখেছেন।
গত ১২ডিসেম্বর বিকাল ৪টা ৫৫ মিনিটে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান তিনি।
বিমানবন্দরে নামার পর সাংবাদিকদের এড়াতে মুরাদ হাসান আন্তর্জাতিক টার্মিনাল ব্যবহার না করে অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল দিয়ে বের হন। তিনি সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে বিমানবন্দর ত্যাগ করেন।
মুরাদ হাসান ভিআইপি গেটের সামনে এলেও সেদিন সাংবাদিকদের দেখে আবার ভেতরে চলে যান। পরে বিমানবন্দরের ভেতর দিয়ে অভ্যন্তরীণ টার্মিনালে যান। সেখানে তার জন্য হোন্ডা সিআরভি ব্র্যান্ডের একটি গাড়ি রাখা ছিল। মাথা ও মুখ ঢেকে সেই গাড়িতে চড়ে তিনি বিমানবন্দর ত্যাগ করেন।
তিনি পুলিশের উপস্থিতিতে একটি প্রাইভেটকারে বিমানবন্দর ত্যাগ করেন। বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে সোজা উত্তরার দিকে যান তিনি।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি সূত্র বলছে, উত্তরায় মুরাদ হাসানের ভাইয়ের বাসা আছে। বিমানবন্দর থেকে তিনি সেখানে চলে যান। বর্তমানে সেখানেই আছেন।
এমন বিতর্কিত ইস্যুতে তার পাশে দলের কেউ না থাকায় পরিস্থিতি সামাল দেয়ার কোনো সুযোগই পাননি মুরাদ। অবশ্য মাঝে নিজের বিতর্কিত বক্তব্যের জন্য ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে ক্ষমা চেয়েছেন।
জানা গেছে, দলের মধ্যে বেশ প্রভাবশালী হয়ে ওঠা মুরাদ হাসান তার কর্মের ফল পেয়েছেন বলে মনে করছে আওয়ামী লীগ। ফলে এই ইস্যু তারাও আর আলোচনায় আনতে রাজি নন।
ঢাকাটাইমস/২৫ডিসেম্বর/বিইউ/ইএস

মন্তব্য করুন