কুষ্টিয়া পৌরসভা: মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ আ. লীগ নেতাদের

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৬ মার্চ ২০২৩, ১৫:৫৭

কুষ্টিয়া পৌরসভায় গত ২৩ ফেব্রুয়ারি পুলিশের সামনে ইব্রাহিম হোসেন নামে একজনের হাটবাজার ইজারার দরপত্র ছিনিয় ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ ওঠে। সেই ঘটনায় থানায় মামলাও দায়ের করেন তিনি। রহস্যজনকভাবে টেন্ডার ছিনিয়ে নেওয়ার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ব্যক্তিদের নাম না দিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাদের নামে মামলা করেছেন ইব্রাহিম হোসেন।

তবে মামলায় অভিযুক্তরা এ ঘটনায় নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা পুরোপুরি অস্বীকার করে বলছেন, এ ঘটনার সঙ্গে তাদের বিন্দুমাত্র সম্পর্ক নেই। এমনকি সেদিন মামলার বাদীর সঙ্গে এক সেকেন্ডের জন্যও দেখা হয়নি বলে দাবি করছেন মামলায় অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা।

দলের নেতাদের নামে মামলা দেওয়াকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ষড়যন্ত্রমূলক উল্লেখ করে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতারা বলছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দলের ত্যাগী নেতাদের ঘায়েল করতে মামলায় সুকৌশলে ফাঁসানো হয়েছে। নিরপেক্ষ তদন্ত করে দোষীদের আইনের আওতায় আনার দাবিও জানাচ্ছেন তারা।

কুষ্টিয়া পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি কুষ্টিয়া শহর এবং শহরতলীর ১০টি হাট-বাজার পহেলা বৈশাখ থেকে ৩০ চৈত্র পর্যন্ত এক বছর মেয়াদি টোল আদায়ের লক্ষ্যে ইজারার দরপত্র আহবান করে পৌর কর্তৃপক্ষ। উক্ত তারিখ হতে ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দরপত্র বিক্রি করা হয় এবং ২৩ ফেব্রুয়ারি দুপুর ১টা পর্যন্ত সিডিউল জমা প্রদানের শেষ সময় নির্ধারণ করা হয়।

দশটির মধ্যে ছয়টি বাজারের ইজারা নেয়ার জন্য দরপত্র কেনেন ইব্রাহিম হোসেন ও তাঁর সহযোগীরা।

ইব্রাহিম হোসেনের দাবি, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি বেলা পৌঁনে একটার দিকে তিনি সিডিউল জমা দিতে পৌরসভায় যান। তবে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা ব্যক্তিদের দাবি, তিনি একটার পর সিডিউল জমা দিতে এসেছেন। যার কারণে সেখানে উপস্থিত থাকা লোকজন তাকে বক্সে দরপত্র ফেলতে বাধা দেন। পরে একপর্যায়ে টেন্ডার বক্সে খাম ফেলার সময়ে ইব্রাহিম হোসেনের হাত থেকে তা ছিনিয়ে নিয়ে নিচে ফেলে দেয় দুর্বৃত্তরা।

এ ঘটনায় কুষ্টিয়া মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী ইব্রাহিম হোসেন।

মামলার আসামিরা হলেন- কৌশিক আহমেদ, আফিল উদ্দিন, মানব চাকী ও ফেরদৌস খন্দকার। তারা প্রত্যেকেই আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা। এছাড়া অজ্ঞাত আরো ২০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

মামলার বাদী ইব্রাহিম হোসেন এজাহারে উল্লেখ করেন, ঘটনার দিন দুপুর পৌনে ১টায় পৌরসভার হাট-বাজার ইজারার দরপত্র পৌরসভার মেয়র কার্যালয়ের বারান্দায় রক্ষিত টেন্ডার বক্সে ফেলতে গেলে সেখানে ওত পেতে থাকা আসামিরা তার হাত থেকে জোরপূর্বক দরপত্র ছিনিয়ে নিয়ে নিচে ফেলে দেয়। এসময় তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন বলে অভিযোগও করেন তিনি।

তবে ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ওই ঘটনার একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ইব্রাহিম হোসেনের কাছ থেকে যারা টেন্ডার ছিনিয়ে নিচ্ছেন তাদের মধ্যে মামলার আসামি আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের কেউ নেই। ওই ঘটনার একদিন পর শনিবার দিবাগত রাতে কুষ্টিয়া পৌরসভার মেয়র কার্যালয়ে তালা ভাঙচুর ও চুরির ঘটনা ঘটে। এসময় ইলেকট্রনিক ডিভাইসসহ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র চুরি করে নিয়ে যায় চোরচক্র।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, দলের নেতা-কর্মীরা টেন্ডার ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় জড়িত ছিলেন না তার প্রমাণ রয়েছে পৌরসভার সিসি ক্যামেরার ফুটেজে।

এদিকে, বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) দুপুরে কুষ্টিয়া শহরে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ ও ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, মিথ্যা ও ষড়ডন্ত্রমূলক মামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা।

কী ঘটেছিল সেদিন: পৌরসভায় টেন্ডার ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনার পর মুঠোফেনে ধারণ করা ৩৪ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। সেই ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, পুলিশের উপস্থিতিতে প্রকাশ্যে দরপত্র ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

ভিডিওতে দেখা যায়, জলপাই রংয়ের পাঞ্জাবি পরিহিত ইব্রাহিম হোসেন টেন্ডার বক্সে দরপত্র ফেলতে গেলে একজনের সাথে তার বাক-বিতণ্ডা হয়। টেন্ডার বক্সে খাম ফেলতে যাওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে এক যুবক ইব্রাহিম হোসেনের হাতে থাকা খাম ছিনিয়ে নেন। পরে তা নিচে ফেলে দেন। এরপরে গেঞ্জি ছেঁড়া অবস্থায় ওই যুবককে বের হয়ে চলে যেতে দেখা যায়। এসময় ঘটনাস্থলে মামলার আসামি আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাদের কাউকে ভিডিওতে দেখা যায়নি।

ইব্রাহিম হোসেন বলেন, সরকারি দরের চেয়ে অনেক বেশি টাকা দিয়ে বাজার নেওয়ার জন্য দরপত্র জমা দিতে গিয়েছিলাম। মামলার আসামিরা সিডিউল ছিনিয়ে নিয়ে ছিঁড়ে ফেলে। আমাকে শারীরিকভাবেও লাঞ্ছিত করা হয়েছে।

মামলায় অভিযুক্তরা যা বলছেন: ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি আফিল উদ্দিন বলেন, মিউনিসিপ্যাল বাজারের সর্বনিম্ন মূল্য ২২ লাখ ১১ হাজার টাকা। অথচ ইব্রাহিম তার এজাহারে সে বলেছে তার সবগুলোর সিডিউল মূল্য ১৭ লাখ টাকা। এরকম যদি হয় তবে আমি কেন তাকে বাধা দিতে যাবো? ওই ঘটনার সঙ্গে আমার কোন যোগসূত্রই নেই।

কুষ্টিয়া শহর স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক মানব চাকী বলেন, বিগত বছর পশু জবাহর ইজারা পেয়েছিলাম। এবছরও আমি টেন্ডারে অংশ নিয়েছিলাম, এটির বেইজড প্রাইস ছিলো দেড় লাখ টাকা। আটজন দাখিল করেছেন। যদি আমি বাধাই দিয়ে থাকি তাহলে কিভাবে আটজন অংশ নিলো? আমি এ বছর ইজারাই পাইনি। অথচ আমার ওপর দোষ চাপানো হচ্ছে। এ ঘটনার সঙ্গে আমার বিন্দুমাত্র কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

শহর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাসিব কোরাইশী বলেন, বিভিন্ন কাজে আমাকে পৌরসভায় যেতে হয়। সেদিনও একটা কাজে গিয়েছিলাম। কারো দরপত্র জমায় বাধা দেইনি।

কুষ্টিয়া পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কৌশিক আহমেদ বলেন, ঘটনার সময় আমি প্যানেল মেয়র শাহিন উদ্দিনের সাথে কাজে ব্যস্ত ছিলাম। আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ মিথ্যা।

কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ফেরদৌস খন্দকার বলেন, যেখানে টেন্ডার বক্স রাখা হয়েছে আমি তার আশেপাশেও ছিলাম না। রাজনৈতিক ক্যারিয়ার নষ্ট করার জন্য একটি পক্ষ আমাকেও ফাঁসানোর চেষ্টা করছে।

আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা যা বলছেন: কুষ্টিয়া শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান আতা বলেন, মামলাটা একদমই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। যে পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে- ঘটনাস্থলে তাদের ছবি তো দূরে থাক কোনো চিহ্নই নেই। ভিডিওতে যাদের ছবি দেখা যাচ্ছে তাদের কেউ আসামি নয়। তাদেরকে দলীয়ভাবে ঘায়েল করার জন্য মামলা হয়েছে। আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাদের সুকৌশলে, সুপরিকল্পিতভাবে ফাঁসানো হয়েছে।

জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম বিপ্লব বলেন, আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের যেসব নেতা ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলো না তাদের নামে মামলা হয়েছে। মামলায় যাদের নাম এসেছে তারা কুষ্টিয়া শহরে মৌলবাদ, জঙ্গীবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সবসময় সোচ্চার থাকে।

সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল হক বলেন, সুপরিকল্পিতভাবে আওয়ামী লীগকে দুর্বল করার পাঁয়তারা করা হচ্ছে। যদি অপরাধী আমাদের নিজের দলের লোকও হয় তবু তাকে কিন্তু জননেত্রী শেখ হাসিনা ছাড় দেন না। এ ঘটনায় প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বের করা হোক।

জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি আক্তারুজ্জামান লাবু বলেন, আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দের নামে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। সিসিটিভি ক্যামেরা ফুটেজ দেখলে বুঝা যায় তারা জড়িত নয়। প্রকৃত দোষীদের আইনের আওতায় আনা হোক।

জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকুর রহমান অনিক বলেন, এ ঘটনার সাথে আওয়ামী লীগ বা অঙ্গ সংগঠনের কেউ জড়িত এমন প্রমাণ কেউ দিতে পারেনি। ভিডিও ফুটেজ আমরা দেখেছি, সেখানেও কিন্তু আ.লীগের কেউ নেই। ঘটনাটিকে রাজনৈতিক ঢাল হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টা হচ্ছে। এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হোক এবং দোষীরা আইনের আওতায় আসুক।

(ঢাকাটাইমস/০৬মার্চ/এসএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :