চোখের যেসব লক্ষণে বুঝবেন উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৮ জানুয়ারি ২০২৩, ১১:১২

সারা বিশ্বে উচ্চ রক্তচাপ মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উচ্চ রক্তচাপের প্রবণতা বাড়তে থাকে। বয়সের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শরীরের কলকব্জা কমজোরি হয়ে পড়ে। রক্তবাহী নালীগুলোও তার ব্যতিক্রম নয়। তাই বয়স্কদের রক্তচাপ অনেক সময়েই একটু বেশির দিকে থাকে। ইদানীং অবশ্য বয়স ৩০ পেরোলেই ঝুঁকি বাড়ে উচ্চ রক্তচাপের। উচ্চ রক্তচাপ যাতে আচমকা এসে থাবা বসাতে না পারে, তার জন্য এর লক্ষণগুলোর ব্যাপারে ওয়াকিবহাল থাকা জরুরি।

রক্তনালি বা ধমনীর দেওয়ালের বিপরীতে রক্ত প্রবাহের ধাক্কাকেই রক্তচাপ বলে। দেহ ও মনের স্বাভাবিক অবস্থায় রক্তচাপ যদি বয়সের জন্য নির্ধারিত মাত্রার উপরে অবস্থান করতে থাকে তাকে উচ্চ রক্তচাপ বলে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির বেলায় ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ ৯০ মি.মি পারদ চাপের এবং সিস্টোলিক রক্তচাপ ১৪০ মি.মি. পারদ চাপের বেশি হলে উচ্চরক্তচাপ চিহ্নিত করা হয়।

অধিকাংশ ক্ষেত্রেই উচ্চ রক্তচাপের কারণ জানা যায় না। উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশনকে নীরব ঘাতক বলা হয়, কেননা বছরের পর বছর এটি উপসর্গহীন থাকতে পারে।

প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজন জানে না যে, তাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে। রক্তচাপ খুব বেড়ে গেলে হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস, রক্তনালি, মস্তিষ্ক এমনকি কিডনিরও ক্ষতি করতে পারে, যদি এর চিকিৎসা না করা হয়।

উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা যা আগে থেকে আঁচ করা কঠিন। আবার অনেক সময় লক্ষণ থাকলেও তা বুঝে উঠতে পারেন না রোগী। ফলে অজান্তেই পরিস্থিতি এমন হয়ে ওঠে যে, ভিতরের বিপদ বাইরে থেকে আঁচ করা সম্ভব হয় না। ঘনিয়ে আসে হৃদ্‌রোগ বা স্ট্রোক। তাই বিশেষ কিছু লক্ষণ দেখতে পেলেই সতর্ক হতে হবে। উচ্চ রক্তচাপের উপসর্গ দেখা দিতে পারে চোখেও।

গঠনশৈলীর কারণে চোখ মস্তিষ্কের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বিশেষ করে চোখের সব স্নায়ু সংযোগ সরাসরি মস্তিষ্কের সঙ্গে। ফলে উচ্চ রক্তচাপজনিত জটিলতায় চোখ প্রত্যক্ষভাবে সমস্যায় পড়ে। আবার উচ্চ রক্তচাপে স্ট্রোক বা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হলে তার প্রভাব চোখে পড়ে।

বুকে ব্যথা, শ্বাস নিতে কষ্ট, প্রস্রাবে রক্ত, মাথা ঘোরা, দুর্বলতা ছাড়াও উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ ফুটে ওঠে চোখে। বেশ কিছু দিন ধরে চোখের সাদা অংশে লাল দাগ দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

উচ্চ রক্তচাপ থাকলে দৃষ্টিশক্তিতেও তার প্রভাব পড়ে। তাই মাঝেমাঝেই যদি চোখের সামনেটা ঝাপসা হয়ে আসে, চোখ থেকে পানি পড়ে, চোখ টকটকে লাল হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়— তা উচ্চ রক্তচাপের কারণে হচ্ছে বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে।

অনেক সময় স্ট্রোক খুব মৃদু হয়। ফলে বড় ধরনের প্যারালাইসিস না হওয়ায় বিষয়টি নজর এড়িয়ে যায়। অনেক সময় রোগী জানেনই না যে তাঁর উচ্চ রক্তচাপ আছে। প্যারালাইটিক স্কুইন্ট বা ডাবল ভিশন দেখে আঁচ করা যায় যে রোগী স্ট্রোক করেছিল।

চোখের রেটিনায় যে রক্তনালিগুলো থাকে, সেগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে উচ্চ রক্তচাপে। বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলে ‘হাইপারটেনসিভ রেটিনোপ্যাথি’। ২০১৩ সালের একটি গবেষণায় ধরা পড়ে, এই সমস্যার সঙ্গে যোগ রয়েছে স্ট্রোকের। আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন বলছে, ‘হাইপারটেনসিভ রেটিনোপ্যাথি’-তে আক্রান্ত রোগীদের স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা অনেকটাই বেশি।

তবে আয়নায় নিজের চোখ দেখে সাধারণভাবে এই সমস্যা ধরা যায় না। চিকিৎসকরা চক্ষু পরীক্ষার সময় বিষয়টি বুঝতে পারেন। তাই, কেবল চোখের সমস্যার জন্যই নয়, সার্বিকভাবেই নিয়মিত চোখ পরীক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি। কেবল রক্তচাপই নয়, একাধিক সমস্যার ইঙ্গিত মিলতে পারে চোখে।

চোখের আশপাশের চামড়ায় কোনও সাদাটে উঁচু জায়গা তৈরি হলে তা উচ্চ কোলেস্টেরলের লক্ষণ হতে পারে। কোলেস্টেরলের সঙ্গেও উচ্চ রক্তচাপের সমস্যার যোগ গভীর। তাই এই লক্ষণ দেখা দিলে আগে থেকে হতে হবে সতর্ক।

উচ্চ রক্তচাপ থাকলে বছরে এক বা দুইবার অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে চোখের পরীক্ষা করতে হবে। নিয়মিত কায়িক শ্রম বা ব্যায়াম, ধূমপান ও অ্যালকোহল পরিত্যাগ করা, ওজন নিয়ন্ত্রণ করা, খাবারে অতিরিক্ত লবণ ও তেল বিশেষ করে ট্র্যান্সফ্যাট পরিহার করা এবং সর্বোপরি সুশৃঙ্খল জীবনযাপনের অভ্যাস উচ্চ রক্তচাপজনিত জটিলতা অনেকটাই কমিয়ে দেয়।

ঢাকাটাইমস/১৮ জানুয়ারি/আরজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :