শীতে গরম পানি পানে ঠান্ডা লাগা থেকে মুক্তি দেয়
![](/assets/news_photos/2023/01/01/image-293126.jpg)
নতুন বছরে শীত আর হিমেল হাওয়ায় কাঁপছে সারা দেশ। ঘন কুয়াশা ও মৃদ্যু শৈত্যপ্রবাহে স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন। চিকিৎসকের মতে, শীত মৌসুমে আবহাওয়া শুষ্ক থাকায় বাতাসে জীবাণুর পরিমাণ বেড়ে যায়। শীতজনিত রোগ হিসেবে সর্দি-কাঁশি, শ্বাসকষ্ট বেশি হয়ে থাকে। আর শিশু ও বয়োজ্যেষ্ঠরা শীতজনিত রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। তাই এ সময়টাতে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে পারলে কিছুটা হলেও সুরক্ষা মিলবে। শীত থেকে বাঁচতে হালকা গরম পানি পান করেন। এ অভ্যাস শরীরের জন্য ভালো না খারাপ তা হয়তো অনেকেরই অজানা। জেনে নিন গরম পানি পানের স্বাস্থ্য উপকারিতা।
কুসুম গরম পানি বলতে আমরা কি বুঝি যা স্বাস্থ্যসম্মত অথবা আরামদায়ক অনুভূতি তৈরি করে, নিদেনপক্ষে শরীর এবং ত্বকের কোনো ক্ষতি করে না? আসলে ত্বক আমাদের প্রাকৃতিক একটি থার্মোমিটার হিসেবে কাজ করে। শীতকালে অথবা গরমকালে পারিপার্শ্বিক আবহাওয়ার তাপমাত্রা আমাদের শরীর সার্বক্ষণিক মেপে চলে।
যখন শরীর থেকে শারীরবৃত্তীয় কার্যকলাপের চেয়ে অধিক পরিমাণে তাপ হারায় তখনই আমরা ঠান্ডা অনুভব করি, যখন শারীরবৃত্তীয় পরিধির মধ্যে তাপ হারায় তখন আমরা আরামদায়ক অনুভূতি বোধ করি এবং পারিপার্শ্বিক পরিবেশের তাপমাত্রা আমাদের শরীরের চেয়ে বেশি হলে আমরা গরম অনুভব করি।
ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশানে প্রকাশিত একটি সমীক্ষা বলছে, শীত কিংবা গ্রীষ্মে গরম পানি খাওয়ার কোনো অপকারিতা নেই। বরং রয়েছে নানা উপকারিতা। তবে এর জন্য বেশি গরম পানি খাওয়া যাবে না। শুধুমাত্র ঈষদুষ্ণ পানিতেই শরীরে ক্ষতি না হয়ে মিলবে হাজারো উপকারিতা।
শিশু থেকে শুরু করে বয়স্ক এমনকি গর্ভাবস্থাতেও এ উপকারিতা পাওয়া যায়। ডায়েটেশিয়ানদের মতে, নিয়মিত ঈষদুষ্ণ পানি খাওয়ার অভ্যাসে মেটাবলিজম বাড়িয়ে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে, কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি দেয়, ব্লাড সার্কুলেশন বাড়ে, হজম শক্তি বাড়ে, বুকব্যথা এবং সর্দিকাশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। বন্ধ নাক খুলে যায়।
প্রাকৃতিক উপায়ে শরীর পরিষ্কার করে বিষাক্ত টক্সিন বের করতেও ভালো কাজে আসে হালকা গরম পানি খাওয়ার অভ্যাসে। এতে ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। ফলে ত্বকে বয়সের ছাপ কিংবা বলিরেখা সহজে পরতে পারে না।
সকাল হলেই সবার আগে আমাদের যে কথাটা মনে পড়ে, তাহলে পেট সম্পূর্ণ রূপে পরিষ্কার করা। যারা কোষ্ঠকাঠিন্য, পেট ব্যথা, গ্যাস ও অম্বলের সমস্যায় ভোগেন তাদের জন্য গরম পানি ওষুধের কাজ করে। খালি পেটে গরম পানি খাওয়ার অভ্যাস আপনার শরীরের এই ধরনের অভ্যাসকে পুরোপুরি শেষ করে দিতে পারে।
