প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে অগ্রগণ্য ছিলেন, তবু জীবদ্দশায় বিএনপি থেকে বিচ্ছিন্ন

বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৩ জানুয়ারি ২০২২, ১৬:২৮ | প্রকাশিত : ২৩ জানুয়ারি ২০২২, ০৮:৪৭

যাদের সঙ্গে নিয়ে বিএনপির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করেন জিয়াউর রহমান তাদের অনেকেই নেই দলটির সঙ্গে। নানা সময়ে মান-অভিমানের কারণে বিএনপি ছেড়েছেন দলটির প্রতিষ্ঠাতার ঘনিষ্ঠরা। বিএনপির গঠনতন্ত্র তৈরির প্রক্রিয়ার সঙ্গে সরাসরি যুক্তদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা। একযুগেরও বেশি সময় ধরে বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক নেই আলোচিত এই রাজনীতিকের।

অবশ্য নানা সময় বিএনপির সমালোচনায় মুখর থাকলেও দলটির জন্য এখনো মন কাঁদে নাজমুল হুদার। তার ভাষ্য, বিএনপির সঙ্গে রক্তের সম্পর্ক। এটাকে ছাড়া সহজ নয়।

যদিও জীবদ্দশায় আর বিএনপির রাজনীতিতে নাজমুল হুদার ফেরার সম্ভাবনা যেমন ক্ষীণ। তেমনি বিএনপিও তাকে দলে ফেরাবে এমন কোনো আলামতও নেই রাজনৈতিক অঙ্গনে।

১৯৪৩ সালের ৬ জানুয়ারি ঢাকার দোহারে জন্ম নাজমুল হুদার। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সাবেক এই সদস্য ১৯৯১ সালে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন সরকারের তথ্যমন্ত্রী ছিলেন। চারদলীয় জোট সরকারের আমলে যোগাযোগমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

বিএনপির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে দলে থাকা এই নেতা ১/১১-র সময় বিএনপি চেয়ারপারসনের ঢাকা সেনানিবাসের বাড়ি হারানোর জন্য তার আইনজীবীদের দায়ী করে বক্তব্য দিয়ে দলে সমালোচিত হয়েছিলেন। বাড়ি হারানোর ঘটনায় প্রতিবাদের ওই সময় ঈদের আগে বিএনপি হরতাল দেওয়ার সিদ্ধান্তেরও সমালোচনা করেছিলেন তিনি।

এক পর্যায়ে বিএনপির প্রথম স্থায়ী কমিটির এই সদস্যকে দলের প্রাথমিক সদস্য পদসহ বহিষ্কার করা হয়।

তবে সেসময় নাজমুল ‍হুদার দাবি ছিল- যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিষ্কারের আগে কারণ দর্শানোর নোটিশও পাননি বলে দাবি ছিল এই রাজনীতিকের।

রাজনীতিতে টিকে থাকার লড়াইয়ে নামেন হুদা

বিএনপি থেকে বের হয়ে নাজমুল হুদা গঠন করেন বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ)। কিন্তু দলটির চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে দ্বন্দ্বে নিজের গড়া দলের কর্তৃত্ব হারিয়ে ‘তৃণমূল বিএনপি’ নামে আরেকটি দল গঠন করেন হুদা।

পরে ঢাকা-১৭ আসনে নৌকার প্রার্থী হওয়ার জন্য একাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন নাজমুল হুদা। কিন্তু মনোনয়ন দেয়নি আওয়ামী লীগ। গুলশান, বনানী ও ক্যান্টনমেন্ট এলাকা নিয়ে গঠিত এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচিত হন চিত্রনায়ক ফারুক।

একই নির্বাচনে অবশ্য নাজমুল হুদার মেয়ে বিএনপি থেকে মনোনয়ন চেয়েছিলেন তার মূল আসন ঢাকার দোহার থেকে।

২০১১ সালের ৭ নভেম্বর বিএনএফের আত্মপ্রকাশের পর ২০১২ সালের ১০ অগাস্ট নাজমুল হুদাকে কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক করা হয়েছিল। কিন্তু কিছুদিন না যেতেই সংগঠনবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ এনে নাজমুল হুদাকে বহিষ্কার করেন প্রধান সমন্বয়কারী আবুল কালাম আজাদ। আবুল কালাম আজাদ পরে সংসদ সদস্যও নির্বাচিত হন। কিন্তু নাজমুল হুদার কোনো গতি হয়নি।

পরে ২০১৫ সালের ২০ নভেম্বর ‘তৃণমূল বিএনপি’ গঠন করেন নাজমুল হুদা। সেই দলের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে তিনি বিএনপিতে খালেদা জিয়ার নেতৃত্ব নিয়ে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছিলেন। দলের নেতৃত্বে অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের প্রভাব, সিদ্ধান্তহীনতা, দ্বিধা-দ্বন্দ্ব বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচিত কমিটি গঠনে ব্যর্থ হওয়ায় বিএনপি মুখ থুবড়ে পড়েছে, এমন দাবিও করেছিলেন নাজমুল হুদা। যা নিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের কম সমালোচনা সহ্য করতে হয়নি তাকে।

এছাড়াও ত্রিশ দলের সমন্বয়ে গঠিত বাংলাদেশ ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স বা বাংলাদেশ জাতীয় জোটের চালিকাশক্তি হিসেবে ‘তৃণমূল বিএনপি’ নেতৃত্ব দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেই জোট এখন অনেকটা অস্তিত্ব সংকটে।

এর বাইরে অনেকগুলো মানবাধিকার সংগঠন নিয়ে জাতীয় মানবাধিকার পার্টিও গঠন করেছিলেন তিনি। অবশ্য এখন সেই পার্টির কোনো হদিস নেই।

কেমন চলছে নাজমুল হুদার দল ও জোটের রাজনীতি?

২০১১ সালের ৭ নভেম্বর বিএনএফের আত্মপ্রকাশের পর ২০১২ সালের ১০ আগস্ট নাজমুল হুদাকে কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক করা হয়। পরে সংগঠনবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার কারণে তিন অপরাধে এ বছর ১১ ফেব্রুয়ারিতে নাজমুল হুদাকে বহিষ্কার করেন প্রধান সমন্বয়কারী আবুল কালাম আজাদ। আবুল কালাম আজাদ পরবর্তীতে সংসদ সদস্যও নির্বাচিত হন।

পরে ২০১৫ সালের ২০ নভেম্বর ‘তৃণমূল বিএনপি’ গঠন করেন নাজমুল হুদা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ভিত্তিক একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ নির্মাণে এই দল গঠনের কথা বলেছিলেন তিনি। এর আগে নাজমুল হুদা বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ) ও বাংলাদেশ ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স নামে একটি জোট গঠন করেছিলেন। ত্রিশ দলের সমন্বয়ে গঠিত বাংলাদেশ ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স বা বাংলাদেশ জাতীয় জোটের চালিকাশক্তি হিসেবে ‘তৃণমূল বিএনপি’ নেতৃত্ব দেওয়ার কথা ছিল।

রাজনৈতিক কোনো কর্মসূচিতে দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয়তা ছিল না নাজমুল হুদার। করোনাকালে ঝুঁকির কারণে অনেকটা ঘরবন্দি ছিলেন তিনি। তবে ইদানিং ঘরের বাইরে বের হতে শুরু করেছেন নাজমুল হুদা।

সবশেষ গত ১৫ জানুয়ারি জাতীয় প্রেসক্লাবে বিএনএ’র আয়োজনে এক অনুষ্ঠানে কথা বলেন নাজমুল হুদা। এসময় তিনি, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য জাতীয় ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত করতে রাষ্ট্রপতিকে ‘জাতীয় সংলাপ’ডাকার আহ্বান জানান তিনি।

(ঢাকাটাইমস/২৩জানুয়ারি/বিইউ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

দুর্নীতি ও ভোটাধিকার হরণ ছাড়া আ.লীগের আর কোনো অর্জন নেই : এবি পার্টি

‘দেশে ইসলামবিদ্বেষী অপতৎপরতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে’

ক্ষমতাসীনদের কেউ ভালো নেই: গয়েশ্বর

সিন্ডিকেটকে কোলে বসিয়ে বিরোধীদলের ওপর দায় চাপাচ্ছে সরকার: গণতন্ত্র মঞ্চ

ইফতার পার্টিতে আল্লাহ-রাসুলের নাম না নিয়ে আ.লীগের গিবত গায়: প্রধানমন্ত্রী

বাংলার মাটি থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলার সাধ্য কারো নেই: ওবায়দুল কাদের

দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে বন্ধু রাষ্ট্রের সহযোগিতা চাইলেন মঈন খান

বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী: আ.লীগের আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী

জবি শিক্ষার্থী অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায় চরমোনাই পীরের উদ্বেগ 

শিক্ষা ব্যবস্থার সর্বস্তরে কুরআনের শিক্ষা চালু করতে হবে: মুজিবুর রহমান

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :