অলৌকিক ভেষজ ঔষধি লাল বিট দেহে রক্ত বাড়ায়

পরিবেশ দূষণ ও অনিয়মিত জীবনযাত্রা আমাদের শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু কিছু কিছু খাবার আছে যা প্রতিদিন খেলে আমরা শুধুই ভালো থাকব না, এইসব রোগের হাত থেকে বাঁচাও সম্ভব হবে। সেটি হলো লাল বিট। রসালো, রোমশ বিহীন বীরুৎ উদ্ভিদ বিট। সুপারফুড বিটের বৈজ্ঞানিক নাম বেটা ভালগারিস। বিট বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে রুট শাক হিসেবে পরিচিত। বিট ভিটামিন এবং খনিজগুলোর পাশাপাশি ভেষজ ঔষধি বৈশিষ্ট্যযুক্ত। লাল বিট, যার জন্মভূমি ভূমধ্যসাগর এবং পালঙ্ক পরিবারের সদস্য। লাল বিট ভিটামিন এবং খনিজগুলোর জন্য একটি সম্পূর্ণ শক্তির উৎস। এতে ভিটামিন এ, বি, পি, সি থাকায় এটি একটি অলৌকিক উদ্ভিদ। এছাড়াও এটি ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, জিঙ্ক, ক্যালসিয়াম এবং পটাসিয়াম সমৃদ্ধ।
বিট এক ধরনের মূলজাতীয় সবজি। অর্থাৎ বিটগাছের মূলই হচ্ছে এর প্রধান খাদ্যোপযোগী অংশ। এর মূল গাঢ় বেগুনি-লাল বর্ণের হয়ে থাকে। চোখ জুড়ানো লাল রং আসলে বিটালাইন বা এন্থোসায়ানিনযুক্ত রঞ্জক পদার্থেরই অবদান। কিন্তু পৃথিবীতে লাল ছাড়াও দেখা যায় হলুদ, সাদা, এমনকি বহুরঙা বিটরুটও।
বিট মিষ্টি স্বাদের হয়। সঙ্গে মিষ্টি আলুর মতোই অন্য রকম একটা মেটে ফ্লেভার পাওয়া যায়। বিট থেকে বিভিন্ন দেশে উৎপাদিত হয় চিনি। এটি কাঁচা অবস্থায় সালাদ, সেদ্ধ বা বেক করে অন্যান্য উপকরণের সঙ্গে স্যুপ, স্টু, স্টার ফ্রাই, সস ইত্যাদি বানিয়ে মজাদারভাবে খাওয়া যায়। বিটের পাতাও শাকের মতো ভেজে খাওয়া যায়, যা খুবই উপাদেয়।
বিট এমন একটি খাবার যা এর শিকড় এবং পাতা উভয়ই স্বাস্থ্যের অভিভাবক হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। এছাড়াও বিটের জুস খেতে পারলে হার্টবিট ঠিক থাকে। বিটের মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের নানা কাজে লাগে। যুক্তরাজ্যের ক্যুইন মেরি বিশ্ববিদ্যালয়ের জরিপ থেকেই এই তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।
প্রতিদিন সকালে খালি পেটেই লাল বিটের জুস খান- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আসবেই। এছাড়াও হজমের সমস্যা, স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া, হার্টের কোনো সমস্যাতেও এই বিটের জুস খুব ভালো কাজ করে। লাল বিটের উপকারিতা জানলে চমকে যাবেন। তাহলে দেখে নিন লাল বিট কেন উপকারী।
অ্যানিমিয়ায় রক্ত বাড়ায়
যাদের রক্তাল্পতার সমস্যা রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে বিট খুব উপকারী। কারণ এতে আছে প্রচুর আয়রন। রক্তস্বল্পতা সমাধান করে, শরীরে প্রয়োজনীয় রক্তের যোগান দেয় এবং অনিয়মিত খুব কম পিরিয়ড যাদের হয় তাদের ক্ষেত্রেও উপকারী। অনিয়মিত পিরিয়ডের সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়।
শক্তি বাড়ায়
শরীরকে সুন্দর এবং ফিট রাখার জন্য রোজ জিমের পাশাপাশি রাখুন লাল বিট। এটি পেশীর শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়াও খুব তাড়াতাড়ি এনার্জি আনতে খেতে পারেন বিটের রস।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে
লাল বিটে থাকা আলফা লাইপোইক অ্যাসিড এক ধরনের অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট যা গ্লুকোজ স্তর হ্রাস করতে সহায়তা করে এবং ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়ায়। বিটের এই বৈশিষ্ট্যটি স্ট্রেস-ভিত্তিক ডায়াবেটিসের ওঠানামা প্রতিরোধে সহায়তা করে।
হাড় মজবুত রাখে
বিট হাড়ের জন্যও উপকার। হাড়কে মজবুত রাখতে রোজ বেশি করে খান বিট। এটি ক্যালসিয়াম ধরে রাখতে সাহায্য করে। হাড়ের যেকোনো সমস্যা রোধ করতে উপকারি। বেশি করে বিট খেলে, বয়স বাড়লে হাড়ের সমস্যায় ভুগতে হয়না।
ক্যানসার প্রতিরোধক
বিটে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ক্যানসার প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার হাত থেকে বাঁচায়। এছাড়াও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। শরীর থেকে ক্ষতিকারক টক্সিন বের করতে সাহায্য করে।
ডিপ্রেশন দূর করে
ডিপ্রেশন দূর করতে বিটের বিটের মতো উপকারী উপাদান খুব কমই আছে। মন ভালো না থাকলে খান বিটের শরবত। এতে থাকা বিটেইন ও ট্রিপটোফোন নামক উপাদান মন ভালো রাখতে সাহায্য করে।
ত্বককে ভালো রাখে বিট
ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে বেশ উপকারী। এছাড়াও বিট ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়। ও অন্যান্য সমস্যা যেমন ব্রন, বলিরেখা দূর করে। উজ্জ্বল ত্বক পেতে রোজ একগ্লাস করে বিটের সরবত খেলে দারুণ উপকার হবে।
লিভার ভালো থাকে
এখন ফাস্ট ফুডে অভ্যস্থ জীবনে লিভারের অবস্থা খুবই খারাপ হয়। বিট হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করতে সাহায্য করে। বদহজম ছাড়াও, এটি পেটের অন্যান্য রোগ যেমন জন্ডিস, ডায়রিয়া, প্রভৃতি রোগের ক্ষেত্রে খুব উপকারী।
ওজন কমায়
কম ক্যালোরি এতে রয়েছে আলুর প্রায় অর্ধের ক্যালোরি৷ তাছাড়া শর্করার পরিমাণও অনেক কম৷ সবজি, সালাদ বা স্যুপ হিসেবে লাল বিট খেতেও খুব ভালে৷ এছাড়া স্বাস্থ্য সচেতনদের জন্য এটা সত্যিই এক উপযুক্ত খাবার, যাতে পেট ভরবে কিন্তু ওজন বাড়বে না৷
কাশির জন্য উপকারী
খুব হালকা টক, তেতো আর মিষ্টির সংমিশ্রণে ভিন্ন স্বাদের সবজি বিট কাশির জন্যও খুব উপকারী৷ তাছাড়া এর মধ্যে ব্যাকটেরিয়া বিরোধী উপাদান রয়েছে, যা শীতকালীন ঠান্ডা লাগা থেকেও দূরে রাখবে আপনাকে৷
ব্যথা উপশম করে
বিভিন্ন গবেষণায় গিঁটে বাত বা আর্থ্রাইটিসের ব্যথা উপশমে বিট জুসের সক্রিয় ভূমিকা দেখা গেছে। বিটে রয়েছে ‘বিটালাইনস’ নামক একটি যৌগ, যা শরীরে যে কোনও প্রকারের প্রদাহ নাশ করতে সাহায্য করে।
উচ্চ রক্তচাপ কমে যায়
বিট শরীরে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়। উচ্চ রক্তচাপ বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, বেশি করে লাল বিট খেলে বা বিটের রস পান করলে, উচ্চ রক্তচাপ কমে যায়। এটি ওষুধের থেকেও ভালো কাজ করে। এতে থাকা নাইট্রেট নামক উপাদান এই কাজটি করে। শরীরের রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখে। স্ট্রোকের হাত থেকে বাঁচায়। বিটে প্রাকৃতিকভাবে ‘নাইট্রেট’-এর পরিমাণ বেশি থাকায় এই ‘নাইট্রেট’ শরীরে গিয়ে ‘নাইট্রিক অক্সাইড’-এ পরিণত হয়। যা উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখে। যারা উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছেন, তাদের জন্য ভাল হলেও রক্তচাপ যাদের কম, তাদের জন্য বিট কিন্তু সমস্যার কারণ হয়ে উঠতেই পারে।
সংবাদটি শেয়ার করুন
ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
ফিচার এর সর্বশেষ

তিন কারণে তিক্ততা বাড়ে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে, জানুন সমাধান

শ্বাসকষ্টের সমস্যা কমে যেসব গাছ ঘরে রাখলে

গরমে ঘরোয়া উপায়ে যেভাবে ত্বক সতেজ রাখবেন

যেসব ভেষজ চা শরীরের ওজন দ্রুত কমায়

যৌবন ধরে রাখতে দুধ-রসুনের ম্যাজিক

‘চাহিবামাত্র ইহার বাহককে দিতে বাধ্য থাকিবে’- টাকায় কেন লেখা থাকে এটি জানেন?

কারিনার চমকপ্রদ চুলের সাজে সাজতে পারেন আপনিও

কেএফসি নিয়ে এলো ইন্টারন্যাশনাল বার্গার ফেস্ট

চোখের নিরাপত্তা ও ফ্যাশনে সানগ্লাসের বিকল্প নেই
