মেহেদী হাসিফের কবিতা

মাছে ভাতে বড়লোকি ভাব
আমি তোমারে নিয়ে শীত বিয়ানে
হাঁটবো গাঁয়ের শিশির বেছানো পথে
যেখানে খেজুর গুড়ের গন্ধ ভাসে
নতুন ধানের খই ফোটে ঠাসঠাসিয়ে।
মধুমতী নদীর চরে একটা ছাপড়া দেবো
মাছে-ভাতে বড়লোকি ভাব দেখাবো
চান্দের বাত্তি জ্বালায় থুয়ে ঘুমাতি যাবো
সকাল হলি গুড় হুরুম আর পিঠে খাবো।
পর-গাঁয়ের মাজারে এবার বসলি মেলা
দুইজন মিলে ঘুইরে বেড়াবো সারা বেলা
তোমার জন্যি আলতা, চুরি, চুলের বেনি
কিনে দেবো যা চাও তুমি মেলার বেলা
তোমার জন্যি একজোড়া সেনডেল কিনবো
ক্যা, টাহায় কিনা আলতার রং মাটিরে দেবো?
পৌষ মাসে গঞ্জের হাটে ধান বেইচে
লাল একখান চাদর কিনে তোমারে দেবো।
লাল গরুডার বাছুর হলি দুধ দোয়াবা
আমন ধানের ভাত আর দুধে খাবা
আলিম গাছি কইছে এক সের গুড় দিবেনে
একদিন কিন্তু ধুপি, কুলি, দুধ চিতই পিঠা বানাবা।
অকৃতজ্ঞ
হয় অকৃতজ্ঞ মানুষ বারবার
বিপদ মুক্তি হইলে বলে
আমিই অধম শ্রেয়
কর বন্ধ মসজিদ দ্বার।
শিরনি বিলায়ে ঠোঙ্গা চিপায়
রয় মোয়াজ্জিনের ভাগ
অভাবির চোখ আকাশে উঠিল
হয় ক্ষুধার্ত অবাক।
পূজার ফুল জুটেছে কপালে
তার প্রসাদ হয়ে গুম
প্রভুভক্তির নাই বালাই
দেখি পাড়ায় পূজার ধুম।
মা ডাক শোনে অব্বিয়েতো
সদ্য পনোরোর তরুণী
গোল্লায় গেছে ধর্মভীরুতা
এই অভিজাত ধরনি।
বিসমিল্লাহর সুন্নাতও আজ
ইংরেজ খেলো গিলে
হায় হায় দেখে পতিত জমি
কৃষক মরে বিলে।
যত্নে ফোটা জীবন পুষ্প
হয় পথে অনলে শেষ
কতো নির্মম দেখ জীবন ধারক
হেসে বলে বেশ বেশ।
লক্ষ কথা চাইলে কি
পারে বদলাতে মন?
আপন সদা আপন চেনে
আর ধনী চেনে ধন।
দুঃসাহসিক
প্রেমিক-প্রেমিকা হবে বঙ্গবন্ধুর মতো দুঃসাহসিক
প্রেম হবে সুতো ছেড়া ঘুড়ির মতো পিছুটানহীন
প্রেমিক-প্রেমিকা হবে অসমাপ্ত আকাশের মতো বিশাল
প্রেম হবে সবুজ পটভূমির মতো সুন্দর মনোরম।
ভাজ ভাঙা পোশাকের মতো সত্য প্রেম চাই
চাই জটলা চুলের পাগলের মতো বাস্তবতা
দুর্ভিক্ষের ক্ষুধার মতো প্রয়োজন থাকা চাই
চাই চৌচির মাটির মতো তীব্র পিপাসা।
রক্ত ও প্লাজমার মতো নির্ভরশীল প্রেম চাই
চাই বৃদ্ধ ব্যক্তির ভরসার লাঠির মতো বিশ্বস্ততা
একাত্তরের বাঙালির মতো স্বাধীন অমর প্রেম চাই
চাই লক্ষ আঘাত সহনসাদ্ধ, হারানোর ভয়ের তীব্রতা।
কেমন প্রেমে আছো কেমন ভাবে বাঁচো?
সচল দেহে মৃত মনের লাশ কীভাবে পোষো?
রঙিন কাফনে নিত্য দাফনে কেমনে অনড় থাকো
প্রেমের কবলে অনল দহনে তবুও কেমন হাসো!
মায়াহীন
আঁকা ফাঁকা জীবন জরাজীর্ণ পাটকাঠির বেড়া,
ভিন্ন আবেগে বাঁচে জীবন, ধরায় করুণার ভাড়া
নিত্য নতুন শিক্ত যে যাতে পরম বাঁধনের ধন
তিক্ত অবশেষে বিরক্ত টান মায়াহীন সেসব প্রাণ
বললে বক্তা লক্ষ মুখে সত্য, জঘন্য তিতা
যায় উড়ে যায় বেহুঁশ মনের, বেহাল প্রেমের ফিতা
ক্ষিপ্ত রমণী শরীর টানে, হন্যে রাত-বিরাত
চেতে অনল দগ্ধ মেজাজ পুরোহিত মোল্লার জাত
মাঝ প্রহরে পশুর ডাকে ঘুম পাড়ানির ধুম
যার হৃদয়ে আগ্নেয়গিরি তার চোখে নেই ঘুম
বিধান লেখকের আজব লিখনি অভাগার কপালে
ছিন্নভিন্ন আপন হারায়ে, ধ্বংস সব অকালে।

মন্তব্য করুন