আপনি যদি পেট খারাপের রোগী হন, তার মানে বুঝতে হবে আপনার হজম সম্পর্কিত সমস্যা আছে। এই রকম সমস্যা থাকলে, প্রতিদিন খালি পেটে এক গ্লাস করে গরম পানি খেলে, আপনি এই সমস্যার হাত থেকে অনেকটাই মুক্তি পেতে পারেন। এতে করে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়, আপনি সহজেই খাবার হজম করতে সক্ষম হবেন।
শরীরের বিষাক্তে পদার্থ নির্গত করার ক্ষেত্রেও গরম পানি ওষুধের কাজ করে। সারা শরীরের ছড়িয়ে থাকা বিষাক্ত পদার্থে নির্গত করতে পারবেন গরম পানির সহায়তায়।
গরম পানি পানে রক্ত চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে।
সকাল বেলা গরম পানি খেলে আপনার শরীরে জমে থাকা অতিরিক্ত ফ্যাটের হাত থেকে মুক্তি পেতে পারেন। খুব দ্রুত ঝরাতে পারবেন আপনার শরীরের বাড়তি ওজন।
ঋতুস্রাবের দিন গুলোতেও পেটে ব্যথার হাত থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য গরম পানি খুবই উপকারী। এই সময়ে পেটে যে ক্র্যাম্স জমে তা গরম পানির সাহায্যে অনেকটাই কম হয়ে যায়।
মাথা ব্যথার সমস্যা থাকলেও গরম পানি পান আপনাকে সেই কষ্টের থেকে অনেকটাই মুক্তি দিতে পারে। গরম পানি মাংসপেশিতে জমে থাকা বেদনাও দূর করতে সাহায্য করে।
গলার সমস্যা থেকেও মুক্তি দেয় এই গরম পানি। আপনার গলা শুকিয়ে আসলে পান করুন সামান্য গরম পানি, সঙ্গে সঙ্গে মুক্তি পাবেন।
যারা দুশ্চিন্তায় ভুগছেন, ঠিক সময়ে ঘুমাতে পারেন না কিংবা মুখে ব্রণের সমস্যা কোনোভাবেই সারছে না তারা নিয়মিত ঈষদুষ্ণ পানি খাওয়ার অভ্যাস করুন। একমাসেই আপনার মধ্যে পরিবর্তন লক্ষ্য করতে পারবেন।
চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি কিংবা মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়াতেও দারুণ কাজে আসে ঈষদুষ্ণ পানি খাওয়ার অভ্যাস। তাই গরম আবহাওয়ার কারণে যারা এ অভ্যাস করতে পারেননি তারা এই শীতেই ঈষদুষ্ণ পানি খাওয়ার অভ্যাস শুরু করতে পারেন।
গরম পানি পান করলে হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটে। ফলে শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমার সুযোগই থাকে না। শুধু তাই নয়, গরম পানি অ্যাডিপোস টিস্যু বা ফ্যাটেদের ভেঙে ফেলেও ওজন হ্রাসে সাহায্য করে।
গরম পানি পানের অভ্যাস করলে ইনটেস্টাইনের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। সেই সঙ্গে ইনটেস্টাইনে জমে থাকা ময়লা শরীর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় লেগে পরে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই কনস্টিপেশনের মতো সমস্যা কমতে সময় লাগে না।
গরম পানি স্কিন সেলের ক্ষত সারিয়ে ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়। সেই সঙ্গে ত্বক টান টান হয়ে ওঠে এবং বলিরেখাও হ্রাস পায়। ফলে বয়সের কোনও ছাপই ত্বকের উপর পরতে পারে না। প্রসঙ্গত, শরীরে টক্সিনের মাত্রা যত কমে, তত শরীর এবং ত্বকের বয়সও হ্রাস পায়। আর গরম পানি যে এ কাজটা ভালো ভাবেই করে তা নিশ্চয় আর বলে দিতে হবে না!
ঠাণ্ডা লাগা এবং গলা ব্যথার প্রকোপ কমায়। এই ধরনের শারীরিক সমস্যার চিকিৎসায় গরম পানির কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। গরম পানি এক্ষেত্রে রেসপিরেটারি ট্রাক্টকে পরিষ্কার করে ঠাণ্ডা লাগা এবং গলার অস্বস্তি কমাতে বিশেষভাবে সাহায্য করে। সেই সঙ্গে বন্ধ নাকও পুনরায় সচল হয়ে যায়।
গরম পানি পানের পর পরই সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেমের কর্মক্ষমতা বাড়তে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ব্রেন পাওয়ার বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। সেই সঙ্গে স্ট্রেস লেভেলও কমতে থাকে, নিয়ন্ত্রণে এসে যায় অ্যাংজাইটিও।
যখন আমাদের রক্তে ক্ষতিকর টক্সিনের মাত্রা বাড়তে থাকে তখন কিডনিকে ওভার টাইম করে শরীর থেকে সেই টক্সিক উপাদনদের বার করে দিতে হয়। না হলেও হাজারো রোগ হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। এক্ষেত্রেও গরম পানি নানাভাবে সাহায্য করে থাকে। গরম পানি পান করা মাত্র শরীরের তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করে। ফলে ঘাম হতে শুরু হয়। আর ঘামের মাধ্য়মে টক্সিনগুলি বেরিয়ে যেতে শুরু করে। প্রসঙ্গত, গরম পানি যদি অল্প করে লেবুর রস মিশিয়ে খেতে পারেন তাহলে এক্ষেত্রে আরও উপকার পাওয়া যায়।
চুলের গড়ায় থাকা নার্ভদের সচলতা বৃদ্ধি করতে গরম পানি বিশেষ ভাবে সাহায্য করে। ফলে গরম পানি পান করা মাত্র স্কাল্পে রক্ত চলাচল বেড়ে যায়। ফলে অক্সিজেন সমৃদ্ধি রক্ত চুলের গোড়ায় পৌঁছে গিয়ে চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে।
গরম পানি পান করা মাত্র সারা শরীরে এমনকি মস্তিষ্কেও রক্তচলাচল বেড়ে যায়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই নার্ভের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে ব্রেন পাওয়ার বেড়ে যায়।
গবেষণায় দেখা গেছে, খাবার খাওয়ার পর ঠাণ্ডা পানি পান করলে পাকস্থলীর ভিতরের দেওয়ালে ফ্যাটের পরিমাণ বাড়তে শুরু করে। ফলে ধীরে ধীরে পাকস্থলীর কর্মক্ষমতা কমে যায়। সেই সঙ্গে ইন্টেস্টিনাল ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও বৃদ্ধি পায়। তাই তো খাবার পর পর ঠাণ্ডা পানির পরিবর্তে হালকা গরম পানি পান করার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।
সংবাদটি শেয়ার করুন
ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
ফিচার এর সর্বশেষ
![](/cache-images/news_photos/2024/07/25/resize-90x60x0image-360180.jpg)
কিছু খাবারে বাড়ে বাতের ব্যথা, এই বর্ষায় কিন্তু সাবধান
![](/cache-images/news_photos/2024/07/25/resize-90x60x0image-360158.jpg)
ক্যানসারের যম কাকরোল! কমায় কোলেস্টেরল, বাড়ায় দৃষ্টিশক্তি
![](/cache-images/news_photos/2024/07/24/resize-90x60x0image-360081.jpg)
মরণব্যাধি ক্যানসার দূরে রাখে বেগুন! ওজনও কমায় তরতরিয়ে
![](/cache-images/news_photos/2024/07/18/resize-90x60x0image-359972.jpg)
ব্লাড প্রেসার লো? পাঁচ খাবার নিয়ম মতো খেলেই কেল্লাফতে
![](/cache-images/news_photos/2024/07/17/resize-90x60x0image-359892.jpg)
অকালে চুল পাকা ঠেকায় যেসব খাবার
![](/cache-images/news_photos/2024/07/17/resize-90x60x0image-359841.jpg)
ক্যানসার দূরে রাখে পেঁয়াজকলি! কমায় অ্যাজমার কষ্ট
![](/cache-images/news_photos/2024/07/16/resize-90x60x0image-359707.jpg)
শরীরের ওজন নিয়ে দুশ্চিন্তায়? এই নিয়মগুলো মানলেই কেল্লাফতে
![](/cache-images/news_photos/2024/07/15/resize-90x60x0image-359585.jpg)
ডায়াবেটিস বশে রাখে মুগ ডাল! লড়াই করে ক্যানসারের সঙ্গেও
![](/cache-images/news_photos/2024/07/14/resize-90x60x0image-359484.jpg)
টাইফয়েড জ্বর প্রতিরোধে সতর্ক থাকার উপায়
![](/cache-images/news_photos/2024/07/14/resize-90x60x0image-359480.jpg)