ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায় স্যানিটারি ন্যাপকিন: গবেষণা

মানবজন্ম বিকাশের প্রথম ধাপ হচ্ছে নারীদের পিরিয়ড। সংক্রমণ এড়াতে নারীদের পিরিয়ড চলাকালীন সময়গুলোতে প্রধান সঙ্গী হয়ে ওঠে স্যানিটারি ন্যাপকিন। কিন্তু এই স্যানিটারি ন্যাপকিনই হতে পারে মৃত্যুর কারণও! বিশ্বব্যাপী ৭৫% নারীই পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে গোপনাঙ্গে চুলকানি, র্যাশ ও ব্যথা বোধ করেন আর অধিকাংশই হয়ে থাকে স্যানিটারি ন্যাপকিনের কারণে। কেননা এগুলোতে বাতাস চলাচলের বা জীবাণুমুক্ত করার উপায় থাকে না বলে এটি স্বাস্থ্যের জন্যে ভয়াবহ ঝুকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। এ থেকে হতে পারে মূত্রথলি বা জরায়ূর ক্যানসারও!
গবেষণায় দেখা গেছে, সারাবিশ্বে স্যানিটারি ন্যাপকিন তৈরি হয় ডাইঅক্সিন নামক এক ধরনের কেমিক্যাল দিয়ে, যা ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। ডাইঅক্সিন সন্তান ধারণ ক্ষমতা ও জরায়ুর নানা ধরনের রোগের পেছনেও দায়ী। দীর্ঘ সময় ধরে সুরক্ষা দেয় যে ন্যাপকিনগুলো, সেগুলো রক্তকে জেলে পরিণত করে ফেলে। ৫ ঘন্টা পরেই সেখানে ফাঙ্গাস জন্মাতে শুরু করে। ফলে নানা ধরনের জরায়ুর সংক্রমণ, লাল র্যাশসহ চুলকানী হতে পারে।
ডাইঅক্সিন একটি কার্সিনোজেন যা দেহে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী কোষ গঠন করে। ন্যাপকিনের শোষণ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ব্লিচ করা হয় যাতে প্রচুর পরিমাণে ডাইঅক্সিন থাকে। ডাইঅক্সিন শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাও কমিয়ে ফেলে। যা বিভিন্ন সংক্রামক রোগের জন্য আরো ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে। এটি এস্ট্রোজেন (সেক্স হরমোন) এর মতো প্রজনন হরমোনকে প্রভাবিত করে। যা দীর্ঘকালীন সমস্যার কারণ হতে পারে।
সম্প্রতি ভারতে গবেষণায় বিপুল পরিমাণ বিক্রি হওয়া জনপ্রিয় সংস্থার স্যানিটারি ন্যাপকিনগুলোতে পাওয়া গিয়েছে একাধিক বিপজ্জনক কেমিক্যাল। যার সঙ্গে দীর্ঘ সময় সংস্পর্শ ঘটে নারী শরীরের অন্যতম সংবেদনশীল অঙ্গের। এর ফলে ভয়ানক রোগ বাসা বাধাতে পারে মহিলাদের শরীরে। হতে পারে হৃদযন্ত্রের কঠিন অসুখ, ডায়বেটিস, এমনকী ক্যানসারের মতো মারণ রোগও। সম্প্রতি এমনটাই দাবি করেছে দিল্লির একদল গবেষক।
সাধারণত পরিবেশ নিয়ে কাজ করে থাকে বেসরকারি সংস্থা টক্সিক লিঙ্ক। সম্প্রতি ‘মেন্সট্রুয়াল ওয়েস্ট ২০২২’ শিরোনামে একটি সমীক্ষাপত্র প্রকাশ করেছে তারা। সংস্থাটি বাজার চলতি ১০টি ব্র্যান্ডের স্যানিটার ন্যাপকিন নিয়ে কাজ করে। এর মধ্যে চারটি ‘অরগ্যানিক’ ও ছ’টি ‘ইনঅরগ্যানিক’। সবকটিতেই বিপুল পরিমাণ বিপজ্জনক কেমিক্যালের উপস্থিতি পেয়েছেন গবেষকরা।
বিজ্ঞানীদের দাবি, স্যানিটারি প্যাডে এমন কিছু কেমিক্যাল রয়েছে যার ফলে হৃদযন্ত্রের অসুখ হতে পারে, ভবিষ্যতে সন্তান উৎপাদনের সমস্যা দেখা দিতে পারে, ডায়াবেটিস হতে পারে। ঝুঁকিবহুল কেমিক্যালের সংস্পর্শ আসা মা জন্মগত ত্রুটি থাকা সন্তান প্রসব করতে পারেন। এমনকী ক্যানসারের মতো মারণ অসুখ হতে পারে।
সংস্থা টক্সিক লিঙ্কের অন্যতম গবেষক ড. অমিত বলেন, “সাধারণত যে স্যানিটারি ন্যাপকিনগুলি ভারতের মহিলারা ব্যবহার করে থাকেন, তাতে অসংখ্য ক্ষতিকারক রাসায়নিক খুঁজে পাওয়ার ঘটনা বাস্তবিক অবাক করা। আমরা কার্সিনোজেন পেয়েছি স্যানিটারি প্যাডে। যা প্রজননের জন্য বিষের সমান। ঋতুস্রাবের বিঘ্ন ঘটাতে পারে এমন পদার্থ পেয়েছি। এছাড়াও অ্যালার্জির সমস্যা বাড়তে পারে এমন একাধিক বিষাক্ত রাসায়নিক মিলেছে জনপ্রিয় স্যানিটারি প্যাডগুলোতে।
তবে যে কোম্পানীর ন্যাপকিনই ব্যবহার করুন না কেন, চেষ্টা করুন, তা দীর্ঘ সময় ব্যবহার না করার। সুগন্ধযুক্ত প্যাড নির্বাচন করবেন না। জৈব প্যাড ব্যবহার করুন। পাবলিক ওয়াশরুম ব্যবহার করা এড়িয়ে চলুন। তুলোর তৈরি ন্যাপকিন বেছে নিন ও ৫ ঘন্টা পর পর বদলে নিন। সব সময় মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ দেখে কিনুন।
সংবাদটি শেয়ার করুন
স্বাস্থ্য বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
স্বাস্থ্য এর সর্বশেষ

দেশে নিপাহ ভাইরাসে ৫ মৃত্যু, যেসব বিষয়ে সতর্ক করলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী

নাক ডাকার মধ্যে হতে পারে হার্ট অ্যাটাকও! সমাধান কী?

শরীরে কোলেস্টেরল বেড়েছে বুঝবেন যেভাবে, জানুন নিয়ন্ত্রণের উপায়ও

কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে ওটস খেলে

আড়াই মাসে শীতজনিত রোগে ৯৬ জনের মৃত্যু

২৪ ঘণ্টায় করোনা শনাক্ত ১০, মৃত্যু ১

দেশে নতুন ৬ ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি

হাত ও পায়ের তালুর চামড়া ওঠা বন্ধের উপায়

শরীরে পানির ঘাটতি পূরণ করে যেসব পানীয়
