আঠারোর্ধ্ব সবাইকে বাধ্যতামূলক টিকা, আইন কার্যকর করল অস্ট্রিয়া

করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা বাধ্যতামূলক করে পাস হওয়া আইনটি অবশেষে কার্যকর করেছে মধ্য-ইউরোপীয় দেশ অস্ট্রিয়া। এই আইনের বলে এখন দেশটির আঠারোর্ধ্ব সব নাগরিককে কোভিড টিকা নিতে হবে। আর যারা টিকা নিতে অস্বীকার করবেন তাদের গুণতে হবে আর্থিক জরিমানা।
ইউরোপে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ চলার মধ্যে অস্ট্রিয়ায় শুরু হয় টিকাবিরোধী বিক্ষোভ প্রতিবাদ। দেশটির বিভিন্ন শহরের বাসিন্দারা বাধ্যতামূলক টিকা নেওয়ার বিরোধিতা করে বলে আসছে, এতে নাগরিক স্বাধীনতার খর্ব হচ্ছে। নাগরিকদের প্রতিবাদের মধ্যেই ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে আইনটি কার্যকর করার ঘোষণা দিল অস্ট্রিয়ার সরকার।
রাজধানী ভিয়েনার দক্ষিণাংশের বাসিন্দা লৌ মোজের পেশায় একজন সিরামিক শিল্পী। লৌ এবং তার স্বামী গাস এখন পর্যন্ত করোনার টিকা গ্রহণ করেননি। তারা দুজনেই সরকারের এ সিদ্ধান্তের কঠোর সমালোচনা করেন।
বিবিসিকে লৌ বলেন, ‘ভ্যাকসিন গ্রহণের বিষয়টি একেবারেই ব্যক্তিগত। নিজের শরীরের মধ্যে আমি কি গ্রহণ করব তা আমার নিজস্ব ব্যাপার। এ নিয়ে সরকারের এত মাথা ঘামানোর তো প্রয়োজন নেই। এছাড়া আমরা তো দেখতেই পাচ্ছি যে ভ্যাকসিন এখনো করোনা মহামারীকে শেষ করতে পারেনি।’
তবে আইনটির প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করে অস্ট্রিয়ার সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, প্রাণঘাতী রোগগুলোর সঙ্গে লড়াই করতে ভ্যাকসিন কার্যকর ভূমিকা পালন করে। ভবিষ্যতে যাতে আর লকডাউন দেওয়ার প্রয়োজন না পড়ে তার জন্যই তারা এই আইন প্রণয়ন করা হয়েছে।
তবে বাধ্যতামূলক টিকা নেওয়ার বিষয়টি মানুষের অধিকারের ওপর হস্তক্ষেপ বলে মানতে নারাজ অস্ট্রিয়ার সরকার। দেশটির ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং সংবিধান বিষয়ক অস্ট্রিয়ার মন্ত্রী ক্যারোলিন এ্যাৎসলদার মহামারীর নির্মূলে প্রয়োজনে আরও কার্যকর কর্মসূচি নেওয়া হতে পারে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন।
বিবিসিকে ক্যারোলিন বলেন, ‘সরকার এই বিষয়ে সচেতন যে এটা খুবই শক্ত পদক্ষেপ এবং প্রয়োজনে আরো কার্যকর কর্মসূচি গ্রহণ করা হতে পারে। কেননা আমরা সবাই এই মহামারী থেকে বের হতে চাই। আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে টিকা গ্রহণের কোনও বিকল্প নেই।’
অস্ট্রিয়ার এই মন্ত্রী জানান, বাধ্যতামূলক টিকা গ্রহণের বিষয়টি ৩ ফেব্রুয়ারি শুরু হবে। আর আইনটি ঠিকঠাক কার্যকর হয়েছে কিনা পুলিশ মার্চের মাঝামাঝি সময় থেকে তা তদারকি করবে।
বাধ্যতামূলক টিকার বিরোধী লোকজনের পাশাপাশি টিকা নিচ্ছেন এমন লোকেরাও সরকারের আইনটির প্রশংসা করছেন। এমন লোকের সংখ্যাও কম নয় দেশিটিতে। এরইমধ্যে নাগরিকদের ৭২ শতাংশ করোনার টিকা গ্রহণ করেছে। টিকার সপক্ষে তারা বলছেন, নিজেকে এবং পরিবারকে মহামারীর কবল থেকে বাঁচাতে আপাত এর কোনো বিকল্প তাদের সামনে নেই।
বুস্টার ডোজ গ্রহণ করা কার্লোস নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘আমি টিকা গ্রহণ করেছি, কারণ আমি আমার পরিবারকে রক্ষা করতে চাই। তাছাড়া আমি অনেক জায়গায় ঘুরতে চাই। এর জন্যে টিকার সনদ থাকাও জরুরি।’
ভিয়েনা মেডিকেল হাসপাতালের এনাসথেসিয়া এবং নিবিড় পরিচর্যা বিভাগের প্রধান ডা. ক্লাউস মার্কসটেলার বলেন, ‘আপনি যদি নিজেকে বাঁচাতে চান এবং প্রিয়জনদের ভালোবাসেন তাহলে আপনাকে অবশ্যই টিকা গ্রহণ করতে হবে।’
(ঢাকাটাইমস/০১ফেব্রুয়ারি/পিআর/ডিএম)

মন্তব্য করুন