রক্তের প্লাটিলেট কমে গেলে করণীয়

স্বাস্থ্য ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ২৯ ডিসেম্বর ২০২১, ১৪:৪৫
অ- অ+

মানুষের রক্তের মধ্যে শ্বেতকণিকা, লোহিত কণিকার সঙ্গে থাকে অণুচক্রিকা বা প্লাটিলেট। এই প্লাটিলেট একটি গুরুত্বপূর্ণ রক্তকণিকা; যা কাজ করে রক্ত জমাট বাঁধতে। প্লাটিলেটের স্বাভাবিক সংখ্যা প্রতি ঘন মিলিলিটারে দেড় লাখ থেকে সাড়ে চার লাখ। শুধু ডেঙ্গু জ্বরে নয়, বিভিন্ন রোগে রক্ত সংক্রমণে প্লাটিলেটের সংখ্যা কমতে পারে। তবে তা কমে এক লাখের নিচে আসে সাধারণত জটিল সময়ে।

প্লাটিলেট কমে যাওয়া মানেই শরীরে বাইরে ও ভিতরে রক্তক্ষরণের সম্ভাবনা বেড়ে যাওয়া। অনুচক্রিকার স্বাভাবিক মাত্রা দেড় লাখ থেকে সাড়ে চার লাখ। তবে যদি কখনও কাউন্ট ২০ হাজারের নিচে নেমে যায়; তখন ইন্টারনাল ব্লিডিংয়ের সম্ভাবনা থাকে। প্লাটিলেট যদি ৫ হাজারের কম হয়; তখন ব্রেন, কিডনি, হার্টের মধ্য রক্তক্ষরণের ভয় থাকে।

প্লাটিলেট কমে যাওয়ার কারণ কী? আসলে প্লাটিলেট কমে যাওয়ার প্রধান কারণ হলো দুটি- প্লাটিলেট ধ্বংস হয়ে যাওয়া আর নয়তো পর্যাপ্ত পরিমাণে তৈরি না হওয়া। যখন রক্তের প্লাটিলেট কাউন্ট কমতে শুরু করে; তখন তাকে বলা হয় থ্রোম্বোসাইটোপেনিয়া।

বিশেষজ্ঞদের মতে, প্লাটিলেট কমে যাওয়ার আরও কয়েকটি কারণ হলো- অ্যানিমিয়া বা রক্তে হিমোগ্লোবিন ও লোহিত রক্তকণিকা কমে যাওয়া, ভাইরাস সংক্রমণ, লিউকেমিয়া, কেমোথেরাপি, অতিরিক্ত মদ্যপান এবং ভিটামিন-বি ১২ এর অভাব।

এছাড়াও তীব্র মাত্রার ক্যানসার বা পিত্তথলির বিভিন্ন মারাত্মক রোগের কারণে কমতে পারে প্লাটিলেট। সেইসঙ্গে রক্তে ব্যাকটেরিয়াজনীত প্রদাহ, ওষুধের প্রতিক্রিয়া এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাজনীত রোগবালাইয়ের কারণে প্লাটিলেট ভেঙে যেতে পারে।

শরীরের ভিতরে বা বাইরে কোথাও রক্তবাহিকা ক্ষতিগ্রস্ত হলে রক্তপাত শুরু হয়। সেখানে ছুটে আসে অনুচক্রিকা। রক্ত জমাতে সাহায্য করে। ধীরে ধীরে শরীর থেকে রক্ত বেরিয়ে গেলে শরীরের প্রতিরোধক্ষমতা, রক্তের অক্সিজেন বহনক্ষমতা কমতে থাকে।

অনেক সময় প্লাটিলেটের মাপ বড় হলে অটোমেটেড সেল কাউন্টার ভুল করে তাকে লোহিত কণিকা বলে চিহ্নিত করতে পারে । তখন প্লেটলেট কাউন্ট রিপোর্টে কম আসে।

রক্তে আয়রনের ঘাটতি থেকেও হতে পারে প্লাটিলেটে ঘাটতি হয়। বেশ কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় প্লাটিলেট কমে।

অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় মহিলাদের প্লাটিলেট কমতে দেখা যায় শরীরে ভিটামিনের ঘাটতি হলেও ঘটতে পারে এমন ঘটনা।

এছাড়াও ব্লাড ক্যানসার, বোন ম্যারো সংক্রান্ত অসুখ, লিভারের বড়সড় সমস্যা, হলেও প্লাটিলেট কমে যেতে পারে। এইআইভি হলেও প্লাটিলেট কমতে পারে।

প্লাটিলেট কমে যাওয়ার লক্ষণসমূহ

ত্বকে বেগুনি রঙের চিহ্ন দেখা যায়। কারণ ত্বকের নিচে রক্তক্ষরণ হয়। শরীরের যেকোনো স্থান থেকে সূক্ষ্ম রক্তপাত, যা পিনপয়েন্টের আকারে দেখা দেয়। শরীরের কোথাও কাটলে অনেকক্ষণ ধরে রক্তপাত হয়। মাড়ি বা নাক থেকে রক্তপাত হতে পারে। প্রস্রাব বা মলের সঙ্গে রক্তপাত। মাসিকে অতিরিক্ত রক্তপাত হওয়া। ক্লান্তি ইত্যাদি।

প্লাটিলেট বা অনুচক্রিকার স্বাভাবিক মাত্রা দেড় লাখ থেকে সাড়ে চার লাখ। তবে যদি কখনও ২০ হাজারের নিচে নেমে যায়; তখন ইন্টারনাল ব্লিডিংয়ের সম্ভাবনা থাকে। প্লাটিলেট যদি ৫ হাজারের কম হয়; তখন ব্রেন, কিডনি, হার্টের মধ্য রক্তক্ষরণের ভয় থাকে। মেশিনে গুনলে ভুল হয়, কারণ প্লাটিলেট ক্লাপেম থাকায় মেশিন অনেকগুলোকে একসঙ্গে একটা ধরে সংখ্যা নিরুপণ করে।

ডেঙ্গু জ্বর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্লাটিলেটের বিষয়টি সকলের মাথায় বেশি করে ঘোরাফেরা করে। ডেঙ্গুর সবথেকে ভয়াবহ বিষয়টিই হল দ্রুত গতিতে প্লাটিলেট কমে যাওয়া। ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে ভাইরাস প্লাটিলেট তৈরি হতে বাধা সৃষ্টি করে , আবার ইমিউনিটি সিস্টেম ভুল করে প্লাটিলেট নষ্ট করে দিতে পারে। তখনই সঙ্কটটা বড় হয়ে দেখা দেয়।

ডেঙ্গু জ্বর হলে রক্তের সিবিসি (কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট) পরীক্ষা করার মাধ্যমে প্লাটিলেটের সংখ্যা নিরূপণ করা হয়। প্লাটিলেটের সংখ্যা এক লাখের কম হলে তাকে হেমোরেজিক বলে ধরে নেওয়া যায়।

প্লাটিলেট কমে যাওয়া বা বেড়ে যাওয়ার মাধ্যমে কিন্তু ডেঙ্গুর তীব্রতা মাপা হয় না। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্লাটিলেট কমে গিয়ে নয় বরং রোগী মারা যায় ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে। অর্থাৎ ডেঙ্গু ভাইরাসের কারণে রক্তনালিগুলো আক্রান্ত হয়। রক্তনালির গায়ে যে ছোট ছোট ছিদ্র থাকে সেগুলো বড় হয়ে যায়। তা দিয়ে রক্তের জলীয় উপাদান বা রক্তরস বের হয়ে আসে।

তখন রক্তচাপ কমতে থাকে, পিসিভি বা প্যাকড সেল ভলিউম বাড়তে থাকে। এটা ঠেকাতে তখন রোগীকে পর্যাপ্ত ফ্লুইড বা তরল দিতে হবে। এই তরল মুখে খাওয়ানো যেতে পারে বা শিরায় দেওয়া হয়ে থাকে।

ডেঙ্গু জ্বর হলে প্লাটিলেট কত তা ঘন ঘন না দেখে বরং রোগীর অন্যান্য বিষয়ে লক্ষ্য রাখুন। যেমন- রক্তচাপ ঠিক আছে কি-না, রোগী পানিশূন্যতায় ভুগছে কি-না, রক্তের পিসিভি বা হেমাটোক্রিট কেমন তা দেখা উচিত। যদি এমনটি হয় তাহলে পর্যাপ্ত তরল দিন বা ফ্লুইড কারেকশন করুন, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন।

(ঢাকাটাইমস/২৯ডিসেম্বর/আরজেড/এজেড)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
দোহার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নূরুল হক গ্রেপ্তার
‘প্যালেস্টাইন-২’ হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইসরায়েলে হামলা চালাল ইয়েমেন
সুবর্ণচর এক্সপ্রেস দ্রুত চালুর দাবিতে নোয়াখালীতে দেড়ঘণ্টা রেলপথ অবরোধ 
জেফারের তীরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দর্শক-শ্রোতার
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা