যেভাবে অভিনয়ে আসেন দুই হাজার নাটকের শিল্পী শিরিন আলম

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৩ জুন ২০২২, ১৪:৫৪

টিভি নাটকের নন্দিত অভিনেত্রী শিরিন আলম। বহু নাটকে মায়ের চরিত্রে অভিনয় করে তিনি দর্শক মনে জায়গা করে নিয়েছেন। শুধু নাটক নয়, সিনেমায়ও মায়ের চরিত্রসহ নানা ভূমিকায় দেখা গেছে তাকে। বন্ধু মহল কিংবা পরিবারের সবার কাছে আঞ্জুমান আরা বেগম নামে পরিচিত এই অভিনেত্রী। অভিনয়ে এসে তিনি শিরিন আলম নামেই ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছেন। এখন পর্যন্ত অভিনয় করেছেন দুই হাজার নাটকে।

সম্প্রতি ঢাকাটাইমসের সঙ্গে কথা বলেছেন শিরিন আলম। অভিনেত্রীর কাছে জানতে চাওয়া হয়, তার উল্লেখযোগ্য নাটকগুলো সম্পর্কে। জবাবে তিনি বলেন, ‘আসলে উল্লেখযোগ্য নাটকের নাম কী বলব। আমি তো শুটিংয়ে যাই, কাজ করে চলে আসি। আমার কাজটুকুই করি। আমার জায়গা থেকে উল্লেখযোগ্য নাটকের নাম তো বলতে পারছি না। আমার কাছে সব কাজই উল্লেখযোগ্য।’

কয়েক বছর আগের কাজের সঙ্গে এখনকার সময়ের তফাত কী? শিরিন আলম বলেন, ‘আগে কাজের শ্রদ্ধা ছিল, সম্মান ছিল। এখন সবাই যেন মেশিন। কাজ করল, চলে গেল। ভালোবাসার ঘাটতি, সম্মানের ঘাটতি। আমরা সিনিয়র আর্টিস্ট ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে আছি, মূল আর্টিস্ট এলো, সে নিজের মতো শট দিয়ে চলে গেল। দেরি হলেও সমস্যা নেই। কিন্তু সমস্যা আমাদের। বয়স হয়ে গেছে, এখন আমাদের সম্মান ও সম্মানী দুটোরই ঘাটতি রয়েছে।’

হাড়কিপ্টা নাটকের মাধ্যমে গোটা বিশ্বের বাঙালিদের কাছে ব্যাপকভাবে পরিচিতি পেয়েছেন শিরিন আলম। সেখানে তিনি চঞ্চল চৌধুরী, শামীম জামান ও আ খ ম হাসানের মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। ছোটপর্দায় তার ক্যারিয়ার দীর্ঘ ২১ বছরের। অভিনয় করেছেন দুই হাজারের বেশি নাটকে। সেই অর্থে পাননি স্বীকৃতি।

অবশ্য এ নিয়ে তেমন আক্ষেপ নেই শিরিন আলমের। অভিনেত্রী বলেন, ‘টেলিভিশন মিডিয়ায় আমার ক্যারিয়ার ২১ বছরের। যদিও আমার প্রথম নাটক ১৯৮৫ সালে। কিন্তু আমি পর্দায় নিয়মিত হই ২০০০ সাল থেকে। তার আগের দশ বছর টানা মঞ্চে কাজ করেছি। এখন আমরা এমন এক যুগে বাস করছি, যেখানে শুধু আমরা নিজেদের কাজটাই করে যাব। কিছু পাওয়ার আশা করব না।’

এই মাধ্যমে কেন এলেন, কীভাবে এলেন শিরিন আলম? সে গল্পটা বলতে গিয়ে যেন স্মৃতিকাতর হলেন। তার টেলিভিশনের পর্দায় আসাটা একটা মজার ঘটনা বটে। বললেন, ‘বিটিভিতে আমার যাতায়াত ছোটবেলা থেকে। পুরান ঢাকার মিলব্যারাক থেকে বাবা আর মামাদের সঙ্গে বিটিভিতে আসতাম। ‘হীরামন’ নামের একটা প্রোগ্রাম হতো, সেটিতে আমরা কাজ করতাম। একসময় বিয়ে হয়ে গেল। কিন্তু বিটিভির সঙ্গে যোগাযোগটা থেকেই গেল। আমি মাঝেমধ্যে এমনিতেই যাই।’

অভিনেত্রী আরও বলেন, ‘একদিন মামার সঙ্গে বিটিভিতে গিয়েছি। তখন আমার বিয়ে হয়ে গেছে। আমার বিয়ে হয় ১৯৮২ সালে। এটা মনে হয় ১৯৮৫ সালের ঘটনা। যাহোক, বসে রয়েছি। শাড়ি পরে গিয়েছিলাম। একটা ছেলে এসে বলল, অভিনয় করবেন? একটা ছোট চরিত্রে কাজ করতে হবে। ছেলেটা জানাল, সে আব্দুল্লাহ আল মামুনের সহকারী পরিচালক। তারিক আনামের স্ত্রী হিসেবে এক পার্টিতে যাওয়ার একটি দৃশ্য রয়েছে, সংলাপ নেই। এর জন্য একজন মেয়ে লাগবে, লম্বা। মামা শুনে আমাকে ঠেলে পাঠালেন। আমি ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে গেলাম। প্রথম নাটকে অভিনয় করলাম। নাটকের নাম ‘তৃতীয় পুরুষ’।’

শিরিন আলম বলেন, ‘তার পরও নাটকে নিয়মিত হইনি। তবে অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ দেখে স্বামী এস এম শাহ আলম ‘পদধ্বনি’ থিয়েটারে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিলেন। টানা সেখানে ১৯৯০ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত কাজ করলেন। তারপর এলাম আবার টেলিভিশনে, তারপর চলচ্চিত্রে।’

অভিনেত্রী জানান, ‘২০০০ সালে আবার প্রথম টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করলাম। সেই আব্দুল্লাহ আল মামুনের সহকারী মোমিনুল রশিদ মিল্লাত আমাকে জিজ্ঞেস করল, নাটকে অভিনয় করব কি না। পরে তার পরিচালনায় নাটকে অভিনয় করলাম। সেই শুরু। এরপর টানা ২১ বছর নাটকে অভিনয় করেছি। সঠিক হিসাব দিতে পারব না, তবে দুই হাজার পেরিয়ে গেছে। চলচ্চিত্র খুব বেশি করা হয়নি। এখন পর্যন্ত ১৫টি চলচ্চিত্রে কাজ করেছি।’

এখন চলচ্চিত্র, ধারাবাহিক নাটক এবং একক- সব নাটকেই কাজ করে যাচ্ছেন শিরিন আলম। এই সময়ের অভিনয়শিল্পী, পরিচালক কিংবা তরুণ প্রজন্মের যারাই এই মাধ্যমে আসছেন, তাদের প্রতি শিরিন আলম বা আঞ্জুমান আরা শিল্পীর একটাই অনুরোধ, কাজটাকে এবং কাজের মানুষটাগুলোর প্রতি সম্মান রাখতে হবে।

(ঢাকাটাইমস/০৩ জুন/এএইচ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিনোদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :