বঙ্গবন্ধুর শক্তি ও অনুপ্রেরণার উৎস ছিলেন বঙ্গমাতা: হানিফ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৮ আগস্ট ২০২২, ১৮:২৪

বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শক্তি ও অনুপ্রেরণার উৎস ছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ।

সোমবার শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের 'বাঙালির গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব' শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি একথা বলেন। আজ (৮ আগস্ট) বঙ্গমাতার ৯২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এর আয়োজন করা হয়।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শক্তি ও অনুপ্রেরণার উৎস। সুখে, দুঃখে সবসময় পাশে থেকে অনুপ্রাণিত করেছেন। বঙ্গবন্ধু রাজনীতি করেছিলেন দেশের জনগণের জন্য এবং বঙ্গমাতার কর্মকাণ্ডও ছিলো এদেশের মানুষের জন্য। তিনি ছায়ার মতো বঙ্গবন্ধুর পাশে ছিলেন। তিনি যদি বঙ্গবন্ধুকে সাহায্য না করতেন, অনুপ্রেরণা না দিতেন তাহলে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে এতো ত্যাগ স্বীকার করা সম্ভব ছিলো না।

মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছিলেন একজন সহজ, সরল মেয়ে। বেগম মুজিবের উল্লেখ করার মতো শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকলেও তাঁর অসামান্য বিচক্ষণতা ছিলো। বঙ্গবন্ধুর গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে তিনি অসামান্য ভূমিকা রেখেছেন। রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন না। কিন্তু নেপথ্যে থেকে সহযোগিতা করেছেন। যেকোনো বিষয়ে বঙ্গবন্ধুর গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়ার ব্যাপারে তাঁর পরামর্শগুলো ছিলো অবিস্মরণীয় এবং বাস্তবসম্মত।

বেগম মুজিব দলের নেতাদেরকে দিক-নির্দেশনা দিয়ে আন্দোলনকে বেগবান করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, বেগম মুজিব এক হাতে সব সামলেছেন। বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে সংসার চালিয়েছেন, সন্তানদের লেখাপড়া করিয়েছেন। শুধু ঘরের কাজ করেই ক্ষান্ত হননি বরং রাজনৈতিক বিভিন্ন সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে দলের নেতাদেরকে বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন।

তিনি বলেন, পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বঙ্গবন্ধুকে বারবার বন্দি করে কারাগারে নিক্ষেপ করেছে। তাদের ধারণা ছিলো বঙ্গবন্ধুকে নির্যাতন করলে হয়তো উনি স্বাধীকার আন্দোলন থেকে সরে যাবেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু কারাগারে থাকলেও তার অনুপ্রেরণা ছিলো তার ঘরে। বেগম মুজিব বঙ্গবন্ধুর সাথে জেলখানায় দেখা করতে যেতেন। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির খবর দিতেন এবং এর পাশাপাশি নেতাকর্মীদের জন্য দিক-নির্দেশনা নিয়ে আসতেন।

বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষণগুলোর একটি ৭ই মার্চের ভাষণ। ঐতিহাসিক সেই ভাষণের নেপথ্যে ঘটনা বর্ণনা করে হানিফ বলেন, ৭ই মার্চ ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা আহ্বান করা হয়েছিলো। সবার মধ্যে টানটান উত্তেজনা ছিলো যে দিক-নির্দেশনামূলক বক্তব্য আসবে। কি সেই নির্দেশনা আসতে পারে? কেউ বললেন বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দেবেন। আবার কেউ বললেন আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে নির্দেশনা দেবেন। নেতৃবৃন্দের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে বঙ্গবন্ধু বিচলিত হয়ে গেলেন। দুপুরে জনসভায় যাওয়ার আগে বেগম মুজিব সে সময় তাকে বলেছিলেন, পরামর্শ নেয়ার প্রয়োজন নেই। গোটা জাতি তোমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। তোমার যেটা ভালো মনে হয় সেটা করো, যেটা ভালো বুঝো সেরকম করবে। অন্যের পরামর্শের দরকার নেই।

তিনি বলেন, দেশের স্বাধীনতা লাভের পেছনে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে বেগম মুজিবের ঐতিহাসিক ভূমিকা ছিলো। বঙ্গবন্ধু জাতির পিতা হওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান ছিলো মহীয়সী নারী বেগম মুজিবের। তিনি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর পাশে ছিলেন। পঁচাত্তরের কাল রাত্রিতে যখন ঘাতকরা গুলিবর্ষণ করেছিল তিনি স্বামীকে বাঁচানোর জন্য এগিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি প্রাণভিক্ষা চাননি।

আওয়ামী লীগের এ নেতা বলেন, পঁচাত্তরের হত্যাকাণ্ডের পর বিচারের পথ বন্ধ করে দেয়া হয়েছিলো। যারা পঁচাত্তরের ঘাতক এবং তাদের দোসর ছিলো তারা রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার পরে ইনডেমনিটি (দায়মুক্তি) জারি করে বঙ্গবন্ধু বিচার বন্ধ করে দিয়েছিলো। উদ্দেশ্য ছিলো একটাই যারা আত্মস্বীকৃত খুনী তাদের বিচার করতে গেলে যারা চক্রান্ত করেছে তাদের মুখোশ উন্মোচন হয়ে যাবে। এই মুখোশ উন্মচোন হলে জিয়াউর রহমানের নাম চলে আসবে। আর এজন্য বিচার বন্ধ করা হয়েছিলো।

বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশে ফেরার পর আত্মস্বীকৃত খুনিদের বিচার হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে কয়েকজনের রায় কার্যকর হয়েছে। কিছু দণ্ডপ্রাপ্ত বিদেশে পালিয়ে আছে, তাদেরকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের রায় কার্যকরের মধ্য দিয়ে জাতিকে কলঙ্কিত করতে হবে।

বঙ্গমাতার হত্যাকারী আত্মস্বীকৃত খুনিদের দ্রুত দেশে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য বিদেশিদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে হানিফ বলেন, যারা গণতন্ত্রের সবক দেন, মানবতার কথা বলেন তাদের কাছে আমাদের জাতির পক্ষ থেকে বিনীত অনুরোধ আপনাদের দেশে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের অবস্থান বড়ই বেমানান।

সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপ-কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. খন্দকার বজলুল হক। সভা সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন।

ঢাকাটাইমস/০৮আগস্ট/ইএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :