নিয়মিত হাঁটাচলায় জটিল রোগ দূর করে

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০১ নভেম্বর ২০২২, ১১:৪৩ | প্রকাশিত : ০১ নভেম্বর ২০২২, ১০:৪০

যান্ত্রিক জীবনে অলসভাবে সবার সময় কাটে। কখনও বা যানজটে আটকে বসে বসে দীর্ঘ সময় কাটাতে হয়। অনেক সময় যানজটে হাঁটার পথও খুঁজে পাওয়া না। ফলে শরীরে দেখা যায় ক্লান্তি, অবসাদ আর বিভিন্ন জটিল রোগ। শরীর সুস্থ রাখতে নিয়মিত হাঁটার কোনও বিকল্প নেই। সুস্বাস্থ্যের জন্য উৎকৃষ্ট ব্যায়াম হলো হাঁটা। নিয়মিত হাঁটাচলা করলে বহু জটিল রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।

উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ওবেসিটির রোগীদের নিয়মিত হাঁটাচলা করার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। সম্প্রতি ওবেসিটি থেকে কীভাবে রেহাই পাওয়া যায়, তা নিয়ে একটি সমীক্ষাও হয়েছে। 'নেচার' জার্নালে প্রকাশিত সেই সমীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী, দিনে আট হাজার ছ’শো পা হাঁটলে ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখা সম্ভব। যাঁরা ইতিমধ্যেই ওবেসিটিতে আক্রান্ত, তাদের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য দিনে এগারো হাজার কদম হাঁটতে হবে। মোট ছ’শো জনকে নিয়ে চার বছর ধরে করা এই সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, কেবল ওজন ঝরাতেই নয়, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে, ডায়াবেটিস কমাতে এমনকী মানসিক অবসাদ কমাতেও হাঁটাচলার ভীষণ উপকারী। জেনে নিন নিয়মিত হাঁটাচলা করলে যেসব উপকার পাওয়া যায়।

ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে

খাওয়া কমিয়ে ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে হিতে বিপরীত হওয়াটাও অস্বাভাবিক নয়। তাই আমাদের সবসময় খেয়াল রাখতে হবে যে, আমরা খাবারের সাথে যে ক্যালোরি গ্রহণ করছি তার সমান বা বেশি যেন আমাদের শরীর থেকে ক্ষয় করতে পারি। এই কাজটি করতে হাঁটাহাঁটি একটি উত্তম উপায়।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে

প্রতিদিন হাঁটার অভ্যাস রাখতে পারলে আমাদের শরীরের সকল কোষকলা সক্রিয় থাকে। ফলে প্রত্যেকটি কোষে বিশুদ্ধ রক্ত ও অক্সিজেন সঠিকভাবে পোঁছতে পারে। তাই নিয়মিত হাঁটার ফলে শরীরের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ে।

নিয়ন্ত্রণে থাকে কোলেস্টেরল

নিয়মিত হাঁটলে অতিরিক্ত ক্যালোরি শরীর থেকে ক্ষয় হবে। হাঁটাহাঁটি করলে রক্তে ভালো কোলেস্টেরল বা এইচডিএল বাড়ে ও মন্দ কোলেস্টেরল বা এলডিএল কমে। খাওয়ার পরে কিছু সময় হাঁটাহাঁটি করলে নিজেকে বেশ ঝরঝরে লাগে এবং পাচিত খাদ্যদ্রব্যও খুব সহজেই হজম হয়ে যায়।

রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করে

অতিরিক্ত রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আনার জন্যে অন্তত ৩০ মিনিট করে হাঁটার অভ্যাস গড়ে তোলা খুব প্রয়োজন। পাশাপাশি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতেও প্রতিদিন হাঁটার অভ্যাস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। হাঁটলে শরীরের পেশিতে ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ে। ফলে রক্তের গ্লুকোজ কমে। ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে চলে আসলে হার্ট এ্যাটাক ও স্ট্রোক এর ঝুঁকিও হ্রাস পায়।

হৃদরোগের ঝুঁকি কমে

নিয়মিত হাঁটলে রক্তনালির দেয়ালে চর্বি কম জমে। তাই করোনারি হৃদরোগ হওয়ার ঝুঁকি কমে। এ ছাড়াও মূল করোনারি রক্তনালিতে ব্লক থাকলেও নিয়মিত হাঁটার কারণে আশপাশের ছোট রক্তনালিতে রক্ত সরবরাহ বাড়ে। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে। কমে স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও।

স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি কমে

স্তন ক্যান্সারসহ অন্যান্য ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও হ্রাস পায়। হাঁটার সময় হৃৎস্পন্দন আর শ্বাসপ্রশ্বাসের গতি বাড়ে। ফলে হৃদযন্ত্র ও ফুসফুসে রক্ত সরবরাহ বাড়ে। এতে গুরুত্বপূর্ণ এই দুই অঙ্গের কর্মক্ষমতা বাড়ে। এমনকি হাঁটার অভ্যাস থাকলে কিছুটা হলেও এই মানসিক চাপ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

প্রশান্তি কাজ করে

হাঁটার সময় আমাদের মন বিভিন্ন বিষয় নিয়ে চিন্তা করতে পারে। এতে করে মন কোনো একটি নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে কেন্দ্রীভূত থাকে না। আর খোলামেলা উদ্যানে ভোরের আলোতে হাঁটতে পারলে মনে একধরনের প্রশান্তি কাজ করে। আর এই অভ্যাস পুরো দিনের কাজের জন্যে উৎসাহ বাড়াতে বেশ সাহায্য করে।

শরীরের পেশী ঠিক থাকে

শরীরের হাড়কে মজবুত ও পেশিকে দৃঢ় করে গড়ে তুলতে সুষম খাদ্যের পাশাপাশি সবারই ছোটবেলা থেকে হাঁটাহাঁটি, দৌড়ানো, সাঁতার, সাইক্লিং ইত্যাদি নিয়মিত অনুশীলন করা উচিত। এতে করে শরীরের প্রতিটি অঙ্গ ছোটবেলা থেকেই বেশ দৃঢ়ভাবে গড়ে ওঠে। তাই যেকোনো ব্যায়াম শুরু করার আগে কিছুদিন একটু হাঁটার পরামর্শ দেওয়া হয়। নিয়মিত হাঁটার ফলে শরীরের পেশীগুলো কিছুটা নমনীয় হয়ে আসে। একে বলা হয় ওয়ার্ম আপ।

হাঁটলে ভালো ঘুম হয়

যাদের ঘুমের সমস্যা রয়েছে অর্থাৎ যাদের খুব সহজে গভীর ঘুম হয় না; তাদের জন্যে নিয়মিত হাঁটার অভ্যাস বেশ ফলদায়ক। নির্দিষ্ট সময় ধরে হাঁটার ফলে শরীর থেকে ঘাম নির্গত হয় এবং শরীরে ক্লান্তিবোধ হয়। এর ফলে শরীরে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ার তাড়না থাকে। নিয়মিত হাঁটলে মস্তিষ্কে এনডর্ফিন, ডোপামিন, সেরোটোনিনের মতো ভালো অনুভূতি তৈরির রাসায়নিক নিঃসরণ বাড়ে। ফলে বিষণ্নতা কমে, মন-মেজাজ ভালো থাকে, রাতে ঘুম হয় চমৎকার।

যেভাবে হাঁটবেন

দ্রুত হাঁটুন যাতে ঘাম হয় ও নাড়ির স্পন্দন বাড়ে। হাঁটা শুরুর পর প্রথম কয়েক মিনিট এবং শেষ কয়েক মিনিট ধীরে হাঁটুন। এতে শরীর সহজে মানিয়ে নিবে। হাঁটার শুরুতে এবং শেষে একটু পানি পান করুন। ঢিলেঢালা আরামদায়ক পোশাক ও উপযুক্ত জুতা পরে হাঁটুন।

হাঁটতে হবে একটানা। বার বার থমকে, ঘন ঘন দিক বদলে হাঁটার চেয়ে টানা হাঁটায় উপকার বেশি। তাই বাড়ির ছাদে বা লনে নয়, রাস্তা কিংবা পার্কে হাঁটুন।

মোবাইল গেমসে বা কম্পিউটারে সময় নষ্ট না করে হাঁটার অভ্যাস করলে পড়ায় মনোনিবেশ করতেও সুবিধা হয়। এ ছাড়াও বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে যেন অফিসে বা বাসায় একটানা বেশিক্ষণ চেয়ারে বসে থাকা না হয়। কিছু সময় পর পর চেয়ার ছেড়ে উঠে একটু পায়চারি করা বা হাত-পা নড়াচড়ার অভ্যাস রাখা খুবই প্রয়োজন।

প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট করে সপ্তাহে ১৫০ মিনিট হাঁটতে হবে। একবারে ৩০ মিনিট হাঁটতে না পারলে ১০ মিনিট করে দিনে তিনবার হাঁটা যেতে পারে। হাঁটার জন্য সকাল বা বিকেলের একটি নির্দিষ্ট সময় বেছে নিন।

পায়ে বা হাঁটুতে চোট থাকলে বা কোমরে কোন সমস্যা হলে অবশ্যই হাঁটার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। দিনে কতটুকু হাঁটলে আপনার হাড় ও স্নায়ু তা সইতে পারবে, তা জেনে তবেই হাঁটাহাঁটি শুরু করুন। সুস্থ, প্রাণবন্ত ও নীরোগ থাকুন।

(ঢাকাটাইমস/১ নভেম্বর/আরজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

ফিচার এর সর্বশেষ

যে পাঁচ সমস্যায় আক্রান্তরা গুড় খাওয়ার আগে একবার ভাবুন, নইলে...

সাজেদুর রহমান শাফায়েতের স্বপ্ন পৃথিবী ঘুরে দেখা

খাওয়ার পরপরই চা পান উপকার না ক্ষতি? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা

জ্বরের মধ্যে যে পাঁচ খাবার খেলেই বিপদ! জানুন, সাবধান হোন

গরমে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে ডায়াবেটিস রোগীদের! সুস্থ থাকবেন যেভাবে

মুখে দুর্গন্ধের কারণে হা করতেও অস্বস্তি লাগে? সমাধান কী জানুন

লিভার ভালো রাখে লাউ! ওজন এবং উচ্চ রক্তচাপও থাকে নিয়ন্ত্রণে

কিডনি ভালো রাখে আমের পাতা! উচ্চ রক্তচাপও থাকে নিয়ন্ত্রণে

ইফতার ও সাহরিতে বাহারি আয়োজন ধানমন্ডির দ্য ফরেস্ট লাউঞ্জে

বারবার ফোটানো চা খেলেই মারাত্মক বিপদ! বাঁচতে হলে জানুন

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :