মোবাইল ব্যাংকিংয়ে হুন্ডি: সিআইডির অভিযানের পর রেমিট্যান্সে আসছে সুফল

নিজস্ব প্র‌তি‌বেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১২:৫৫ | প্রকাশিত : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১২:০৫

মোবাইল ব্যাংকিংয়র মাধ্যমে হুন্ডির কারবারে জড়িত একটি চক্র পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) হাতে ধরা পড়ার পর বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স আসার গতি বেড়েছে। চলতি সেপ্টেম্বরের ১৫ দিনে আসা রেমিট্যান্স প্রবাহ থেকে এই ধারণা মিলছে।

ওই চক্রটির ১৬ সদস্যকে ধরার পর সিআইডি জানায়, তারা প্রবাসীদের আয়ের অর্থ অবৈধ হুন্ডির মাধ্যমে দেশে আনছে। প্রবাসী আয় ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে না আসায় একদিকে রিজার্ভ কমছে, অন্যদিকে হুন্ডি চক্র দেশে স্থানীয় মুদ্রায় অর্থ পরিশোধ করার মাধ্যমে মানি লন্ডারিং করে আসছে। তবে সিআইডির অভিযানের ফলে বাড়তে থাকে বৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রবাহ।

গত ৮ সেপ্টেম্বর মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে হুন্ডি প্রবাসীদের টাকা নিয়ে আসা ও দেশ থেকে টাকা পাচারকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে সিআইডি। অভিযানে ১৬ মুদ্রা অপরাধীকে আটক করা হয়। এছাড়া এই কারবারে জড়িত আছেন এমন পাঁচ হাজার ব্যক্তিকে শনাক্ত করেছে বলেও জানিয়েছে সিআইডি।

তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম ১৫ দিনে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১০০ কোটি ৮৬ লাখ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১০৮ টাকা ধরে) যার পরিমাণ ১০ হাজার ৮৯৩ কোটি টাকা। এটি অব্যাহত থাকলে মাস শেষে প্রবাসী আয়ের পরিমাণ ২০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, চলতি বছরের আগস্টে ২০৩ কোটি ৮০ লাখ ডলারের (২০৩৮ মিলিয়ন ডলার) রেমিট্যান্স এসেছে। গত বছরের আগস্টে এসেছিল ১৮১ কোটি ডলার (১৮১০ মিলিয়ন ডলার)। সে হিসাবে আগস্টে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় রেমিট্যান্স বেড়েছে ১২.৬ শতাংশ।

চলতি বছরের জুলাই মাসে রেমিট্যান্স আসে ২০৯ কোটি ডলার। সে হিসাবে জুলাই অপেক্ষা আগস্টে প্রায় ছয় কোটি ডলার কমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক রেমিট্যান্স সংক্রান্ত সবশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারাও সিআইডির অভিযানের পর বৈধ পথে রেমিট্যান্স আসার হার বেড়েছে বলে মনে করছেন। তারা বলছেন, বিগত মাসের তুলনায় সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স প্রবাহ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এটা দেশে ডলারের ক্রান্তিকালে সম্ভাবনা হয়ে দেখা দিয়েছে। এই ধারা ধরে রাখতে পারলে দেশকে আর ডলারের সংকটের মুখে পড়তে হবে না।

রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির বিষয়ে সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জিসানুল হক ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘সংস্থার প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়ার দিক-নির্দেশনায় দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহ ও টাকা পাচারের দিকে বিশেষ নজর দেয় সিআইডি।’

সিআইডি প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহের গতি কমে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে সিআইডির মিটিং হয়। আমরা তাদের আশ্বস্ত করেছিলাম, এটার একটা সুষ্ঠু সমাধান হবে।’

‘এরপর সিআইডি ইন্টেলিজেন্স বেইজ অপারেশন পরিচালনা করে। পাঁচ হাজার মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস এজেন্টকে নজরদারিতে রাখা হয়। এর ফলে অবৈধভাবে লেনদেন ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ কমে যায়। যার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে’—বলেন তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা মনে করেন, প্রবাসীদের মোটা অংকের টাকা (রেমিট্যান্স) হুন্ডির মাধ্যমে দেশে নিয়ে আসছিল একটি চক্র। ওই চক্রের বিরুদ্ধে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) অভিযান চালানোর পরে সেটা বন্ধ হয়ে যায়। এখন বৈধ উপায়ে রেমিট্যান্স আসার প্রবণতা বেড়েছে। ইতোমধ্যে সিআইডির অভিযানের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।

সংস্থাটি প্রবাসীদের আয় (রেমিট্যান্স) কালো পথে আসা আরও কয়েক মাস বন্ধ রাখতে পারলে দেশে ডলারের সংকট কেটে যাবে বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তারা। আর দেশ থেকে টাকা পাচারের দিকে সিআইডিসহ সরকারি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে আরও কঠোর নজর দিতে হবে বলে মনে করেন তারা।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব বলছে, ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে জুলাই ও আগস্টে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ৪১৩ কোটি ৪০ লাখ ডলারের, যা তার আগের অর্থবছরের (২০২১-২২) চেয়ে ১২ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি। ২০২১-২০২২ অর্থবছরের জুলাই ও আগস্ট মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ৩৬৮ কোটি ২০ লাখ ডলার।

চলতি মাসে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে। এরপর রয়েছে রাষ্ট্র মালিকানাধীন অগ্রণী ব্যাংক। এরপরেই রয়েছে ডাচ-বাংলা ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক। তবে বিদেশি ব্যাংক আল-ফালাহ, হাবিব ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার মাধ্যমে কোনো রেমিট্যান্স আসেনি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী আরও জানা যায়, ২০২১-২০২২ অর্থবছরে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে মোট ২ হাজার ১০৩ কোটি ১৭ লাখ (২১.৩ বিলিয়ন) মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছিলেন, যা আগের অর্থবছরের (২০২০-২০২১) চেয়ে ১৫.১১ শতাংশ কম। ২০২০-২১ অর্থবছরে ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ (২৪.৭৭ বিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন বিভিন্ন দেশে কর্মরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা।

সিআইডি প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘সাম্প্রতিক বিশ্ব পরিস্থিতি এদেশের অর্থনীতির ওপর যে চাপ তৈরি করেছে তা মোকাবিলা করার জন্য সরকার অত্যন্ত তৎপর।’

ঢাকা টাইমসকে তিনি বলেন, ‘হুন্ডি সবসময় রিজার্ভের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। একটি সংঘবদ্ধ চক্র অবৈধভাবে হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে অর্থপাচার এবং বিদেশে অবস্থানরত ওয়েজ আর্নারদের কষ্টার্জিত অর্থ বিদেশ থেকে বাংলাদেশে না এনে স্থানীয় মুদ্রায় মূল্য পরিশোধ করার মাধ্যমে মানি লন্ডারিং অপরাধ করে আসছে। এমন ৫ হাজারের বেশি এজেন্টকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে।’

(ঢাকাটাইমস/২০সেপ্টেম্বর/এএইচ/ডিএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

প্রবাসীদের এনআইডি করার ক্ষেত্রে মাঠ কর্মকর্তাদের যে বার্তা দিল ইসি

চার দিনে সৌদি আরব গেছেন ১২ হাজার ৬৪৯ হজযাত্রী

পারিবারিক মূল্যবোধ রক্ষার ওপর জোর দিতে হবে: ভূমিমন্ত্রী

সরকার দুর্নীতি দমন না করে বিএনপি দমনে ব্যস্ত: সালাম

স্যাটেলাইট ইমেজে জানা যাবে কোথায় গাছ লাগাতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী

উপজেলা নির্বাচন: ১২২ উপজেলায় প্রতীক বরাদ্দ সোমবার

বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে ইতালির ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

ফুডসিস্টেম ড্যাশবোর্ডে সহজ হবে নীতিমালা প্রণয়ন: খাদ্য সচিব

নিরাপদ সড়ক গড়তে উবার-বিআরটিএ’র যৌথ উদ্যোগ

উন্নত বাংলাদেশ মানে দুর্নীতিমুক্ত সমাজ ব্যবস্থা: নৌ প্রতিমন্ত্রী

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :